দেশ জুড়ে ১১ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে ২০০-রও কম টাকা রয়েছে, যাতে হয়তো দিন দুয়েক কাটানো যেতে পারে। ছবি: এএফপি।
অনেকের সরকারি রেশন জোটেনি। কারও হাতে রয়েছে মাত্র ২০০ টাকার পুঁজি। কেউ আবার মালিকের কাছ থেকে বকেয়া মজুরির এক পয়সাও পাননি। এই অবস্থায় আধপেটা খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটছে ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের। করোনা-মোকাবিলায় দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হতেই বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে একটি সমীক্ষায়।
লকডাউনের মাঝে দেশ জুড়ে মোট ১১ হাজার ১৫৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই শ্রমিকদের ৯৬ শতাংশই ৮ থেকে ১৩ এপ্রিল— এই পাঁচ দিন সরকারের কাছ থেকে কোনও রেশন পাননি। ২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ওই শ্রমিকদের ৯০ শতাংশের বেশি মজুরি পাননি মালিকপক্ষের কাছ থেকে। ফলে ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৭০ শতাংশের হাতে ছিল মাত্র ২০০ টাকা, সেটাই একমাত্র ভরসা।
‘দ্য হিন্দু’ সংবাদমাধ্যমের করা ওই সমীক্ষায় ভিন্ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের দৈন্যদশাটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে শুরু করে রেশন বা গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, তৈরি করা খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অথবা অর্থকরী সাহায্য— কোনও কিছুই জোটেনি তাঁদের। ওই সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে— গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্দশায় রয়েছেন উত্তরপ্রদেশে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
দেশ জুড়ে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর সমীক্ষা করা হয়েছে, তাঁদের ৯৬ শতাংশই সরকারের তরফে রেশন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে ১১ হাজারেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের কারও কাছেই পৌঁছয়নি রেশনের খাদ্যসামগ্রী। অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রেও ৯৯ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক রেশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কর্নাটকে সেটা ৯৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ‘হে পরবাসী বাঙালি সমালোচকগণ, যেখানে থাকেন তার কী হাল?’
লকডাউন শুরু হতেই ভিন্ রাজ্যে কাজ হারানো বহু অস্থায়ী শ্রমিক নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নিজের রাজ্যের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। লকডাউনের বিধিনিষেধের জন্য গোটা দেশে পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় কাতারে কাতারে শ্রমিক হেঁটেই নিজের বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন। প্রশাসনিক আশ্বাস সত্বেও দেশের ৭০ শতাংশ শ্রমিকই জানিয়েছেন, সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন— কারও কাছ থেকেই তৈরি করা খাবার জোটেনি তাঁদের। এ ক্ষেত্রেও উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের খারাপ অবস্থার কথা জানা গিয়েছে ওই সমীক্ষায়। ওই রাজ্যে সমীক্ষার আওতায় থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য তৈরি করা খাবারের বন্দোবস্ত করা ছিল না। কর্নাটকে ৮০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দশা হয়েছে। অন্য দিকে, দিল্লি এবং হরিয়ানায় ওই হার শতাংশের হিসাবে যথাক্রমে ৫৮ এবং ৬৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: আজ থেকে নতুন কী কী খুলছে, কী কী এখনও বন্ধ, দেখে নিন
দিন আনা দিন খাওয়া ওই শ্রমিকদের আর্থিক সঞ্চয়ের বেহাল দশাও ফুটে উঠেছে এই সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষার সময় দেশ জুড়ে ১১ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে ২০০-রও কম টাকা রয়েছে, যাতে হয়তো দিন দুয়েক কাটানো যেতে পারে। গোটা দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রেও উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকেরা চরম দুর্দশায় রয়েছেন। ওই রাজ্যের ৮৭ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে রয়েছে ২০০ টাকারও কম। হরিয়ানায় আটকে পড়া শ্রমিকদের ৭৬ শতাংশের কাছে রয়েছে ৩০০ টাকারও কম।
এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা সরকারের তরফেও নিরাশ হয়েছেন। দেশ জুড়ে সমীক্ষা করা ওই শ্রমিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশই জানিয়েছেন, রেশন থেকে যা খাদ্যসামগ্রী পেয়েছিলেন, তাতে মাত্র দু’দিন চলে। এ ক্ষেত্রেও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের শোচনীয় অবস্থা। সমীক্ষার আওতায় থাকা শ্রমিকদের সকলেই একই দশা অর্থাৎ দু’দিনের রেশন রয়েছে তাঁদের কাছে। মহারাষ্ট্রের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে সমীক্ষার আওতায় থাকা ৯০ শতাংশেরও একই অবস্থা। অন্য দিকে, দিল্লি ও হরিয়ানার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ঠেকেছে ৮২ শতাংশে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy