Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কী ভাবে পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস, চেনাচ্ছেন দুই বাঙালি

এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি টাইপ বা ধরন সম্পর্কে জানতে পারা গিয়েছে।

পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধানকুমার বিশ্বাস

পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধানকুমার বিশ্বাস

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

মানুষ বনাম ভাইরাস ‘বিশ্বযুদ্ধ’ চলছে চার মাস ধরে। শত্রুপক্ষ খালি চোখে অদৃশ্য। ‘সার্স-কোভ-২’ সংক্রমণে পৃথিবী জুড়ে এ-পর্যন্ত দু’লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমিত ৩০ লাখেরও বেশি। দিনরাত এক করে গবেষণাগারে প্রতিষেধকের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তার জন্য আণুবীক্ষণিক শত্রুটিকে ভাল করে চেনা প্রয়োজন। সেই কাজটি করেছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।

এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি টাইপ বা ধরন সম্পর্কে জানতে পারা গিয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে ‘সংক্রামক’ ভাইরাস টাইপটিকে চিহ্নিত করলেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বিজ্ঞানী নিধানকুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার। কেন সেটি এতটা সংক্রামক, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ সোমবার প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চিনের উহানে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কারও মৃত্যু হয়। এর পরে সীমান্ত পেরিয়ে উহান থেকে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। পার্থপ্রতিম জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির গঠনে। প্রত্যেক ভাইরাসে ডিএনএ বা আরএনএ থাকে। ‘সার্স-কোভ-২’ আরএনএ ভাইরাস। এই জিনোমের গঠনে সামান্য অদলবদল ঘটে গিয়েই ভিন্ন চেহারা নেয় ভাইরাস। বাড়ায় সংক্রমণ ক্ষমতা।

নিজেদের বাঁচার জন্যই তাদের এই লড়াই। ভাইরাস স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য তাদের বাসা বাঁধতে হয় কোনও প্রাণীর শরীরে। এ ক্ষেত্রে যা মানুষ।

আরও পড়ুন: উত্তর ২৪ পরগনায় অতি স্পর্শকাতর এলাকা কোনগুলি, তা দেখে নিন

আরও পড়ুন: রেড জোন কলকাতার কোন কোন জায়গা অতি স্পর্শকাতর, দেখে নিন

গোটা পৃথিবী থেকে পাওয়া ভাইরাসটির আরএনএ সিকোয়েন্সের তথ্য থেকে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন নিধান ও পার্থপ্রতিম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬ জন করোনা-রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস-নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করে দেখেন তারা। পার্থবাবু জানান, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও নিজের চেহারা বদলেছে। এখনও পর্যন্ত ‘ও’, ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এথ্রি’, ‘বি’, ‘বি১’-সহ মোট ১১ ধরনের ভাইরাস মিলেছে। এর মধ্যে চিনে প্রথম সংক্রমণ ঘটায় ‘ও’। সেটি মূল। বাকি ১০টি তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে। এর মধ্যে এখন সব চেয়ে সংক্রামক ‘এ২এ’। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘অবাক করা বিষয়, বেশির ভাগ ভৌগোলিক এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে দখল নিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের ‘এ২এ’। ‘এ২এ’-র অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে ২৪ জানুয়ারি। মার্চ মাসের শেষের মধ্যে মোটামুটি অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ৬০ শতাংশ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এরাই।’’ নিধান জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ‘এ২এ’। আমাদের দেশে সেখান থেকে ‘এ২এ’ এসেছে। আবার চিন থেকে এসেছে ‘ও’। ইরান থেকে এসেছে ‘এথ্রি’। তিনি বলেন, ‘‘এ২এ এবং ও, দু’টোই শক্তিশালী। তবে এ২এ বেশি শক্তি ধরে।’’

তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন দুই বিজ্ঞানী। সার্স-কোভ-২ তার চরিত্র অনুযায়ী ফুসফুসে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ায়। ভাইরাসটির স্পাইকে থাকা প্রোটিন মানুষের ফুসফুসে থাকা ‘এসিই২’ প্রোটিনটিকে কাজে লাগিয়ে কোষের উপরিভাগে ‘অ্যাঙ্কর’ করে বা জুড়ে যায়। এর পরে ফুসফুসে উপস্থিত অন্য একটি প্রোটিন তাকে কোষের ভিতরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। ‘এ২এ’-র ক্ষেত্রে তার স্পাইকে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডটি ‘অ্যাসপারটিক অ্যাসিড’ থেকে বদলে ‘গ্লাইসিন’-এ পরিণত হয়। যা তার সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুই বিজ্ঞানীই জানাচ্ছেন, যে হেতু ভাইরাসটির মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটছে, তাই ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভাইরাসটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না-পারলে প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ করবে না। সেই কাজেই সাহায্য করবে নিধান ও পার্থপ্রতিমের গবেষণা, আশাবাদী দুই বাঙালি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Bengali Scientists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE