জীবাণুনাশক ছড়ানো হচ্ছে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’-র কন্ট্রোল রুমে। রবিবার লখনউয়ে। পিটিআই
আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গহীন করোনা রোগীরাই এখন কেন্দ্রের মাথাব্যথার প্রধান কারণ।
লকডাউন ৩ মে প্রত্যাহার করা হবে কি না, তা নিয়ে আগামিকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খাদে চলে যাওয়া অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে প্রথম ধাপে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে ফেরানো এবং পরবর্তী ধাপে শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে দোকান খোলার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র। ৪০ দিন লকডাউনের পরে সবুজ জ়োনে অন্তত স্বাভাবিক কাজকর্ম ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী শাসক শিবির। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের মূল আশঙ্কা উপসর্গহীন করোনা বাহকেরা। জ্বর, সর্দি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ না-থাকায় এঁদের দেখে বোঝার উপায় নেই তারা করোনা সংক্রমিত। সংক্রমণ নেই এমন এলাকায় তাঁরা মিশে গেলে লকডাউনের প্রচেষ্টাই মাটি হয়ে যাবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এ থেকে রক্ষা পেতে এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জানান, আগামী দিনগুলিতে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতেই হবে। বাড়ির বাইরে মাস্কও বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার।
তবে এই সমস্যা ভারতের একার নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, তাদের দেশেও আক্রান্তদের মধ্যে ২৫%-এর মধ্যে কোনও উপসর্গ বা অসুস্থতা মিলছে না। ফলে অজান্তেই তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটি আরও উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় যুগ্ম স্বাস্থ্যসচিব লব আগরওয়াল বলেন, “করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৮০% রোগীর মধ্যে হয় সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, বা কোনও উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না।” ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের বিজ্ঞানী রামন গঙ্গাখেদকরের মতে, আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৬৯% রোগীর জ্বর, সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নেই। শুধু এই কারণেই ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই মার্স বা সার্স ভাইরাসের তুলনায় কঠিন বলে মনে করেন তিনি।
দেশে লকডাউন উঠে গেলে এক জন সুস্থ ও উপসর্গহীন আক্রান্তের মধ্যে পার্থক্য করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্বিগ্ন এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, লকডাউন উঠে গেলে বিধিনিষেধ থাকবে না। তখন উপসর্গহীন সংক্রমিত কেউ নিজের অজান্তেই অন্যদের সংক্রমিত করে ফেলতে পারেন। এতে গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন থেকে পরিযায়ী শ্রমিক, আজ মোদীর কথা মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে
এই কারণে শুরু থেকেই উপসর্গহীন আক্রান্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বার করতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠছিল। বিশেষ করে হটস্পট এলাকার বাইরে বাছবিচার না-করে বেশি করে পরীক্ষার পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ১৩৫ কোটির দেশে ১% মানুষের পরীক্ষা করতে হলেই ১.৩৫ কোটি পরীক্ষা হওয়া উচিত। আর আজ পর্যন্ত দেশে পরীক্ষা হয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষ নাগরিক পিছু ২০০টির সামান্য বেশি পরীক্ষা। এই হার যে ভীষণ কম তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: ‘রিজার্ভ বেঞ্চ নেই! রোগী কে দেখবেন?’
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গের ভিত্তিতে পরীক্ষা না করে সরকারের উচিত জোন নির্বিশেষে শহরে-গ্রামে, পাড়াতে, আবাসনে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করা। এতে সংক্রমণের মাত্রা বোঝা যাবে। যা মেনে প্রাথমিক ভাবে সাফল্য পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু ভারতের হাতে কিট বাড়ন্ত। তাই শুরু থেকে মেপে পা ফেলছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন অবশ্য এই যুক্তি মানেন না। তাঁর দাবি, সংক্রমিতের সংখ্যা ও পরীক্ষার তুলনা করলে ওই দাবি খাটে না। সংক্রমণ যদি দেশে ছড়িয়ে পড়ত, তা হলে আরও পজ়িটিভ রোগী পাওয়া যেত। কিন্তু তা হয়নি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy