প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষা কিংবা তার নম্বর নয়। পড়াশোনার বিকল্প নির্ঘণ্টে (অল্টার্নেটিভ অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার) পাখির চোখ হোক দক্ষতা তৈরির শিক্ষা। শুক্রবার এই মর্মে নিজেদের আওতায় থাকা সমস্ত স্কুলের জন্য নির্দেশিকা জারি করল সিবিএসই। বলা হয়েছে, শুধু বইয়ের পড়ায় আটকে না-থেকে হাতে-কলমে প্রোজেক্টের মাধ্যমে তাকে বোঝার উপরে গুরুত্ব দিতে হবে। টুইটে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কেরও দাবি, প্রতি দিনের এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরির উপরেই স্কুলের শিক্ষায় জোর দেবে সিবিএসই।
এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বহু শিক্ষা বিশারদ। মূলত কর্পোরেট দুনিয়ার জন্য, বিশেষ করে বিদেশি লগ্নি টানতেই সস্তায় দক্ষ কর্মীর জোগান নিশ্চিত করতে সরকার এই পথে হাঁটছে বলে তাঁদের অভিযোগ। অনেকের বক্তব্য, শুধু নম্বরকে নিশানা না-করে শেখার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া অবশ্যই স্বাগত। কিন্তু সার্বিক জ্ঞানের ভাণ্ডার তৈরির বদলে শুধু দক্ষতায় জোর দিলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কা।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন (এডুকেশন) তথা শিক্ষার অধিকারের সর্ব ভারতীয় ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিল সদগোপালের কথায়, “এটা বিরাট ভুল। দক্ষতা শিক্ষার অংশ হতে পারে, সবটুকু নয়। শিক্ষার লক্ষ্য জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে চিন্তার পরিপূর্ণ বিকাশ। চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, সহমর্মী, সংবেদনশীল ও নীতিবোধসম্পন্ন মন তৈরি করা।” অর্থনীতির অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়কেরও অভিযোগ, শিল্পের জন্য সস্তায় দক্ষ কর্মীর জোগান নিশ্চিত করতেই দক্ষতাকে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করছে সরকার। তাঁর মতে, কাজের বাজারে পা-রাখার আগে কিছু দক্ষতা অর্জন অবশ্যই জরুরি। কিন্তু পুরো শিক্ষাই তার জন্য নিবেদিত হওয়া অর্থহীন।
আরও পড়ুন: রাস্তায় হাঁটলে আদালত থামাবে কী ভাবে: সুপ্রিম কোর্ট
সদগোপালের প্রশ্ন, “পড়ুয়া জীবনের শেষ দিকে কাজের বাজারে পা-রাখার জন্য দক্ষতা অর্জনের কথা না-হয় বোঝা গেল। কিন্তু স্কুলের শিক্ষাকেও সেই ছাঁচে ঢালার অর্থ কী?” তাঁর মতে, শুধু দক্ষতায় শান দিলে, শিল্পগুলি সস্তায় দক্ষ কর্মী পেতে পারে, কিন্তু দেশ ভাল নাগরিক পাবে না। তাঁর উদাহরণ: বরোদায় ১৮-২০ বছরের এক তরুণ হয়তো আসবাব তৈরির কাজে অসম্ভব দক্ষ। কিন্তু অন্য বিষয়ে তেমন জ্ঞান না-থাকলে, গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময়ে উস্কানিমূলক কথা বলে তাঁর মন কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় সম্পর্কে বিষিয়ে দেওয়া তুলনায় সহজ। সেই তরুণই যদি দেশের সংবিধানের মূল বিষয়টি জানেন, পড়ে থাকেন দেশের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের সেনানিদের কয়েক জনের কথাও যদি তাঁর ঠিকঠাক জানা থাকে, তবে অত সহজে তাঁকে ভুল পথে চালিত করে সংঘর্ষে শামিল করা যাবে না।
আরও পড়ুন: বিদেশে আটকদের ফেরাতে তৈরি বঙ্গ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy