Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus in India

দেশে নতুন করোনা সংক্রমণের গ্রাফটা কিন্তু বেশ দুশ্চিন্তার

ক্রমাগত বৃদ্ধিতে শঙ্কার কারণ দেখছেন অনেকেই। রোজকার মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেও বোঝা যাবে— সেটাও ক্রমশ ঊর্ধমুখী।

— ফাইল ছবি

— ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ২১:৪৫
Share: Save:

লকডাউন না হলে দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এত দিনে ১৫-২০ লাখ হত। এবং মৃতের সংখ্যা হতে পারত ৮০ হাজার পর্যন্ত। তথ্য-পরিসংখ্যানের মডেল বিশ্লেষণ করে এমনটাই বলছে কেন্দ্র। এটা ঘটনা যে— আমেরিকা-ইউরোপের মতো এ দেশে সংক্রমণ ঝড়ের গতিতে বাড়েনি। কিন্তু তা হলেও কি মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকার মতো পরিস্থিতি রয়েছে এখানে? পরিসংখ্যান কিন্তু একেবারেই তা বলছে না। বরং সংক্রমণের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিনের নতুন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু একটু একটু করে হলেও ঊর্ধমুখী। এবং প্রায় প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে এই সংখ্যা।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন ৬-৭ জন করে বাড়ছিল। এপ্রিলের গোড়ার সপ্তাহে গড়ে তা ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০-র উপরে পৌঁছে যায়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দৈনিক বৃদ্ধির গড় সংখ্যা ২০০০ থেকে বেড়ে পৌঁছে যায় ৩৩০০-র উপর। ২৪ মে সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে হিসেব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে— সব রেকর্ড ভেঙে শেষ ২৪ ঘণ্টার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা হয়েছে ৬৭৬৭। এই ক্রমাগত বৃদ্ধিতে শঙ্কার কারণ দেখছেন অনেকেই। রোজকার মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেও বোঝা যাবে— সেটাও ক্রমশ ঊর্ধমুখী। মে মাসের শুরুতে সংখ্যাটা ছিল ৮০-র নীচে। এখন তা দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

নীচে যে দুটি লেখচিত্র বা গ্রাফ দেওয়া হয়েছে, তার একটি দৈনিক নতুন সংক্রমণের। অন্যটি রোজকার মৃত্যুর। দুটিই যে পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তা হল পাঁচ দিনের চলন্ত গড় (Moving Average)। এই চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে। দুটি লেখচিত্রেই দেখা যাচ্ছে, বিচ্ছিন্ন দু-একটা দিনে নতুন সংক্রমণ বা মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও, সব মিলিয়ে তা বাড়তে বাড়তেই যাচ্ছে। এই সংখ্যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে কমতে শুরু না করা পর্যন্ত স্বস্তির প্রশ্ন তো নেই-ই, বরং উদ্বেগের হয়ে থাকছে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন)

আরও পড়ুন: যেনতেন প্রকারে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কাকদ্বীপে মমতা​

কোথায় দাঁড়াবে গিয়ে এই সংখ্যা? কেউ জানেন না। এর মধ্যেই একটু একটু করে শিথিল হচ্ছে লকডাউন। আরও হবে। বৃদ্ধির গতিটা লাফ দিয়ে আরও বেড়ে যাবে না তো? আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল বায়োলজি অ্যান্ড ইকোলজি’র কো-অর্ডিনেটর এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক নন্দদুলাল বৈরাগী-র মতে, ‘‘কত দিন পর্যন্ত এই অতিমারি চলবে, সংক্রমণের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কী ভাবে সংক্রমণ বাড়বে, মৃত্যু কত ঘটবে ইত্যাদি নিয়ে সমীক্ষা থেকে এখনও পর্যন্ত যে হিসেব উঠে আসছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জুনের শেষ সপ্তাহে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি।” তবে একই সঙ্গে তাঁর মত, “জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের হার খুব ধীরগতিতে হলেও নিম্নমুখী হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তা একেবারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।”

কিন্তু এই সংক্রমণ কমার সম্ভবনা কি অঙ্ক কষে বলা সম্ভব? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, ‘‘যে কোনও ভাইরাসই তার প্রকাশকালের ৬-৭ মাস পর থেকে কিছুটা শক্তি হারাতে থাকে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগে এই ভাইরাস প্রকাশ্যে আসে। সেই অঙ্ক অনুযায়ী, জুলাইয়ের তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহ থেকে ভাইরাসের মিউটেশনের ক্ষমতা কমবে। ফলে সংক্রমণ তখন খুব ধীর গতিতে কমবে। সেই অঙ্ক মেনে চললে অক্টোবরে সংক্রমণ তলানিতে ঠেকবে।” তবে একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবাণী, “নতুন আকারে করোনাভাইরাস আবার শীতে নতুন করে ঝাপটা মারবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন)

ফরিদাবাদ ট্রানস্লেশনাল হেল্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ও নন্দদুলালবাবুর সঙ্গে একমত। তবে তাঁর মতে, “গণপরিবহন বন্ধ রাখা, ঠিকঠাক মাস্ক ব্যবহার, সচেতনতা সব মিললে তবেই কিন্তু এই ফল আসবে।”

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, “এখনই জুন-জুলাই-সেপ্টেম্বর এ ভাবে আলাদা করে বলা না গেলেও, প্রাকৃতিক ভাবেই এই সব ভাইরাস মাস ৬-৭ পর থেকে কিছুটা দুর্বল হতে শুরু করে। করোনা ডিসেম্বরের শেষ ভাগ বা জানুয়ারি থেকে সারা বিশ্বে প্রকট হয়েছে। সেই হিসেবে জুলাই-আগস্ট থেকেই এর প্রভাব কমার কথা।” তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এখনও এই ভাইরাস নিয়ে বিস্তর গবেষণা বাকি। তাই জোর দিয়ে কিছুই বলা যাবে না।”

আরও পড়ুন: ‘ভাড়াবাড়িতে ফিরতে পারব না’, ট্রেনের অপেক্ষায় মুম্বইয়ের ফুটপাতে ঠাঁই পরিযায়ীদের

(চলন্ত গড় কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে লেখচিত্র ১-এ ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬। এটাই ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Moving Average Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy