কেরল ও মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত আল কায়দা জঙ্গিরা। নিজস্ব চিত্র।
এ রাজ্যে বসেই চলছিল নয়াদিল্লিতে বড়সড় নাশকতার ছক। তার আগেই মুর্শিদাবাদ থেকে আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। একই সঙ্গে কেরল থেকেও গ্রেফতার হয়েছে সংগঠনের আরও তিন জন। অর্থাৎ, মোট ৯ জনের ওই মডিউল নাশকতার ছক কষেছিল রাজধানীতে। শনিবারের ভোরের অভিযানের পর এনআইএ গোয়েন্দাদের তেমনই দাবি। শুক্রবার গভীর রাত থেকেই মুর্শিদাবাদের ডোমকল, জলঙ্গি এবং জঙ্গিপুরের ১১টি জায়গায় তল্লাশি চালায় এনআইএ। সামশেরগঞ্জ এবং মালদহে এখনও তল্লাশি অভিযান জারি বলে এনআইএ সূত্রে খবর।
এনআইএ সূত্রে খবর, ধৃত ৬ জনকে এদিন দুপুরেই কলকাতার বিশেষ এনআইএ আদালতে পেশ করা হবে।
এনআইএ সূত্রে খবর, ধৃত নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মইনুল মণ্ডল, লিউ ইয়ান আহমেদ, আল মামুন কামাল এবং আতিউর রহমানরা ডোমকল এবং জলঙ্গির বাসিন্দা। এদের মধ্যে চারজনের বাড়ি ডোমকলে এবং বাকি দু’জন জলঙ্গির। গোয়েন্দাদের দাবি, এরা প্রত্যেকেই আল কায়দার ভারতীয় শাখার সক্রিয় সদস্য। অন্যদিকে, একই সঙ্গে এনআইএ অভিযান চালায় কেরলের এর্নাকুলামে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস ও মোশারফ হোসেনকে।
কেরল থেকে গ্রেফতার তিন জনও মুর্শিদাবাদ থেকে সে রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক। এর্নাকুলাম থেকে ধৃত মোশারফ হোসেনের বাড়ি জলঙ্গির ঘোষ পাড়ায়। সেখানেই আতিউর রহমানের বাড়ি। ইয়াকুব বিশ্বাসের বাড়ি মধুবোনা গ্রামে যেখানে মইনুল মণ্ডল থাকত। মুর্শিদ হাসানের বাড়ি রানিনগর থানা এলাকায়। মুর্শিদাবাদ থেকে এ দিন যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের এ দিন এনআইএ আদালতে পেশ করা হয়। তাঁদের চার দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এনআইএ-র গোয়েন্দারা ধৃতদের দিল্লি নিয়ে যাবেন।
ধৃতদের মধ্যে রয়েছে মামুন কামাল এবং মইনুল মণ্ডল। তারা দু’জনেই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। ধৃত এই দু’জনের পরিবারের দাবি, কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত মামুন ও মইনুল। মইনুলের বাবা ও স্ত্রী জানিয়েছেন, শনিবার সকালে পুলিশ এসে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। লকডাউনের কারণে কেরল থেকে বাড়িতে ফিরেছিল মইনুল। তবে ছেলেকে কী কারণে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সে বিষয়ে তাঁরা জানেন না, এমনটাই দাবি করেছেন মইনুলের বাবা ও স্ত্রী।
অন্য দিকে, একই দাবি মামুন কামালের পরিবারের সদস্যদের। মামুনের স্ত্রী বলেন, “কেরলে কাজ করত তাঁর স্বামী। গ্রামে ফিরে ছোটখাটো কাজ শুরু করে লকডাউনের পরে। কেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করল এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।”
এনআইএ-র গোয়েন্দাদের দাবি, কেরল থেকেও যাদের পাকড়াও করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও দু’জন আবার এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদেরই বাসিন্দা। গোটা নেটওয়ার্ক চলছিল মুর্শিদাবাদ থেকেই। ধৃতদের কাছ থেকে জিহাদি বইপত্র থেকে শুরু করে বিস্ফোরক, ধারাল অস্ত্র, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), বডি আর্মার অর্থাৎ ঢালের মতো জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আরও দাবি, আল কায়দার এই ভারতীয় শাখা ‘কায়দাতুল জিহাদ’ বা 'আল কায়দা ইন সাব কন্টিনেন্ট' দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানে বসে তাদের সংগঠনের বিস্তার ঘটাচ্ছে। পাকিস্তান থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা সদস্য সংগ্রহ করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এই মডিউলটির পরিকল্পনা ছিল দিল্লির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা।
এনআইএ গোয়েন্দাদের একটি অংশ ইঙ্গিত দিয়েছে, রাজ্যে সক্রিয় জামাতুল মুজাহিদিনের সালাউদ্দিন-পন্থী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই আল কায়দাকে এ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে সহযোগিতা করছে। তাদের সন্দেহ, এই মডিউলের সঙ্গে জামাতেরও সরাসরি যোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের দাবি, এই মডিউলটি একটি ‘লোন উল্ফ’ মডিউল। অর্থাৎ অনলাইনে আল-কায়েদা নেতাদের সংস্পর্শে এসে সরাসরি সংগঠন থেকে কোনও সাহায্য না নিয়ে মতাদর্শগত ভাবে তৈরি একটি মডিউল।
বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেরল, কর্ণাটক-সহ দেশের ৯টি রাজ্যে সংগঠন তৈরি করছে আইএস। তার মধ্যে এ রাজ্যের নামও ছিল। তবে তার আগে জুলাই মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে জানানো হয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কী ভাবে জিহাদের শিকড় ছড়াচ্ছে আল কায়দা এবং আইএসের মতো সংগঠনগুলি। গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে বাংলায় লেখা প্রচুর জিহাদি নথি পৌঁছেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছিল, আল কায়দার মতো সংগঠন অনেকটাই জমি তৈরি করেছে এ রাজ্যে।
আরও পড়ুন: নিজেরাই ভাড়া ঠিক করবে বেসরকারি রেল
আরও পড়ুন: মোদী-ডোভালের তথ্য বেহাত, সন্দেহ চিনা সংস্থাকে ঘিরে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy