গত কয়েক দিনের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণ কমলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলির তুলনায় এ ব্যাপারে এগিয়ে ভারত। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
দৈনিক করোনা সংক্রমণ গত কয়েকদিন ঘোরাফেরা করছিল ৮৫-৯০ হাজারের গণ্ডিতে। কিন্তু মঙ্গলবার গত কয়েকদিনের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণ কমল বেশ খানিকটা। তা নেমে এল ৭৫ হাজারে। যদিও এক দিনে মৃত্যু ১১০০ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ হারও কমে ৭ শতাংশের নীচে নেমেছে। সংক্রমণের সংখ্যার নিরিখে ব্রাজিলকে টপকে ইতিমধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৫ হাজার ৮০৯ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ২৫ হাজার ৮৪ ও ৬৭ হাজার ৯২ জন। গত কয়েক দিনের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণ কমলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলির তুলনায় এ ব্যাপারে এগিয়ে ভারত।
দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪২ লক্ষ ৮০ হাজার ৪২২ জন। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৬৩ লক্ষ ও তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত ৪১ লক্ষ ৪৭ হাজার।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
মৃত্যুর সংখ্যায় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, ব্রিটেন, মেক্সিকোর মতো দেশকে ভারত পিছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে মোট মৃত্যু অনেক কম। পাশাপাশি ওই দেশগুলির তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হারও অনেকটাই কম। যদিও বিগত কয়েক দিন ধরেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যায় অন্যান্য দেশকে পিছনে ফেলছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৩৩ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৭২ হাজার ৭৭৫ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ২৭ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত প্রায় ৮ হাজার। তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটকে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের রাজধানীতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ৫৯৯। অন্ধ্রপ্রদেশে (৪,৪৮৭), উত্তরপ্রদেশ (৩,৯৭৬), পশ্চিমবঙ্গ (৩,৬০২) ও গুজরাত (৩,১২০) মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। পঞ্জাব (১,৯২৩), মধ্যপ্রদেশ (১,৫৮৯), রাজস্থানে (১,১৫১) মোট মৃত্যু বেড়ে চলেছে। এর পর তালিকায় রয়েছে তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, গোয়া-র মতো রাজ্যগুলি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার মধ্যেই আশার আলো কোভিড রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠা। দেশে সুস্থ হয়ে ওঠার হারও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৩৩ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৫০ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশেরও বেশি সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৭৩ হাজার ৫২১ জন।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত কাল তা বেড়ে ১২ শতাংশে পৌঁছেছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় তা কমে হয়েছে ৬.৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬২১ জনের।
দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধিতে দেশে প্রথম সারিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশে ও কর্নাটক। যদিও গত কয়েক দিনের তুলনায় এই তিন রাজ্যেই আজ দৈনিক সংক্রমণ অনেকটা কমেছে। তামিলনাড়ুতে দৈনিক সংক্রমণ অবশ্য ছ’হাজারের নীচেই রয়েছে। দিল্লির দৈনিক সংক্রমণ গত মাসে নেমেছিল এক হাজারের গণ্ডিতে। গত ক’দিনে তা আবার বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশেও দৈনিক আক্রান্ত গত কয়েক দিনের তুলনায় একটু কমে সাড়ে পাঁচ হাজার হয়েছে। তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে দৈনিক আক্রান্ত অনেক দিন ধরেই একই গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকছে। কিন্তু তেলঙ্গানা, ওড়িশা, অসম, কেরলে, হরিয়ানা, প়ঞ্জাব ও ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা বাড়াচ্ছিল গত ক’দিনে। কিন্তু আজ সব ক’টি রাজ্যই দৈনিক আক্রান্ত অন্যান্য দিনগুলির তুলনায় কম।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যু— দু’টি তালিকাতেই শুরু থেকে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত ৯ লক্ষ ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্ত আজ পাঁচ লক্ষ ছাড়াল। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত চার লক্ষ ৬৯ হাজার ২৫৬। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট সংক্রমিতও আজ চার লক্ষ ছাড়াল। উত্তরপ্রদেশেও সংখ্যাটা ২ লক্ষ ৭১ হাজার। দিল্লিতে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার। পশ্চিমবঙ্গে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার। বিহারে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ও তেলঙ্গানাতে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার। অসম ও ওড়িশাতে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষ ২৮ হাজার ও ১ লক্ষ ২৭ হাজার। গুজরাতেও মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়েছে।
রাজস্থানে মোট আক্রান্তের সংখ্যাটা ৯২ হাজার পেরিয়েছে। কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার। হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে মোট আক্রান্ত পেরিয়েছে ৭০ হাজার। পঞ্জাবে ৬৫ হাজার, ঝাড়খণ্ডে ৫২ হাজার, জম্মু ও কাশ্মীরে মোট আক্রান্ত ৪৭ হাজার। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরা। মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত ১০ হাজারের কম।
পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ বেশ কিছু দিন ধরে তিন হাজারের নীচে ছিল। গত দু’দিন তা আবার তিন হাজার পেরিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ৭৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৯ জন সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৬২০ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy