গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শনিবার ছুটির দিনেই রায় ঘোষণা হতে চলেছে অযোধ্যা মামলার। গোটা দেশকে চমকে দিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় আচমকা সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করল, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের বর্তমান রাজনীতিতে সব থেকে স্পর্শকাতর মামলাটির রায় ঘোষণা করবে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব রাজেন্দ্রকুমার তিওয়ারি ও পুলিশের ডিজি ওমপ্রকাশ সিংহকে শুক্রবার দুপুরে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। অযোধ্যা-সহ রাজ্যের নিরাপত্তার আগাম কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তার কথা হয়। তখনও স্পষ্ট ছিল না, কবে অযোধ্যা মামলার রায়।
রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কিত জমি মামলার রায়ের জন্য অযোধ্যা ইতিমধ্যেই দুর্গের চেহারা নিয়েছে। কেন্দ্র আগেই চার হাজার আধাসেনা পাঠিয়েছে। ৭৮টি রেল স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কাল উত্তরপ্রদেশের সব স্কুল-কলেজও বন্ধ রাখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৃহস্পতিবারই প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রশাসন এবং পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন। লখনউ এবং অযোধ্যায় দু’টি হেলিকপ্টার মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত হয়। গোটা উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে শুক্রবার রাত থেকেই। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, অযোধ্যায় রায় নিয়ে কোনও অগোছাল মন্তব্য করা চলবে না।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলা: রায় দিচ্ছেন যে পাঁচ বিচারপতি
আরও পড়ুন: অনর্থ হো জায়েগা, বলল বান্টি
অযোধ্যা মামলা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে অন্য রাজ্যেও। কলকাতার পুলিশ কমিশনার সব থানার ওসি-কে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ পাঠিয়েছেন। উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মুর স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ রাখা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি-সহ অযোধ্যা বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতির জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে শনিবারই যে রায় ঘোষণা হবে, তা কেউ ভাবেননি। প্রধান বিচারপতি গগৈ অবসর নেবেন ১৭ তারিখে। আগামী সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ছুটি। ফলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, বুধ থেকে শুক্রবারের মধ্যে কোনও দিন রায় ঘোষণা হবে। কারণ ওই তিনটিই কাজের দিন বাকি ছিল। শনিবার সুপ্রিম কোর্টে ছুটির দিনে এমন রায় ঘোষণা প্রায় নজিরবিহীন। আচমকা শনিবার রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত আসলে অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা করার আগেই তা রোখার চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
রামমন্দির নির্মাণ বিজেপির ইস্তাহারে থাকলেও মোদী সরকারের অবস্থান ছিল, আদালতই শেষ কথা বলবে। কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলিও আদালতের রায়ে আস্থা রাখার কথা বলেছে। ৬ অগস্ট থেকে টানা ৪০ দিন ধরে অযোধ্যা মামলার শুনানির পরে ১৬ অক্টোবর রায় সংরক্ষিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৭৩ সালের কেশবানন্দ ভারতীর মামলার পরে আর কোনও মামলায় এত দীর্ঘদিন সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি হয়নি।
অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমি আইনি লড়াইয়ের সূত্রপাত ১৯৫০-এ। রামলালার ভক্ত গোপাল সিংহ বিশারদ বাবরি মসজিদকেই রামের জন্মভূমি দাবি করে সেখানে পুজোর অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। তার আগেই বাবরি মসজিদে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরমহংস রামচন্দ্র দাস ওখানেই পুজোর দাবি করে মামলা করেন। ১৯৬১-তে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জমির অধিকার চেয়ে আদালতে যায়। ‘রামলালা বিরাজমান’ নিজেও মামলার পক্ষ হয়ে ওঠেন। দেবতার হয়ে তাঁর ‘সখা’, ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবকীনন্দন আগরওয়ালের প্রধান দাবি, রামের জন্মভূমিই দেবতার চরিত্র পেয়েছে। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে সব মামলাই ইলাহাবাদ হাইকোর্টে চলে আসে। ২০১০-এ ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেওয়া হোক। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। রামলালা বিরাজমানের আইনজীবীরা দাবি করেন, রামের জন্মভূমি দেবতা-স্বরূপ। তার ভাগ হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy