নাজেহাল স্কুলপড়ুয়ারাও। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
ঘর থেকে বেরোলেই জ্বলছে চোখ, মুখ খুললে গলা। বেশি ক্ষণ বাইরে থাকলে শুরু হচ্ছে প্রবল কাশি, সঙ্গে বাড়তি উপসর্গ হিসেবে গলা বসে যাচ্ছে। প্রতি বারের মতো এ বারও বেশ কিছু দিন আগে থেকেই দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ নানা ভাবে সক্রিয় হলেও লাভের লাভ যে কিছু হয়নি, তা স্পষ্ট দিল্লির দূষণচিত্র থেকেই।
ফি-বছরের মতো এ বারেও বাতাসে ঠান্ডার আমেজ আসতে না আসতেই দূষণের চাদর ঢেকে দিয়েছে গোটা রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত পাঁচ দিন ধোঁয়াশায় মোড়া আকাশের ফাঁক দিয়ে দেখা মেলেনি সূর্যের। ক’দিন ধরে লাগাতার দূষণের কবলে ঢেকে থাকা দিল্লি আজ দুপুরে এমন একটি পরিস্থিতিতে পৌঁছয় যে, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ। আজ দুপুরে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার বায়ুর গুণগত মানের সূচক দাঁড়ায় ৪৮০-তে। যা মানবদেহের পক্ষে ‘ভীষণ ক্ষতিকর’ বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতি সপ্তাহান্তের ছুটিতে দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত বনাম বাংলাদেশ টি-২০ ম্যাচ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর টুইটারে এই ম্যাচ নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। তবে বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে দু’দলের ক্রিকেটারেরাই দিল্লিতে খেলার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলির এক সপ্তাহ আগে থাকতেই হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে ফসলের নাড়া (গোড়া) পোড়ানো প্রবল ভাবে বেড়ে গিয়েছিল। দিল্লি দূষণের অন্যতম কারণ এই নাড়া পোড়ানো। এ নিয়ে বহু বার প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে বলা হলেও তা বন্ধ করা যায়নি। তখনই পরিস্থিতি খারাপ হতে চলেছে বলে সাবধান করেছিলেন পরিবেশবিদেরা। রাজ্যগুলি থেকে ভেসে আসা দূষণের চাদর ক’দিন ধরে জমা হচ্ছিল দিল্লির আকাশের উপরে। এর মধ্যেই দীপাবলিতে বাজি থেকে হওয়া দূষণ আরও ঘোরালো করে তোলে পরিস্থিতি। এ দিনই একটি সংস্থা জানিয়েছে, পঞ্জাব ও হরিয়ানায় নাড়া পোড়ানো থেকে দিল্লির দূষণের পরিমাণ এ বছর ৪৬ শতাংশ বেড়েছে।
নাসার উপগ্রহে ধরা পড়েছে উত্তর ভারতে নাড়া পোড়ানোর ছবি। ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার আকাশ।
আজ খোলা থাকলেও, বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কণার পরিমাণ বিপুল পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির সমস্ত স্কুল ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ওই সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্ত কাজও। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ট্রাকের দিল্লি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। একমাত্র জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়িগুলিকে রাজধানী সংলগ্ন এলাকায় ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ছট পুজোয় বাজি না ফাটানোর জন্য অনুরোধ করেছে অরবিন্দ কেজরীবালের প্রশাসন। পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) সংস্থার চেয়ারম্যান ভুরে লাল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অত্যন্ত ঘোরালো। আমি সংলগ্ন সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে নাড়া পোড়ানো বন্ধে নজরদারি বাড়াতে বলেছি। এই সময়ে বাইরে ব্যায়াম, প্রাতর্ভ্রমণ আপাতত কিছু দিন বন্ধ রাখা উচিত।’’
এমন পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচার উপায় কী? পরিবেশবিদেরা বলছেন, প্রবল পশ্চিমী হাওয়া অথবা ভাল রকম বৃষ্টি ছাড়া এই দূষণের চাদর সরবে না।
নাড়া পোড়ানো এবং দিল্লির দূষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত প্যানেলের রিপোর্টের ব্যাপারে শুনানির বিষয়টি সোমবার, ৪ নভেম্বর বিবেচনা করবে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। তার মধ্যেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলেও তা নিয়ে রাজনীতি অব্যাহত রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে দূষণরোধী মাস্ক পরে, তা নিশ্চিত করতে আজ একাধিক স্কুলে মাস্ক বিতরণ করতে যান কেজরীবাল। সেখানে দিল্লির দূষণের যাবতীয় দায় পঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর উপরে চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘‘হরিয়ানার খট্টর ও পঞ্জাবের ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র দু’জনে নিজেদের রাজ্যে চাষিদের বাধ্য করছেন ফসলের গোড়া পোড়াতে। যাতে দিল্লিবাসী দূষণের শিকার হয়।’’ স্কুলের পড়ুয়াদের তিনি পরামর্শ দেন, তারা যেন ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে অনুরোধ জানায়। জবাবে মুখ খুলে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘অহেতুক অন্যের দিকে আঙুল না তুলে কেজরীবাল বরং নিজে দূষণ কমাতে এগিয়ে আসুন। এটি সারা বছরের কাজ। দূষণের মরসুমের আগে কাজে হাত দিলে কোনও লাভই হবে না।’’ দিল্লির দূষণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy