গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় চিনকে টপকে গেল ভারত। সেই সঙ্গে সংক্রমণের তালিকায় উঠে এল বিশ্বের মধ্যে ১১তম স্থানে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৮ জন। শনিবারই সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেল ভারত।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮৫ হাজার ৯৪০। গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবেও নতুন সংক্রমণের মাত্রাটা লাফিয়ে বেড়েছে অনেকটাই। ৩৯৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই সময়ের মধ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭৫২। তবে ভারতের করোনায় মৃত্যুর হার চিনের তুলনায় কম। চিনে যেখানে মৃত্যুর হার ৫.৫, সেখানে ভারতের ৩.২। ইতিমধ্যেই ভারতের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশে সুস্থতার হার ৩৫.০৮।
২০১৯-এর নভেম্বরে চিনের হুবেই প্রদেশে প্রথম হানা দেয় করোনাভাইরাস। ভরকেন্দ্র ছিল উহান। তার পর সেখান থেকে দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে চিনের অন্যান্য প্রান্তে। সংক্রমণ ঠেকাতে ২৩ জানুয়ারি লকডাউনের পথে হাঁটে চিন। সে সময় সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৪৩। ৮ এপ্রিলে লকডাউন তুলে নেয় চিন। কিন্তু তত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ৮৩ হাজারে। ৮ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত এই এক মাসে চিনে সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ১ হাজার ২২৫ জন। এই সময়ের মধ্যে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছে চিন।
অন্য দিকে, ভারতে করোনার প্রথম সংক্রমণ ছড়ায় ৩০ জানুয়ারি। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে কেরলে। তার পর ধীরে ধীরে গোটা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বাড়তে শুরু করে মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৫ মার্চ গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্র। তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে এখন। লকডাউন চলা সত্ত্বেও দু’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সংক্রমণের দিক থেকে চিনকে টপকে গেল ভারত। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে দেশে করোনার সংক্রমণের হারটা বাড়তে শুরু করে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই ৭৫ দিনে যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার, পরবর্তী ৮ দিনের মধ্যেই এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে ২০ হাজারে পৌঁছয়। ২৩ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। ১২ মে-র মধ্যে সেই সংখ্যাটা পৌঁছয় ৭০ হাজারে।
দেশের মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ১৮টি শহরের। তার মধ্যে শুধু ৫০ শতাংশ আক্রান্ত মুম্বই, দিল্লি, আমদাবাদ, পুণে এবং চেন্নাইয়ের। দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রের। এই রাজ্যের বেশির ভাগ আক্রান্তই আবার মুম্বই, পুণে, সোলাপুর, অওরঙ্গাবাদের। এগুলোকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। সংক্রমণের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে লকডাউনের মেয়াদও বাড়িয়েছে উদ্ধব ঠাকরের সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ১০০। যা দেশের মোট আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশ। মৃত্যু হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সাড়ে ৬ হাজার রোগী।
মহারাষ্ট্রের পরই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের। এর পরই রয়েছে গুজরাত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁতে চলেছে। মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৯৩১। মৃত্যু হয়েছে ৬০৬ জনের। অন্য দিকে, দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৯৫। মৃত্যু হয়েছে ১২৩ জনের। এর পরে রয়েছে রাজস্থান (৪৭২৭), উত্তরপ্রদেশ (৪০৫৭)।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা ১৫৩, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও ১০
আরও পড়ুন: করোনা-গবেষণায় সাফল্য বাঙালি বাবা-মেয়ের
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৬১। মৃত্যু হয়েছে ২২৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮২৯ জন। রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৩ জনের। কো-মর্বিডিটিতে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৯১০। সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্ত ১৪ লক্ষ ৪৩ হাজার। গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষ ৭ হাজার ৬৯৬ জনের। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। সেখানে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৮৭ হাজার।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy