মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দেশবাসীর লড়াইকে কুর্নিশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় দেশবাসী একজোট হয়ে লড়ছেন। দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন এক এক জন ‘সৈনিক’। মাসিক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এ ভাবেই দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাস্ক পরার গুরুত্ব বোঝালেন। আহ্বান জানালেন যত্রতত্র থুথু না ফেলার। যদিও পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দেশের বহু গরিব, মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন, তার থেকে মুক্তি বা সে সম্পর্কে কার্যত কোনও কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী।
প্রতি মাসের শেষ রবিবার রেডিয়োতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে নিজের ‘মনের কথা’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সেই অনুষ্ঠান হল। আগের বার একাধিক রাজ্য থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে। প্রায় আধ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে এ দিন অবশ্য পুরো সময় নিজেই কথা বলেছেন।
দেশবাসী যে ভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক জোট হয়েছে, তার প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী মোদী এ দিন বলেন, ‘‘ভারতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন মিলে এই লড়াই করছেন। দেশের প্রত্যেক নাগরিক এক এক জন সৈনিক।’’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সচেতনতা বাড়ানো ও মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামাজিক সংগঠনগুলিকেও অভিবাদন জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৯০ জন সংক্রমিত, মহারাষ্ট্রেই আক্রান্ত বাড়ল ৮১১
শুক্রবারই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার লড়াইয়ে গ্রামীণ ভারত যে বিরাট ভূমিকা নিচ্ছে, সেটা উল্লেখ করেছিলেন ওই আলাপচারিতায়। রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে অবশ্য গ্রাম-শহরকে আলাদা করেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহর হোক বা গ্রাম, সর্বত্র এই মহামারির বিরুদ্ধে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কেউ গরিবদের খাওয়াচ্ছেন, কেউ মাস্ক তৈরি করছেন, জমি বিক্রি করে ত্রাণের টাকা জোগাড় করছেন, অনেকে আবার পেনশনের টাকা পর্যন্ত করোনার জন্য দান করছেন। কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে, সেটা নিশ্চিত করছেন দেশের কৃষকরা।’’ করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য ও সাহায্যের জন্য তৈরি হয়েছে coronaviruswarriors.gov.in নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। তাতে যোগ দিয়েছেন ১ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ। আরও বেশি মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই সংক্রামক ভাইরাস কী ভাবে মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে, এবং করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে কী ভাবে পাল্টে যাবে, তাও উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসাক্ষেত্র, অফিস, শিক্ষাকেন্দ্র বা স্বাস্থ্যক্ষেত্র— সর্বত্রই করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি চলছে। আর এই সময়ে আমরা প্রত্যেক মানুষের মূল্য বুঝতে পারছি। বাড়ির কাজের লোক, দোকানের কর্মী, গাড়ির চালক— সবার গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে।’’
করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় আমেরিকা, ব্রাজিলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠিয়েছে ভারত। সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই কঠিন সময়ে অন্য দেশে ওষুধ পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না। কেউ আঙুলও তুলত না। কিন্তু তবু শুধু নিজের স্বার্থে নয়, মানবিকতার খাতিয়ে বিশ্বের একাধিক দেশে ওষুধ পাঠিয়েছে ভারত। বিশ্বের সবাইকে সাহায্যের জন্যই আমরা এই ব্যবস্থা করেছি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্ত প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু
মাস্ক পরা কী ভাবে কার্যত বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে, তা বোঝাতে মোদী বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ছে মাস্ক পরা। মাস্ক এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলে যাওয়ার পরেও সেটা অব্যাহত থাকবে।’’ তবে সাবধান করেছেন, ‘‘মাস্ক পরলেই কেউ অসুস্থ, এমনটা ভাববেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জনসমক্ষে থুথু ফেলা ঠিক নয়। স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এবার সময় এসেছে, এই বদঅভ্যাসকে ছাড়তে হবে।’’ এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় আয়ুর্বেদের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ রবিবার অক্ষয় তৃতীয়া। ‘অক্ষয়’-এর অর্থ যা কখনও শেষ হয় না। প্রতিবছর এটা ধুমধামের সঙ্গে পালন হলেও আজ এমন সময়, যে সেটা করা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা অক্ষয়। এই দিনেই শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে পাণ্ডবদের অক্ষয় পাত্র মিলেছিল। আমাদের কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশে অন্নভাণ্ডার তৈরি করে চলেছেন। এই অক্ষয় তৃতীয়ায় আমাদের পরিবেশ, জঙ্গল, জল—সব কিছু নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের পৃথিবীকে অক্ষয় রাখতে আমাদের প্রতি়জ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।’’
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাস। তাঁদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে গিয়েছে। আগের বার যে ভাবে রমজান পালন করা হয়েছিল, তখনও এটা বোঝা যায়নি যে, এ বছর এমন পরিস্থিতিতে রমজান পালন করতে হবে। এ বার যেন আমরা আরও বেশি করে এই পার্থনা করি যে, সারা বিশ্ব করোনামুক্ত হোক।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy