Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

মোদীর স্বদেশি আত্মনির্ভরতার ডাকেও সংশয় অনেক

মোদীর দাবি, করোনা যত বড় সঙ্কট, দেশকে আত্মনির্ভর করার সঙ্কল্প তার থেকেও মজবুত।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০৩:৪১
Share: Save:

আত্মনির্ভর এবং আত্মনির্ভরতা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর আধ ঘণ্টার সামান্য বেশি দীর্ঘ বক্তৃতায় এই দুই শব্দ উঠে এল ২৮ বার!

ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রতিশ্রুতি শোনা গেল। শোনা গেল একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রতিজ্ঞার কথা। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মন্ত্রে বিশ্বের মঞ্চে আর্থিক শক্তি হিসেবে প্রথম সারিতে উঠে আসার সঙ্কল্পের কথাও বললেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সব কিছুই ঘুরপাক খেল এক বিন্দুতে, আত্মনির্ভরতা।

হয়তো সেই কারণেই অনেকে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের বক্তৃতা সম্ভবত সব থেকে মিষ্টি সুরে বাজবে সঙ্ঘ, বিশেষত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের কানে। কারণ, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দাবিই জানিয়ে এসেছে তারা। করোনা-সঙ্কটকে দেখেছে এই পরিকল্পনা রূপায়ণের সোনার সুযোগ হিসেবে। যদিও আজকের এই বিশ্বায়িত অর্থনীতির জমানায় তা কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে সন্দেহ যথেষ্ট।

মোদীর দাবি, করোনা যত বড় সঙ্কট, দেশকে আত্মনির্ভর করার সঙ্কল্প তার থেকেও মজবুত। আত্মনির্ভরতার জয়গান গেয়ে কখনও দেশে পিপিই কিট তৈরির কথা বলেছেন, কখনও তুলে এনেছেন ভূমিকম্পের পরে গুজরাতের কচ্ছের ফের খাড়া হওয়ার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, আত্মনির্ভর ভারত দাঁড়িয়ে থাকবে পাঁচ স্তম্ভের উপরে- (১) সাহসী সংস্কার ও এক ধাক্কায় বড় পরিবর্তনে বিশ্বাসী অর্থনীতি (২) ভারতের পরিচিতি তৈরি করার মতো পরিকাঠামো (৩) এই শতাব্দীর উপযুক্ত, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রশাসন (৪) দেশের জনসংখ্যায় কম বয়সিদের প্রাধান্য (৫) চাহিদা: এক দিকে তাকে দ্রুত চাঙ্গা করার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে তৈরি করতে হবে চাহিদা মেটানোর উপযুক্ত জোগান শৃঙ্খল বা সাপ্লাই চেন।

যা শোনা গেল না

• সদ্য সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের রেলে কাটা পড়া। ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে চরম দুর্দশায় ভোগা সেই সমস্ত
কর্মীদের প্রসঙ্গ।

• স্বাবলম্বী হতে ও আর্থিক ভিত মজবুত করতে রাজ্যগুলিকে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে কি?

• খোদ প্রধানমন্ত্রী বলা সত্ত্বেও ছাঁটাই চলছে পুরোদমে। বেকারত্বের হার চড়া। দাওয়াই?

• আগামী দিনে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ভাল চিকিৎসার আশ্বাস।

আরও পড়ুন: উড়ানে ঘেঁষাঘেঁষি বসার ব্যবস্থা, উঠছে প্রশ্ন

শুধু তা-ই নয়। জিডিপি-র ১০ শতাংশের সমান যে ত্রাণের কথা এ দিন মোদী ঘোষণা করেছেন, তা দেওয়া হবে এই আত্মনির্ভর ভারত তৈরির লক্ষ্যেই। যে কারণে তার নামও আত্মনির্ভর ভারত অভিযান। সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবের কটাক্ষ, “যে পাঁচ স্তম্ভের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সব ক’টিই তো নড়বড়ে! অর্থনীতি টালমাটাল। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পাতে দেওয়ার নয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের যা দশা, তাতে প্রশাসন প্রশ্নের মুখে। চড়া বেকারত্বের কারণে কমবয়সির সংখ্যা বেশি হওয়াই বরং বোঝা। আর চাহিদা তলানিতে।”

সঙ্ঘ, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ বরাবরই চায় দেশীয় পণ্য তৈরিতে জোর দিতে। সম্ভবত তাদের চাপের মুখেই শেষ মুহূর্তে ১৬ দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসিইপি) থেকে সরে এসেছিল দিল্লি। দেশীয় উপায়ে চাষ থেকে দেশেই সমস্ত পণ্য তৈরির জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সব কিছুতেই সরব তারা। প্রধানমন্ত্রীরও এ দিন পরামর্শ, দেশের মানুষ দেশে তৈরি জিনিস কেনার পাশাপাশি তার জয়গান করুক। তা হলেই নাকি তা ধীরে ধীরে ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে সারা বিশ্বে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রায় ছ’বছর আগে ঘোষণা করা মেক ইন ইন্ডিয়ার এখনও তেমন সাফল্য কোথায়? এ দেশের মানুষ যদি শুধু ভারতে তৈরি পণ্য কেনারই পণ করেন, তা হলে অন্য দেশ ভারতের পণ্য কিনবে কেন? যে দেশের অজস্র মানুষ অনাবাসী, তাদের পক্ষে এই ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব? দিল্লি এই রাস্তা ধরলে, মার্কিন মুলুক সব থেকে বেশি এইচ-১বি ভিসা ভারতকে দেবে? দেশ স্বনির্ভর হতে হলে সবার আগে তো সাধারণ মানুষের তা হওয়া জরুরি। পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো কর্মী, আধপেটা খেয়ে লকডাউন কাটানো দরিদ্রকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর দাওয়াই ত্রাণে আদৌ থাকবে কতটা?

মোদী আশ্বস্ত করেছেন, পরিকল্পনার নীল নকশা তৈরি হবে বিশ্বায়নের বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখে। সেই আশ্বাস কতটা সত্যি, তা বোঝা যাবে, ২০ লক্ষ কোটির সুগন্ধি মাখা খামের ভিতরের চিঠি পড়লে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Coronavirus Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE