—প্রতীকী ছবি।
সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে করোনা-আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন একটি নাম— ‘ইউকে স্ট্রেন’। বিজ্ঞানের ভাষায় নাম: ভিইউআই-২০২০১২/০১। খোদ ব্রিটেন সরকারে পক্ষ থেকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, করোনাভাইরাসের এই স্ট্রেনটির সংক্রমণ ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বেশি।
ব্রিটেনের একটি প্রথম সারির সংবাদ সংস্থার দাবি, এই প্রকারের করোনাভাইরাসটি প্রথম চিহ্নিত হয়েছে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে। ইটালি, অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু দেশ দাবি করেছে, তাদের দেশেও ধরা পড়েছে স্ট্রেনটি। ভয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বহু দেশ। ভারতও ব্রিটেনের উড়ান নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা বজায় রাখছে। ব্রিটেন থেকে কোনও যাত্রী এ দেশের বিমানবন্দরে নামলেই আরটি-পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আসলে এত ভয়ের একটাই কারণ— ভাইরাসের মধ্যে হওয়া মিউটেশন। নতুন প্রকারের ভাইরাসটির নাম ‘ভিইউআই-২০২০১২/০১’ রাখার কারণ, ‘ভিইউআই’ অর্থাৎ ‘ভাইরাস আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’। অর্থাৎ ভাইরাসটি সম্পর্কে তদন্ত চলছে। ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজ়িজ় প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’ জানাচ্ছে, প্রথম চিহ্নিত হওয়া সেই ‘উহান স্ট্রেন’-এর থেকে এটি অনেকটা আলাদা। মোট ২৯টি নিউক্লিওটাইড সাবস্টিটিউশন মিউটেশন ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম মিউটেশন— ‘এন৫০১ওয়াই’। ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেনে এই পরিবর্তনটি ঘটেছে। স্পাইক প্রোটিনের এই রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন-ই মানবকোষের এসিই২ রিসেপটরের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। মানুষের শরীরে এ ভাবেই ঢোকে ভাইরাস। মিউটেশনটি সেই সংক্রমণ ক্ষমতা বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ফিউচারকে নিয়ন্ত্রণে অ্যামাজনের প্রচেষ্টা আইন ভাঙার শামিল: আদালত
আরও পড়ুন: ফের কমল সংক্রমণের হার, আশঙ্কা জাগাচ্ছে কলকাতায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা
কিন্তু সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধি মানেই মারণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া নয়। ‘ট্রান্সমিশন’ বা সংক্রমণের অর্থ, ভাইরাস এক জনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে ছড়িয়ে পড়া। ‘ভিরুলেন্স’ বা ক্ষতি করার ক্ষমতা আলাদা। বেশি সংক্রামক হওয়া মানেই বেশি ক্ষতিকর নয়। বেশি সংক্রামক হলেও কোনও ভাইরাসের ক্ষতি করার ক্ষমতা
সমান থাকতেই পারে। এই মুহূর্তে ভাইরাসটি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জানা নেই। ফলে বেশি ক্ষতিকর বলার মতো প্রমাণ নেই। এমনকি এটাও বলা সম্ভব নয়, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ‘রিসেপটর বাইন্ডিন ডোমেন’-এ পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটেছে বলে, এর মানবকোষের ‘এসিই২ রিসেপটর’-এর সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার শক্তি বেড়েছে। আবার এ রকমও হতে পারে, এই মিউটেশনের ফলে ‘এসিই২’ ছাড়াও মানবকোষের অন্য কোনও রিসেপটরের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে ভাইরাসটির।
এই পরিস্থিতিতে একটা প্রশ্ন বারবারই উঠছে— যে সম্ভাব্য টিকাগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলো এই নতুন প্রকারের করোনাভাইরাসকে রুখতে সাহায্য করবে, কি না? কিন্তু এর উত্তর এখনই জানা নেই। এ অবস্থায় এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ, অ্যান্টিজেন হিসেবেই এই প্রকারের করোনাভাইরাসটি আলাদা নাকি। সে ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউনো সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্য ভাবে সাড়া দেবে। ভাইরাসটিকে আটকানোর প্রক্রিয়াই সে ক্ষেত্রে ভিন্ন হবে। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টিই এখন তদন্তাধীন। তাই গোড়াতেই বলে দেওয়া হয়েছে— ‘ভাইরাস আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’।
(লেখক পরিচিতি: ডেপুটি হেড, ইনফেকশাস ডিজ়িজ় অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগ, সিএসআইআর-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy