দুর্ঘটনার পর রেললাইনের উপর ছড়িয়ে রয়েছে শুকনো রুটি, চটি এবং জামাকাপড়। ছবি: পিটিআই।
রাতভর হাঁটার পর পা ভারী হয়ে আসছিল ক্রমশ। ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরটা আর এগোচ্ছিল না। উপায় না দেখে তাই লাইনের উপরই বসে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, লকডাউনের সময়ট্রেন তো চলছে না।তাই লাইনের উপর বসে খানিক জিরিয়ে নিয়ে ফের রওনা দেবেন। কিন্তু পুঁটলিতে রাখা শুকনো রুটি মুখে পুরতেই বন্ধ হয়ে এসেছিল দু’চোখ। এলিয়ে পড়েছিলেন সকলে।
কিন্তু ক্লান্তির জেরে মালগাড়ির শব্দ যে তাঁদের কানে পৌঁছবে না, একেবারে চিরঘুমে চলে যেতে হবে, তা বুঝে উঠতে পারেননি কেউই। মরতে মরতে যে ক’জন প্রাণে বেঁচেছেন, ধাতস্থ হতে পারছেন না তাঁরাও। রেললাইনের উপর রক্তভেজা ছেঁড়া কাপড়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা দেহাংশ বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তাঁদের।এঁদের মধ্যে কেউ এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদের সিনিয়র পুলিশ অফিসার মোক্ষদা পাটিল।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রদেশের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দল। মহারাষ্ট্রের জলনা থেকে ১৫৭ কিলোমিটার (প্রায় ৯৮ মাইল) পেরিয়ে এ দিন ভোরে ভুসাবল পৌঁছন তাঁরা।
আরও পড়ুন: কেন্দ্র নগদ না জোগালে বেকারত্বের সুনামি আসছে দেশে: রাহুল
দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়েন তাঁরা। তাই ভুসাবলে বদনাপুর এবং কর্মাড স্টেশনের মাঝে রেললাইনের উপর খানিক ক্ষণ জিরিয়ে নেবেন বলে ঠিক করেন। লকডাউনে ট্রেন চলাচল যেহেতু বন্ধ, তাই নিশ্চিন্তে লাইনের উপরই ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। সেই অবস্থাতেই ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ তাঁদের উপর দিয়ে চলে একটি মালগাড়ি। মালগাড়ির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে কোনওরকমে লাইন থেকে সরে যেতে সক্ষম হন পাঁচ জন।
তাঁদের মধ্যে এক জন আবার লাইন থেকে সরে যাওয়ার সময় মালগাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হন। কিন্তু বাকি ১৫ জনই মালগাড়িতে কাটা পড়েন। তবে তাঁদের মধ্যে কোনও শিশু ছিল না। চেষ্টা সত্ত্বেও মালগাড়ির চালক সময় মতো ট্রেন থামাতে পারেননি বলে রেলমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে। টুইটারে বলা হয়, ‘‘বদনাপুর এবং কর্মাড স্টেশনের মাঝে রেল লাইনে শ্রমিকদের দেখে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেছিলেন মালগাড়ির চালক। কিন্তু ট্রেন থামাতে পারেননি তিনি। দুর্ঘটনার পর আহতদের অওরঙ্গাবাদ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
ঘটনার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে লাইনের উপর পড়ে রয়েছে শুকনো রুটি। ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে তাপ্পি দেওয়া হাওয়াই চটি। তারই মধ্যে ছিন্নভিন্ন দেহগুলি পড়ে রয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বহু মানুষ। শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও. টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদে ট্রেন দুর্ঘটনায় যে প্রাণহানি ঘটেছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন উনি। সবরকম প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: খাঁ খাঁ আউটডোর, সুনসান চেম্বারও, বেনজির সঙ্কটে বহু চিকিৎসক
অওরঙ্গাবাদের ঘটনায় টুইটারে শোক প্রকাশ করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীও। তিনি লেখেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিক ভাই-বোনেদের মালগাড়ির নীচে চাপা পড়ার ঘটনায় আমি স্তব্ধ। দেশের নির্মাণকারীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তাতে লজ্জা হওয়া উচিত। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। দুর্ঘটনায় যাঁরা জখম হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’
গোটা ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও। মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন তিনি। আহতদের চিকিৎসায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, তা নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
লকডাউনের জেরে উদ্ভুত বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে ইতিমধ্যেই ‘শ্রমিক’ স্পেশ্যাল ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছে একাধিক রাজ্য। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার জন্য এখনও হেঁটে বাড়ি ফেরাই রাস্তাই ধরছেন অনেকে। দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো শহর থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের এ ভাবে হেঁটে বাড়ি ফেরা নিয়ে এর আগে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি উঠেছে। তার মধ্যেই এই ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy