Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
অন্তরের কথা

’৯২ যেন না-ফেরে, আতঙ্কে আছে অযোধ্যা

অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলায় আজ রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। এই সন্ধিক্ষণে কী ভাবছেন উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘুরা?অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলায় আজ রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। এই সন্ধিক্ষণে কী ভাবছেন উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘুরা?

ইকবাল আনসারি। নিজস্ব চিত্র

ইকবাল আনসারি। নিজস্ব চিত্র

অগ্নি রায়
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share: Save:

দুটো বাঘা সাইজের কুকুর প্রথমে এসে শুঁকে দেখে নিল গন্ধটা সন্দেহজনক কিনা! তার পর দুই মেশিনগানধারী, কলম আর জাবদা খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, নাম-ঠিকানা-ঠিকুজি সব লিখে দিতে। ফোনে ছবি তুলে নেওয়া হল প্রেস কার্ডেরও।

স্থান, অযোধ্যার গ্রাউন্ড জিরো থেকে কিলোমিটার-খানেক দূরে একটি বিবর্ণ বাড়ির বেসমেন্ট। পুলিশ পরিবৃত হয়ে পাথরের মতো মুখ করে চেয়ারে বসে রয়েছেন অযোধ্যা মামলায় মুসলিম পক্ষের অন্যতম আইনজীবী হাজি মেহবুব। যিনি মাসখানেক আগেই বিতর্কিত জমিতে নমাজ পড়ার অধিকার চেয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলেন। আজ শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘‘আদালতের রায় আসার পরে কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে এখন এখানে প্রশাসন খুবই কড়া হাতে সামলাচ্ছে। আশ্বাস দিয়েছে, কোনও অশান্তি হতে দেবে না।’’

মেহবুবের বাড়ি থেকে অল্প দূরেই ইকবাল আনসারির আস্তানা। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে বিতর্কিত জমিতে রামলালার মূর্তি স্থাপনের পরে ফৈজাবাদ কাছারিতে বাবরি মসজিদের তরফে যিনি প্রথম মামলা দায়ের করেছিলেন, সেই হাসিম আনসারির ছেলে এই ইকবাল। ২০১৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পরে বাবরি মসজিদ মামলায় বাদী হয়েছেন। তাঁর বাড়ির উল্টো দিকেও বড় তাঁবু উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। তাঁদের কাছে জবাবদিহি করেও ইকবালের বাড়িতে ঢোকার অনুমতি মিলল না। ইকবালকেই ডেকে আনা হল তাঁবুতে। মাঝ পথে কিছুটা শিখিয়ে পড়িয়েও নেওয়া হল সম্ভবত।

আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলার রায় আজ

ইকবাল বললেন, ‘‘অযোধ্যায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও বিবাদ ছিল না। এখনও নেই। গত কাল অযোধ্যা-ফৈজাবাদ জুড়ে পাঁচটা শাদি ছিল। এখানকার এইচ বি সিংহ মহাবিদ্যালয়ের হিন্দু প্রিন্সিপাল গিয়েছিলেন বেশ কয়েকটা বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। আসলে সমস্যা তৈরি করেন রাজনৈতিক নেতারা।’’ তাঁরা কোন দলের তা স্পষ্ট না-করলেও বন্দুকের সামনে বসে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইকবাল দাবি করলেন, ‘বাইরের লোক’রা এসেই বার বার উত্তেজনা ছড়ায় এখানে। ‘‘বিজেপি আসার পরে বরং বিলকুল শান্তি। দাঙ্গা-হাঙ্গামা তো অন্তত নেই।’’ অবশ্য সেই সঙ্গে গলা নামিয়ে এটাও বলছেন, ‘‘সাড়ে চারশো বছরের পুরনো মসজিদ ছিল এখানে। ১৯৪৯-এর ২৪ ডিসেম্বর রাত বারোটার সময় রামের মূর্তি বসিয়ে দেওয়া হল। আরে তাতেই কি সব বদলে যায়!’’ তবে ইকবালের সুরেই সুপ্রিম কোর্টের রায়, বিনা প্রতিবাদে মেনে নেওয়া কথা জানাচ্ছে অযোধ্যার সংখ্যালঘু সমাজ।

ফৈজাবাদ সীমানা পেরিয়ে অযোধ্যার স্বাগত তোরণ ছাড়ানোর পরেই মনে হচ্ছে, দেবস্থান নয়, কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে চলে এলাম বুঝি। পুলিশ নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করাতেই দিচ্ছে না। কৌতূহলী চোখে এ দিক ও দিক তাকালে এগিয়ে এসে পরিচয় জানতে চাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা, হিন্দি লেখক এবং অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আফজল হুসেন বললেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, রায় কী হল না হল, তা নিয়ে এখানে যে বিরাট মাথাব্যথা রয়েছে এমনটা নয়। সবাই আতঙ্কিত এটাই ভেবেই যে ১৯৯২ যেন আবার ফিরে না আসে।’’ আর সাইকেল ব্যবসায়ী জামালভাই বললেন, ‘‘গত এক বছর ধরে আমাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। দেনার দায়ে দোকান বিকোনোর দশা। জিএসটির পরে লোকে এমনিতেই খরচ করতে চায় না। তার উপর গত এক মাস এই রায় নিয়ে এমনই থমথমে হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা, যে ব্যবসা গোল্লায়। অযোধ্যাকে ঘিরে আশপাশের শহরগুলিতে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে কেউ ধারে মাল দিতে চাইছে না আমাদের।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Case Babri Masjid Ram Janmabhoomi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy