Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
JEE

নিট-মামলা ৬ রাজ্যের, বার্তা সনিয়ার

পরীক্ষার দরুন সংক্রমণ বাড়লে, তার দায় কে নেবেন থেকে শুরু করে, কেন নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না— ইত্যাদি এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪০
Share: Save:

সিদ্ধান্ত হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সনিয়া গাঁধীদের বুধবারের বৈঠকেই। সেই অনুযায়ী, জেইই-মেন এবং নিট-ইউজি পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে ‘রিট পিটিশন’ দাখিল করলেন ছয় বিরোধী রাজ্যের ছয় মন্ত্রী। মমতার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্র— এই ছয় রাজ্যের ছ’জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী আবেদন দাখিল করেছেন সর্বোচ্চ আদালতে। এ রাজ্য থেকে আবেদনকারী মলয় ঘটক।”

বিরোধীদের বক্তব্য, অতিমারির মধ্যেও সেপ্টেম্বরের গোড়ায় সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষা (জেইই-মেন) এবং ডাক্তারি প্রবেশিকা নিট-ইউজি নেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, নিরাপত্তার পরিপন্থী। পরীক্ষার দরুন সংক্রমণ বাড়লে, তার দায় কে নেবেন থেকে শুরু করে, কেন নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না— ইত্যাদি এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আইনের দরজায় কড়া নাড়ার পাশাপাশি এ দিন প্রতিবাদে পথে নেমেছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনইউএসআই।

কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এ দিন পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভিডিয়ো-বার্তায় বলেছেন, “…তোমরাই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তাই তোমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তোমাদের সঙ্গে কথা বলেই। আশা করি, সরকার তোমাদের কথা শুনবে। পূরণ করবে তোমাদের ইচ্ছা।…সরকারের কাছে এটাই আমার আর্জি।”

রাহুল গাঁধীর ভিডিয়ো-টুইট, “গত কয়েক মাসে কোভিড মোকাবিলা যে দক্ষতার সঙ্গে হয়নি, আমরা তা জানি।… কিন্তু তার দায় তোমাদের বইতে হবে কেন! তোমাদের এবং সারা দেশকে কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নতুন করে সমস্যা কেন বাড়ানো হচ্ছে, তা অস্পষ্ট। কেন তোমাদের উপরে পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হবে?...কেন্দ্র ইতিমধ্যেই পড়ুয়াদের অনেক অসুবিধার মুখে ফেলেছে। দোহাই এ বার অন্তত পড়ুয়াদের কথা শুনুন।”

গোড়া থেকেই সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার বিরোধী বিজেপি-ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর প্রশ্ন, “আইনের প্রবেশিকা পরীক্ষা সিএলএটি (ক্ল্যাট) যদি পিছোনো যায়, তবে জেইই-নিট নয় কেন?”

সুপ্রিম কোর্টে আর্জি

• পিছোক এনইইটি এবং জেইই। এমন ভাবে, যাতে শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না-হয়। আবার আপসও করা না-হয় পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সঙ্গে।

আপত্তির কারণ

সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত

• পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং জীবনের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ

• পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে যান-বাহনের অসুবিধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা

• পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং পড়ুয়াদের সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ব্যর্থ

• স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার ঘাটতি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রেও

বিরোধীদের বক্তব্য

• নভেম্বরে পরীক্ষা নিয়ে সিমেস্টারে সামান্য কাটছাঁট করলেই শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হওয়া আটকানো সম্ভব।

• সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শুধু পরীক্ষায় জোর কেন?

• পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের পরিবারে সংক্রমণ বাড়লে, দায় নেবেন কে?

• কী ভাবে আসবেন পড়ুয়ারা?

• পারস্পরিক দূরত্ববিধির কী হবে?

• যাঁরা সংক্রমিত, কোয়রান্টিনে কিংবা বন্যায় আটকে, তাঁদের পরীক্ষার কী হবে?

• অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড তো বাধ্য হয়ে করা। জীবনবিমা কেনা মানে কি তবে মৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশ!

যদিও সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ থেকে পিছিয়ে সিএলএটি-র নতুন দিন ঠিক হয়েছে ওই মাসেরই ২৮ তারিখ।
সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা তথা এই আবেদনের অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির প্রশ্ন, “নিটের প্রতি পরীক্ষাকেন্দ্রে যদি গড়ে ৪১৫ আর জেইই-র হলে প্রায় ১৪৫০ জনকে যেতে হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রীর মুখে ছ’ফুট দূরত্ববিধির কথা শোনার অর্থ কী?” সংক্রমণ এড়াতে পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ানো, সেখানে ঢোকার সময়েই থার্মো-গানে শরীরের তাপমাত্রা মাপা-সহ বিভিন্ন সাবধানতার কথা বলেছে পরীক্ষার আয়োজক সংস্থা এনটিএ। কিন্তু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, “পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও, তা বেড়েছে একই জেলায়। যেমন, বিহারে ৩৮টি জেলার মধ্যে নিটের কেন্দ্র রয়েছে মোটে দু’টিতে। জেইই-র সাতটিতে। ফলে অন্য সব জেলা থেকে পরীক্ষা দিতে আসতে হবে পড়ুয়াদের। ভিড় বাড়বে ওই সব জেলায়।”
কিন্তু আগের আবেদন খারিজ হওয়ার দিন দশেক পরে একেবারে শেষ মুহূর্তে কেন আদালতের দ্বারস্থ হলেন বিরোধীরা? সিঙ্ঘভির মন্তব্য, “সরকার পাঁচ মােস বিকল্পের হদিস পায়নি, তার তুলনায় এই দেরি সামান্য।’’

ডামাডোলের আশঙ্কা করছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। তাঁর কথায়, “এই দুই পরীক্ষা ছাড়াও সেপ্টেম্বরে সেনায় নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। এই সমস্ত পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের জন্য বাস, হোটেল, রেস্তরাঁ সব খুলে দিতে হবে। এর ফল কী হবে, তা টের পাওয়া যাবে ১৩ তারিখের পরে।” তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কটাক্ষ, “পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নের উত্তর দেবেন নাকি, পেন স্যানিটাইজ় করা আর মুখ থেকে মাস্ক সরে যাওয়া নিয়ে ভাববেন!” অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডের সংখ্যাকে যে সরকার ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, তাকে এ দিন বিঁধেছেন বিরোধীরা। হেমন্তের কথায়, “এ তো বাধ্য হয়ে করা। জীবনবিমা কেনা মানে কি তবে মৃত্যুর ইচ্ছা!”

তবে এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা পিছোনোর কথা ভাবার সামান্যতম লক্ষণ দেখায়নি কেন্দ্র। সন্ধ্যা নাগাদ শিক্ষা মন্ত্রক শুধু জানিয়েছে, জেইই এবং নিটে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডকারীর সংখ্যা তত ক্ষণ পর্যন্ত যথাক্রমে ৭.৬ ও ১১.৪৯ লক্ষ!

অন্য বিষয়গুলি:

JEE NEET Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy