Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Madhya Pradesh Jyotiraditya Scindia

অমিতের চালেই জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে! জল্পনা রাজনৈতিক মহলে

২০১৮-য় মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কংগ্রেসে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য।

শাহের চালেই বিজেপিতে জ্যোতিরাদিত্য! ছবি: পিটিআই।

শাহের চালেই বিজেপিতে জ্যোতিরাদিত্য! ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ১৫:৩৪
Share: Save:

মধ্যপ্রদেশে কমলনাথের সরকারকে রাতারাতি খাদের কিনারায় এনে ফেলার ছক শুরু হয়েছিল নিঃশব্দেই। এতটা নিভৃতে যে, রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারাও তা টের পাননি। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে বিজেপি শিবিরে আনার কৌশল রচনার পিছনেও শোনা যাচ্ছে অমিত শাহের নাম। দলীয় নেতাদের বিদ্রোহে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ সরকার যখন পতনের মুখে, ঠিক সেইসময় রাজনীতির অলিন্দে এমন জল্পনাই ঘোরাফেরা করছে।

তবে মধ্যপ্রদেশে ফের পদ্ম ফোটানোর এই পরিকল্পনা রাতারাতি তৈরি হয়নি। বরং অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েক মাস ধরেই এর প্রস্তুতি চলছিল বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। বলা হচ্ছে, অজিত পওয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়েও শেষমেশ মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হয় বিজেপির। তাই এ বার শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জ্যোতিরাদিত্যের সঙ্গে সমঝোতা পাকা না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যস্তরের নেতাদেরও এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ ঘিরে ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই কোণঠাসা অবস্থা জ্যোতিরাদিত্যের। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কমলনাথ এবং দিগ্বিজয় সিংহের মতো প্রবীণ নেতাদের দাপটে ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার করা তো হয়নি তাঁকে, উল্টে কমলনাথের কলকাঠিতে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও হওয়া হয়নি তাঁর। এমনকি রাজ্যসভার সাংসদ করেও পাঠানো হয়নি। তাতেই দলের সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল জ্যোতিরাদিত্যের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে আচমকাই নিজের ‘কংগ্রেসি’ পরিচয় ছেড়ে বেরিয়ে আসেন জ্যোতিরাদিত্য। রাতারাতি পাল্টে ফেলেছিলেন নিজের টুইটার বায়োও। ইউপিএ আমলের প্রাক্তন মন্ত্রীর বদলে, ‘জনসেবক’ এবং ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেন তিনি। সেই সময়ে তাঁর বিজেপির দিকে ঝোঁকা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যদিও তখন নিজেই তা উড়িয়ে দেন জ্যোতিরাদিত্য। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার দাবি, কংগ্রেসে জ্যোতিরাদিত্য কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বুঝতে পেরে তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন অমিত শাহ। তাঁকে বোঝানো হয়, দিগ্বিজয় সিংহ এবং কমলনাথের মতো নেতারা থাকাকালীন কংগ্রেসে তাঁর কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

আরও পড়ুন: ১০ জনপথের বিরুদ্ধে সিন্ধিয়া বিদ্রোহ, পড়ছে কমলনাথ সরকার​

আরও পড়ুন: করোনা, তেলের জোড়া ধাক্কায় এশিয়ার সবচেয়ে ধনীর শিরোপা খোয়ালেন মুকেশ অম্বানী​

সেই থেকে গত পাঁচ মাস ধরে দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল বলে জানা গিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, জ্যোতিরাদিত্যের মতো যুবনেতাকে পাশে পেতে তাঁর যাবতীয় দাবি-দাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছিলেন অমিত শাহ। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে আলোচনার পর সম্প্রতি কথাবার্তা চূড়ান্ত হয় দু’পক্ষের মধ্যে, যার পর অমিত শাহের অঙ্গুলিহেলনেই সোমবার ৬ মন্ত্রী-সহ জ্যোতিরাদিত্য ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রদেশের ১৬ বিধায়ককে বেঙ্গালুরু উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর ওই দিন রাতেই দিল্লিতে অমিত শাহের বাসভবনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের জরুরি বৈঠক বসে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র সিংহ, নরেন্দ্র তোমর, বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও হাজির ছিলেন ওই বৈঠকে। সেখানেই জ্যোতিরাদিত্যের সঙ্গে সমঝোতা পাকা হওয়ার কথা সকলকে জানান শাহ। জ্যোতিরাদিত্য ঘনিষ্ঠদের নিয়ে মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়ার দাবি জানানো নিয়েও সবিস্তার আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।

এর পর মঙ্গলবার সকালে অমিত শাহের সঙ্গে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সেখান থেকে বেরিয়েই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন তিনি। ইস্তফা জমা দেন বিদ্রোহী বিধায়করাও। দুপুরে তাঁদের দলে স্বাগত জানান শিবরাজ সিংহ চৌহান। বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়ার ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে এ দিন সন্ধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা জ্যোতিরাদিত্যেরও। যদিও এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোথাও মুখ খোলেননি তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE