ছবি: সংগৃহীত।
প্রতি দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে মৃত্যুও। তার মধ্যেই আমেরিকার ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি সামান্য হলেও স্বস্তি দিচ্ছে উপমহাদেশের বিশেষজ্ঞদের একাংশকে। ওই গবেষকদের দাবি, করোনাভাইরাসের মূল যে উপশ্রেণি (সাব-টাইপ)-টি ভারত-সহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়েছে, তা আমেরিকা বা ইউরোপের উপশ্রেণির তুলনায় এখনও অবধি কিছুটা কম আগ্রাসী আচরণ করছে। তবে সেই সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, ভারতের যা জনঘনত্ব, তাতে ভাইরাসের ‘দুর্বলতা’র ভরসায় বসে না থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই এখন একমাত্র পথ। কারণ, এই ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুত নিজেকে মিউটেট বা পরিবর্তিত করে আগামী দিনে আগ্রাসী রূপ নিতেই পারে। চিকিৎসক এবং গবেষক মহলের একাংশও বলছেন, অতি দ্রুত মিউটেট করার ক্ষমতা রয়েছে এই ভাইরাসের। তাই যে কোনও সময় এটা আগ্রাসী হয়ে উঠতেই পারে।
প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই সোসাইটির সদস্য বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং অধ্যাপক। গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন মার্কিন বিজ্ঞানী ফরেস্টার এবং তাঁর সহ-লেখকেরা। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়ে এই সোসাইটির জার্নালে। একটি করোনা পরিবারকে তিনটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এরা হল— এ, বি এবং সি। গবেষকদের দাবি, আমেরিকা, ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘এ’ এবং ‘সি’-র প্রাবল্য দেখা গেলেও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভাইরাসের যে ধরনটি মূলত দেখা যাচ্ছে, সেটি ‘বি’। সুতরাং ধরে নেওয়া হচ্ছে যে হেতু ভারত দক্ষিণ এশিয়াতেই অবস্থিত, সুতরাং ভারতেও ‘বি’ টাইপ তাকার সম্ভাবনা অধিক। কিন্তু, ভবিষ্যতে এই ‘বি’ টাইপ পরিবর্তিত হয়ে ‘এ’ বা ‘সি’ টাইপে চলে যাচ্ছে কি না সেটা বোঝা যাবে সপ্তাহখানেক পরেই। পাশাপাশি এই পর্যবেক্ষণও পরিসংখ্যান থেকেই উঠে আসছে যে, ‘এ’ এবং ‘সি’-র তুলনায় ‘বি’-র মারণ ক্ষমতা এখনও পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে কম। যে সব জায়গায় ‘এ’ বা ‘সি’ করোনাভাইরাস-এর উপস্থিতি বেশি, (যেমন আমেরিকা, ইউরোপ), সেখানকার তুলনায় ‘বি’ (অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত ভারতেও) এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর অনুপাত (ডেথ ইনফেকশন রেশিও) অনেকটাই কম।
ওই রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর অধ্যাপক প্রিয়দর্শী বসু বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম বলে মনে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দু’রকম। দু’টিই সত্যি। প্রথমত ‘হোস্ট ইমিউনিটি’ বা আক্রান্ত ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ভারতের মতো যে সব অঞ্চল ম্যালেরিয়াপ্রবণ, সে সব জায়গার মানুষের দেহে এমনিতেই একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। বিসিজি ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলেও এটা ঘটে থাকতে পারে।’’ দ্বিতীয় কারণটির প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণাপত্রের উপরেই জোর দিলেন প্রিয়দর্শীবাবু। তাঁর কথায়, “নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস একটি পরিবার। তার নিজের নানা রূপ ও প্রকার রয়েছে। এটাও দেখা যাচ্ছে যে, এর মূল উৎস চিনের উহান। সেখানেই ‘এ’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘বি’ এবং ‘সি’ টাইপ তৈরি হয়েছে।’’ চিন এবং আমেরিকায় তিন রকম উপশ্রেণিরই উপস্থিতি দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার (ডেথ ইনফেকশন রেশিও) এখনও পর্যন্ত ইউরোপের যে কোনও দেশের তুলনায় যে-হেতু অনেকটাই কম, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারত এখনও পর্যন্ত ‘বি’ ভাইরাস জোনে রয়েছে। তবে ভারতে পরীক্ষা কম হওয়ার জন্য করোনা সংক্রান্ত তথ্যও অ্যাকাডেমির হাতে কম ছিল। ভারতের নমুনা নিয়ে আরও কাজ হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: পুলিশের তৃষ্ণা মিটিয়ে প্রশংসিত লোকমণি
আরও পড়ুন: সাংবাদিক-স্বাধীনতা: কাশ্মীর-পরিস্থিতির কারণেই আরও পতন ভারতের!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy