স্পর্শকাতর তিব্বত-জিংঝিয়াং হাইওয়ে থেকে ভারতীয় সেনাকে দূরে রাখতেই এই কৌশল বলে ধারণা।—ছবি সংগৃহীত।
প্রায় ষাট বছর গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি বেজিং। হঠাৎ কেন তা দখলের জন্য হাজার হাজার লালফৌজের সমাবেশ এবং হিংস্র আক্রমণ? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকেরা দেখছেন, স্পর্শকাতর তিব্বত-জিংঝিয়াং হাইওয়ে থেকে ভারতীয় সেনাকে দূরে রাখতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সূত্রের বক্তব্য, পরস্পরের চোখে চোখ রাখা অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সমঝোতা সাময়িক। আপাতত সেনা পিছিয়ে গেলেও ভারত-চিন সম্পর্কে একটি স্থায়ী ক্ষত হয়ে দাঁড়াল গালওয়ান।
নয়াদিল্লিকে নিশানা করে আজই চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, লাদাখে ১৫ জুন রাতের ঘটনা নিয়ে ভারতের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। ইঙ্গিত স্পষ্ট, গালওয়ান উপত্যকাকে মে মাসের আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভারতকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সত্তর বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এই প্রথমবার বেজিং দাবি করেছে, গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। উনিশ শতকে পশ্চিমের ভূপর্যটকদের গাইডের কাজ করা গুলাম রসুল গালওয়ানের নামে এই উপত্যকার নামকরণ। পর্যটকেরা এখান থেকে যেতেন তিব্বত এবং জিংঝিয়াং-এর উইঘুর স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকায়। কয়েক দশকে তিব্বতি এবং উইঘুরদের আন্দোলন নির্দয় ভাবে দমন করেছে চিন— এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের। এই জিংঝিয়াং এবং তিব্বতের মধ্যে হাইওয়ে বানানো হয় ১৯৫১ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে যা আকসাই চিনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: গালওয়ানে পাকা ঘাঁটি গড়েছে চিন, ধরা পড়ল উপগ্রহচিত্রে
গত বছরের অগস্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পর নড়েচড়ে বসে বেজিং। তাদের কাছে এই এর একটাই অর্থ, আকসাই চিন দখলের জন্য পদক্ষেপ করছে নয়াদিল্লি। চিনের তরফে সমালোচনা শুরু হয়। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তড়িঘড়ি বেজিং গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, চিনের সীমান্তবর্তী বিতর্কিত ভূখণ্ড আগ্রাসনের কোন পরিকল্পনা নয়াদিল্লির নেই। তবে তাতে কাজ হয়নি। বেজিংয়ের বক্তব্য, চিনের সার্বভৌমত্বকে খাটো করার জন্য ভারত ঘরোয়া আইন পরিবর্তন করেছে।
এর পরে পূর্ব লাদাখে ভারতের রাস্তা এবং পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টিকে আটকানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করে বেজিং। কারণ, তারা মনে করে, লাদাখকে নিয়ে ভারতের ঘোষণা এবং রাস্তা-পরিকাঠামো তৈরির সংযোগ রয়েছে। গালওয়ান দখলের সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হয় যাতে ভারতীয় সেনাকে আকসাই চিন এবং জিংঝিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে থেকে দূরে রাখা যায়।
আরও পড়ুন: ঘুরিয়ে তিব্বত তাস, চিনকে বার্তা ভারতের
পাশাপাশি, হিমাচলে তিব্বতের নির্বাসিত সরকার, দলাই লামা এবং ভারতে বসবাসকারী তিব্বতিদের নিয়ে চিনের আতঙ্ক রয়েছে। কূটনীতিকেরাও মনে করেন, ভারতও সুবিধামত তিব্বতি তাস খেলে থাকে চিনের বিরুদ্ধে। তবে শুধু তিব্বতই মাথাব্যথার কারণ নয়। উইঘুর মুসলমানদের দমন করছে চিনের সরকার— এই অভিযোগে সরব আমেরিকাও। আর বেজিং যখন গালওয়ান দখলের পরিকল্পনা করেছে, তখন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সখ্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও নজরে রেখেছে তারা। এই সব হিসেব থেকেই গালওয়ানের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করার পরিকল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy