ছবি: সংগৃহীত।
তথ্য সংক্রমণ! কোভিড-১৯ সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই সমান্তরাল সংক্রমণ ‘ইনফোডেমিক’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
কখনও সত্যতা রয়েছে, কখনও তার ভিত্তিই নেই, এমন হাজারো তথ্যের বাধাহীন চলাফেরা (বিশেষ করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মাধ্যমে) যে অচিরেই সমস্যার কারণ হতে পারে, অতীতের অভিজ্ঞতায় তা বুঝেছিলেন গবেষকেরা। কারণ, মহামারির ইতিহাসই বলছে, গণ-মনস্তত্ব (মাস সাইকোলজি) এই সময়ে সংশয়ে থাকে। তাই যে-মাধ্যমেই তথ্য আসুক, তা গ্রহণ করে মানুষের মন। ফলে সেই তথ্য, গুজব হলেও দাবানলের আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে হচ্ছে! কখনও কোয়রান্টিন-সেল্ফ আইসোলেশন নিয়ে গুজব, কখনও সংক্রমণ ছড়ানোর পদ্ধতি ও মাধ্যম নিয়ে গুজব। যেমন ভিত্তিহীন প্রচার ছড়ানো হয়েছে সংবাদপত্র নিয়েও।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ সংক্রান্ত টুইটে নজরদারির জন্য তৈরি একটি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, দিনে সব থেকে বেশি টুইট করা দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান পঞ্চম। আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেনের পরেই। কিন্তু সেই টুইটের ৩০ শতাংশই মিথ্যে। অথচ গুগলের চালু করা নতুন ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ লিখে সার্চ করা হলে প্রকৃত লিঙ্কগুলোই পাওয়া যাচ্ছে। সমস্যা হল, নেটিজেনের বড় অংশই সার্চের পরিশ্রমটুকুও করেন না। বরং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তথ্য পাওয়াটাই তাঁদের বেশি পছন্দের বলে জানাচ্ছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কল্পদীপ বসু। তাঁর কথায়, ‘‘বিপজ্জনক দিক হল, সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলি নিজের মতো করে তথ্যকে পরিবেশন করে বা বিকৃত করে। ফলে মূল তথ্যের সঙ্গে অনেক বা পুরোটাই ফারাক হয়ে যায়।’’
আবার স্বেচ্ছাকৃত ভাবে ফারাকটা তৈরি করা হয় রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক বা অন্য স্বার্থেও। বাণিজ্য-কৌশলী (বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট) অঙ্কিত চামোলির কথায়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণের মাধ্যম হিসেবে যেখানে শুধু ‘অবজেক্ট’ বলেছে, সেখানে হঠাৎ সব ছেড়ে সংক্রমণের মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্র বা কাগজ-শিল্পকে বেছে নেওয়ার জন্য কাদের স্বার্থ পূরণ হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করা দরকার।’’ আর এক বাণিজ্য-কৌশলী জানাচ্ছেন, যে-মানসিকতা থেকে মহামারি বা অশান্ত পরিস্থিতিকে মাধ্যম করে দৈনন্দিন জিনিসপত্রের কালোবাজারি করে মুনাফা লোটার চেষ্টা করেন এক শ্রেণির মানুষ, তেমনই ভবিষ্যতের লাভের অঙ্ককে মাথায় রেখে কোনও শিল্পকে (এ ক্ষেত্রে সংবাদপত্র-সহ কাগজশিল্পকে) কাঠগড়ায় তুলতেও পিছপা হন না অনেকে।
বিভ্রান্তির সময়ে তা বিশ্বাসও করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির অধ্যাপিকা জয়ন্তী বসু বলেন, ‘‘প্যানিকের সময়ে মানুষ হাতের সামনে পাওয়া তথ্যকে আঁকড়ে ধরেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে চায়। যুক্তিবোধ থাকলেও তখন তা প্রকট হয় না। এই পরিস্থিতিতে সরকার ঠিক তথ্য দিতে পারলে যুক্তিবোধ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’’
ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় জানাচ্ছেন, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, ১৯১৮ সালের 'স্প্যানিশ ফ্লু' বা এই নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ— সব সময়েই কোনও শ্রেণির স্বার্থ চরিতার্থ করতে গুজব ছড়ানো হয়েছে। তাতে গোমূত্র পানে নিরাময়ের মতো সংবাদপত্র থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। রজতকান্তবাবুর কথায়, ‘‘এই ধারণা ভাঙার জন্য কতগুলি স্তর বা প্রক্রিয়া অতিক্রম করে একটি সংবাদপত্র গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছচ্ছে, তাতে আদৌ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা তুলে ধরতে হবে। অনেক সংবাদপত্র যা ইতিমধ্যেই করেছে। তা হলে কাগজ বা সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে সংক্রমণের তথ্য ভুল প্রমাণিত হবে। যেমন গোমূত্র পানে করোনাভাইরাস সারে না, তা প্রমাণিত হয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy