Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রামমন্দিরের ‘চাবি’ নিয়ে লুকোনো যাচ্ছে না ঝগড়া

অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি সমান তিন ভাগে রামলালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং নির্মোহী আখড়াকে দেওয়ার রায় দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share: Save:

ভক্তি-সাগরে নৌকা ভাসতে পারে, তাই বলে মালিকানার অঙ্ক জলাঞ্জলি দেওয়া যায় নাকি?

অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি সমান তিন ভাগে রামলালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং নির্মোহী আখড়াকে দেওয়ার রায় দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ওই পুরো জমিতেই রামলালা বিরাজমানের মন্দির তৈরির দায়িত্ব নিক কেন্দ্রের গঠিত ট্রাস্ট। সু্ন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে দিতে বলা হয়েছে অযোধ্যাতেই বিকল্প পাঁচ একর। আর জমি জোটেনি নির্মোহী আখড়ার। রবিবার অযোধ্যায় দিনভর চক্কর কেটে মনে হল, রাম মন্দির নিয়ে প্রাথমিক উচ্ছ্বাস কিছুটা হাল্কা হওয়ার পরে এ বার হিসেবের খাতা টেনে বসেছে গেরুয়া শিবির। বিভিন্ন মঠ, আখড়া, মন্দিরে আলোচনা, কে কে থাকবেন সরকারের তৈরি ওই ট্রাস্টে? কার হাতে থাকবে রাম মন্দিরের ‘চাবি’? কে তুলবেন মন্দির গড়ার টাকা? পরে তা থাকবে কার জিম্মায়? সামান্য খোঁচাতেই বেরিয়ে আসছে চোরা টেনশন। সমস্ত হিন্দুকে এক ছাতার তলায় আনার ডাক দিয়েও নিজেদের ঝগড়া লুকোতে পারছেন না তাঁরা।

১৯৪৯ সালে বিতর্কিত জমিতে মূর্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে করসেবা—রাম মন্দির আন্দোলনে আগাগোড়া জড়িয়ে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি রাম মন্দির ন্যাস মনে করছে, রামলালাকে দেওয়ার অর্থ— জমি আর তাতে মন্দির তৈরি ও পরিচালনার দায়িত্ব তাদেরই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, এই জমির অধিকার চেয়ে মামলাও তো পরিষদের করা। ন্যাসের প্রধান নিত্য গোপাল দাসের দাবি, “মন্দির ন্যাসই তৈরি করুক। তা পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হোক তাদের। নির্মোহী আখড়াকে শামিল করার প্রশ্নই নেই। সরকার শুধু পাশে থাকুক। গড়ুক পরিকাঠামো।”

আরও পড়ুন: গোলাপি বেলেপাথর, চন্দনকাঠের দরজা... কেমন দেখতে হতে পারে প্রস্তাবিত রামমন্দির? দেখে নিন

তিনি বলছিলেন, মন্দির গড়বেন ধরে নিয়েই তো ওই জমির কাছেই সেই ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রাজস্থানি পাথরে মন্দিরের প্রায় ৭০% কাজ সেরে রেখেছেন তাঁরা। তৈরি থাম। ‘শ্রী রাম’ লেখা ইটও রাখা রয়েছে থরে থরে। শুধু মন্দির তৈরির অপেক্ষা।

মন্দির-পরিকল্পনা (বিশ্ব হিন্দু পরিষদের) • দৈর্ঘ্য: ২৬৮ ফুট • প্রস্থ: ১৪০ ফুট • উচ্চতা: ১২৮ ফুট • দ্বিতল মন্দিরে ২১২টি থাম • এক তলায় রামলালার মূর্তি। সব থেকে উঁচু চূড়া গর্ভগৃহের মাথায় • দোতলায় রাম দরবারে রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তি • পুরোটাই রাজস্থানের পাথরের। মূল নকশা ওই রাজ্যের বিজয় ডুডির • পুরোটাই সাদা মার্বল আর লাল পাথরের • ৫১,০০০ আলো, দরজা ৪

কিন্তু সরকার যদি অন্য নকশায় মন্দির গড়ার কথা ভাবে? যদি গোড়া থেকে তৈরি শুরু হয় সব? উত্তর এল, “বললেই হল! ঠিক করে রাখা নকশাতেই মন্দির হবে। নিতে হবে ওই ইট, থামই।”

আরও পড়ুন: অযোধ্যা রায় নিয়ে মমতা চুপ, কিন্তু বিজেপি কি অঘোষিত উদযাপনে?

নির্মোহী আখড়ার প্রধান মহন্ত দীনেন্দ্র দাসের পাল্টা দাবি, “স্বপ্নেও ন্যাসের সঙ্গে হাত মেলাব না। তা হলে প্রতি পদে আপস করতে হবে অন্যায়ের সঙ্গে। তবে সরকার যদি সম্মানের সঙ্গে ট্রাস্টে ডাকে, তবে তা ভেবে দেখব।” পাশে বসা সঙ্গীরা মনে করিয়ে দিলেন, রাম মন্দিরের জন্য তহবিলের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল পরিষদের বিরুদ্ধে। মহন্ত শুধু বললেন, “লক্ষ্মী নয়, আমরা রাম পূজায় বিশ্বাসী।” ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত তাঁরাই যে পূজা করতেন, তা মনে করাচ্ছেন দীনেন্দ্র। তাঁর অভিযোগ, “মন্দির-মসজিদ বিতর্ক রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য করেছে পরিষদই।”

করসেবক পুরমে মন্দিরের মডেলের সামনে দাঁড়িয়ে, বাবরি মসজিদ ভাঙার দায়ে জেল খাটা হাজারিলাল বলছিলেন, ট্রাস্টে থাকুন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও। গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের মতো। যাতে সব কিছুর উপরে কড়া নজরদারি থাকে।

সঙ্ঘ সূত্রে শোনা যাচ্ছে, মন্দির তৈরির পর্যাপ্ত টাকা এই মুহূর্তে নেই। পরিষদ চায় সরকারের ভাঁড়ার থেকে নেওয়ার বদলে তা আসুক ভক্তদের চাঁদার মাধ্যমে। এ দিন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের দাবি, ধর্মীয় বিষয়ে সরকারের মাথা গলানো ঠিক নয়। মন্দির হোক চাঁদার টাকায়। শোনা যাচ্ছে, মন্দির চত্বরের পরিকাঠামো গড়তে ৫০০ কোটি টাকা তুলে রেখেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তার উপর দেশে-বিদেশে এত ভক্ত। মন্দিরের কোষাগার ফুলেফেঁপে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা। এর আগে প্রস্তাবিত মন্দিরের জন্য তহবিল নিয়েই তো কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছিল!

‘স্বদেশ’ ছবির গানটা মনে পড়ল, “মন সে রাবণ যো নিকালে রাম উসকে মন মে হ্যায়।” কেউ শুনছেন!

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Case Babri Msjid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy