শ্রীনগরে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: পিটিআই।
শ্রীনগর আম্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে এ-দিক ও-দিক দেখছিলেন বশির আহমেদ খান। যদি কোনও বিমানযাত্রীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া যায় তাঁর চিঠির খামটি। বশির চিঠি লিখেছেন তাঁর দিল্লিবাসী বোনকে। কাশ্মীরে তাঁরা যে ভাল আছেন, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করে। কার্ফুর জেরে এ মাসের শুরু থেকেই স্তব্ধ ইন্টারনেট, টেলিফোন ও ডাক পরিষেবা। পরে সামান্য কিছু এলাকাতেই চালু হয়েছে ফোন। বিচ্ছিন্ন উপত্যকা থেকে তাই বাইরের আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে কুশল সংবাদ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা চিঠি। প্রিয়জনদের কাছে সেই চিঠি পৌঁছে দিচ্ছেন অচেনা-অজানা কিছু মানুষ।
চিঠিটা পড়তে দিতে আপত্তি করলেন না বশির। দেখলাম বোনকে তিনি লিখেছেন, ‘‘স্নেহের ইয়াসির আলি খান, আমরা কাশ্মীরে সবাই ভাল আছি। নানিকে হায়দারপোরায় নিয়ে এসেছি। তুমি চিন্তা কোরো না। নওগাম ও হায়দারপোরায় সবাই ভাল আছে। আমি বেমিনায় তোমার বাড়িতে ঘুরে এসেছি। ওখানে সব ঠিকঠাক আছে।’’ চিঠিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় টুকিটাকি কথাও। যেমন, ‘‘আমার টিভির ডিটিএইচ কানেকশনটা তুমি একটু রিচার্জ করে দিয়ো। এখানে ইন্টারনেট না-থাকায় আমি রিচার্জ করতে পারছি না। টিভি দেখা যাচ্ছে না। এখানে কোনও কোনও জায়গায় ল্যান্ডলাইন পরিষেবা চালু হয়েছে। আমাদের এলাকায় চালু হলে তোমরা আমাদের .... নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবে।’’
চাকরিসূত্রে চণ্ডীগড়ে থাকেন আদিল পাঠানের স্ত্রী। ইদে তাঁর বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফিরতে পারেননি আরও অনেকের মতোই। তাঁর কোনও খবরও পাননি বাড়ির লোকেরা। ‘‘আমরা চিন্তায় রয়েছি। জানি আমার স্ত্রীও আমাদের জন্য চিন্তা করছে। আমাদের ভাল থাকার খবর জানিয়ে আর ও কেমন আছে, তা জানতে চেয়ে চিঠি লেখা ছাড়া তো উপায় নেই,’’ উদ্বেগের সুর যুবকের গলায়। আদিলের ক্ষোভ, কাশ্মীর যেন এই কয়েক দিনে প্রস্তর যুগে ফিরে গিয়েছে! বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তাই ‘ইচ্ছুক’ কোনও যাত্রীর সন্ধানে রয়েছেন তিনি। যিনি হয় তাঁর স্ত্রীর ঠিকানায় চিঠিটি পাঠিয়ে দেবেন। অথবা সেটির ছবি তুলে স্ত্রীর ফোন নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করবেন।
গত ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা লোপ এবং রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় কার্ফু। মোবাইল, ল্যান্ডফোন, ডাক, ইন্টারনেট-সহ যোগাযোগের যাবতীয় মাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়। বাইরে থাকা প্রিয়জনেদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শ্রীনগরে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে তৈরি হয়েছে টেলিফোন বুথ। কিন্তু সেখানে নিত্য লম্বা লাইন। তাই চিঠির খাম হাতে বিমানবন্দরের বাইরে এসে দাঁড়াচ্ছেন বশির, আদিলের মতো অনেকে। কেউ স্ত্রী, কেউ ভাই-বোন কেউ বা বন্ধুদের চিঠি পাঠাচ্ছেন বিমানযাত্রীদের হাতে-হাতেই।
স্তব্ধ উপত্যকায় তাঁরাই এখন ‘ডাক হরকরা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy