প্রতীকী ছবি।
ফরমান ছিল প্রথম ধাপে টিকা প্রয়োগের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা কার্যত চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে মঙ্গলবার, ৭ জুলাইয়ের মধ্যে। তালিকা তৈরি তো দূর, অধিকাংশ কেন্দ্র এখনও গবেষণা শুরু করার প্রশ্নে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্রটুকুও পায়নি। যা পেতে আরও অন্তত তিন-চার দিন সময় লাগতে চলেছে। ফলে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) চিঠিতে নির্দেশ দিলেও শুরুতেই কার্যত এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল টিকা গবেষণা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে হাতে ছিল পাঁচ সপ্তাহ। এক সপ্তাহ দেরির অর্থ হল, চার সপ্তাহেই প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ করতে হবে গবেষকদের। এ ভাবে এগোনো কি নিয়মবিরুদ্ধ নয়? এ প্রশ্ন উঠলেও মুখে কুলুপ কর্তাদের।
লক্ষ্য ১৫ অগস্ট। সে দিনের মধ্যে যাতে করোনা টিকা বাজারে আসে, সে জন্য মাত্র পাঁচ সপ্তাহ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ আইসিএমআর। শুরু থেকেই যা নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের বড় অংশ। আইসিএমআরের লক্ষ্য ছিল, ৭ জুলাইয়ের মধ্যে যে ১২টি কেন্দ্র তথা হাসপাতালে ওই গবেষণা হবে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরি করে ফেলা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ যাবৎ গবেষণা শুরুর প্রশ্নে এথিক্স কমিটির ছাড়পত্র পেয়েছে মাত্র ছ’টি সংস্থা। তার মধ্যে একটি বাদে বাকি পাঁচটির এখনও সাইট ইনিশিয়েশন ভিসিট (এসআইভি) বা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য ওই সাইট বা কেন্দ্রটি প্রস্তুত কি না, সেই পরিদর্শনই হয়নি। যা একেবারে প্রাথমিক ধাপ।
আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গবের চিঠির দিনক্ষণ মেনে স্বেচ্ছাসেবক চিহ্নিত হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে গোরক্ষপুরের কেন্দ্রের গবেষক-চিকিৎসক অজিত প্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘এখনও এসআইভি হয়নি। তার পরে তো স্বেচ্ছাসেবক।’’ তাঁর বক্তব্য, আরও অন্তত তিন থেকে চার দিন তো লাগবেই। এসআইভি হয়নি ওড়িশার জাজপুরের এসইউএম হাসপাতালেরও। সেখানে গবেষণার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ভেঙ্কট রাওয়ের মতে, গবেষেণার জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি খতিয়ে দেখে এসআইভি। সে কাজ সারা হলে তার পরবর্তী ধাপে স্বেচ্ছাসেবক জোগাড় হবে। বেলগাঁওয়ের গবেষণাকেন্দ্র জীবন রেখা হাসপাতালের গবেষক চিকিৎসক অমিত সুরেশ ভাটের তরফে তাঁর এক সতীর্থ জানান, সেখানেও এসআইভি বাকি। নিরাপত্তা, স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ ও তার পরে ভ্যাকসিনের জন্য আবেদন — সব মিলিয়ে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে আরও এক সপ্তাহ। সূত্রের মতে, দিল্লির এমস এখনও এথিক্স কমিটির ছাড়পত্রই পায়নি।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে এ বার চিনকে টেক্কা মুম্বইয়ের
আজকের অবস্থা দেখে একটি বিষয় স্পষ্ট, এই সপ্তাহের মধ্যে ১২টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে স্বেচ্ছাসেবকদের বেছে নিয়ে তাঁদের উপর টিকা প্রয়োগ করা এক রকম অসম্ভব। ফলে হাতে থাকবে মাত্র চার সপ্তাহ। কানপুর কেন্দ্রের পক্ষে গবেষক অনুপমা বর্মা বলেন, ‘’প্রথম ধাপে টিকা সুরক্ষিত কি না, তা দেখা হয়। তাতে সময় লাগে ২৮ দিন। দ্বিতীয় ধাপে দেখা হয় টিকার কার্যকারিতা। অর্থাৎ ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় দলের উপর যে টিকা দেওয়া হয়, তা শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কি না, সেটা দেখা হয়।’’ প্রশ্ন এখানেই। দিনক্ষণ বেঁধে টিকা বাজারে ছাড়তে গিয়ে কেবল প্রথম ধাপে ২৮ দিনে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না, তা দেখেই কি তাহলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে? তৃতীয় ধাপ তো দূর, এ ক্ষেত্রে কি মানা হবে না দ্বিতীয় ধাপও? এক মাসে কি টিকা সংক্রান্ত গবেষণা সম্ভব? প্রশ্ন শুনে হাসছেন গোরক্ষপুরের গবেষক অজিত প্রতাপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ আর এসএমইউ সংস্থার ভেঙ্কট রাওয়ের স্পষ্ট জবাব, ‘‘সুরক্ষাবিধি মেনে পরীক্ষা হবে। কারণ সুরক্ষা সর্বোপরি।’’
এ ভাবে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে টিকা আবিষ্কার চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে বিভক্ত খোদ আইসিএমআর। একটি সূত্রের মতে, সংস্থার প্রধান ও মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে। অধিকাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে মানুষের প্রাণ নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। অভিযোগ এ-ও উঠেছে, প্রাণী দেহে ওই টিকা প্রয়োগের ফলাফল নিয়ে ভারত বায়োটেক যে রিপোর্ট আইসিএমআরকে জমা দিয়েছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত কালই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সংস্থার অধিকর্তা পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছে রয়্যাল সোসাইটির প্রথম ভারতীয় মহিলা ফেলো- গগনদীপ কৌর। রোটাভ্যাক টিকা আবিষ্কারের অন্যতম কান্ডারি কৌর অবশ্য তাঁর ইস্তফার সঙ্গে চলতি বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আইসিএমআরের গবেষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, টিকা আবিষ্কারে যেখানে অন্তত নয় মাস সময় লাগে, সেখানে কী ভাবে এক মাসে টিকা আবিষ্কার হবে? উত্তর নেই কারও কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy