নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
আলফ্রেড টেনিসন তাঁর বিখ্যাত কবিতা, ‘দ্য চার্জ অব দ্য লাইট ব্রিগেড’-এ লিখেছিলেন, ‘দেয়ার্স নট টু রিজ়ন হোয়াই, দেয়ার্স বাট টু ডু অ্যান্ড ডাই’। অর্থাৎ, ‘কারণ জানতে চাওয়া নয়, মুখ বুজে মরে যাওয়াই সেনানীদের কাজ!’ আজ সকালে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার পরে অনেকেরই মনে পড়ছে লাইনগুলো। কারণ নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক’-এর সঙ্গেই তুলনা করেছেন। বলেছেন, লকডাউনে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ‘দেশের স্বার্থে’ মানুষ ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক’-এর মতো নিজের ‘কর্তব্য’ পালন করছেন। তাঁর মতে, দেশের সংবিধানে যে ‘উই দ্য পিপ্ল অব ইন্ডিয়া’র ‘শক্তি’র কথা বলা হয়েছে, এটাই সেই শক্তি।
নববর্ষের সকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ কথা শোনার পরে বিরোধীদের কারও কারও মতে, দেশের মানুষ প্রশ্ন তুলুন, সেটাই মোদী চান না। সে কারণেই তিনি ‘অনুশাসিত সিপাহি’ বা শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিকের প্রসঙ্গ টেনেছেন। যারা প্রশ্ন করবে না। রাষ্ট্রের স্বার্থে শুধু আত্মত্যাগ করবে। কিন্তু মোদী ও তাঁর সরকার নিজের কর্তব্য কবে পালন করবেন?
গোটা দেশ জুড়ে সম্প্রতি সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল সংবিধানের এই প্রস্তাবনা। আজ সংবিধানের জনক বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকরের জন্মদিবসে সেই প্রস্তাবনাকেই উদ্ধৃত করে অম্বেডকরকে শ্রদ্ধা জানালেন মোদী। কিন্তু কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি থেকে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সকলেরই প্রশ্ন, সংবিধান নাগরিকদের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বের কথাও বলে। সরকার কবে গরিব মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সুরাহার ব্যবস্থা করবে? করোনা-মোকাবিলায় কবে পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট আর ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রীর বন্দোবস্ত হবে? নোট-বাতিল এবং গ্যাসের ভর্তুকি কমানোর সময়ও তিনি একই ভাবে নাগরিকদের আত্মত্যাগের ধুয়ো তুলেছিলেন।
আরও পড়ুন: শ্রমিক-মজুরের জন্য প্যাকেজ কোথায়, প্রশ্ন বিরোধীদের
মণীশ বলেন, “এই সরকারের আমলে নাগরিকদের কী করতে হবে, তা শোনা যায়। সরকার নাগরিকদের জন্য কী করতে চলেছে, তা শোনা যায় না। উনি নিজেই বলছেন, মানুষের অসুবিধার কথা জানেন। কারও খাদ্যের সমস্যা হচ্ছে, সে কথাও বলেছেন। কিন্তু তার সমাধানে কী করছেন, তা বলেননি।” ইয়েচুরি বলেন, “সংবিধান শুধু নাগরিকদের নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথাও বলে। মানুষের জীবন ও জীবিকা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের দায়িত্ব পালনের কথা কিছুই বলছেন না।” সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী যজুর্বেদের নবম অধ্যায় থেকে একটি সূক্ত উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘বয়ং রাষ্ট্রে জাগৃয়াম্’। মূল সূক্তটি হল, ‘বয়ং রাষ্ট্রে জাগৃয়ামা পুরোহিতাঃ’। অর্থাৎ, ‘আমরা, পুরোহিতরা রাষ্ট্রকে জীবন্ত ও জাগ্রত রাখব।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পুরোহিতাঃ শব্দটি বাদ দিয়ে বলেছেন, “আমরা সবাই দেশকে জীবন্ত ও জাগ্রত রাখব।” অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, দেশকে বাঁচানোর কাজ এখন শুধু সরকারের নয়, নাগরিকেরও।
আরও পড়ুন: লকডাউন ভাঙায় ঝিলের নোংরা পরিষ্কার করাল পুলিশ! সত্যি না মিথ্যে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy