শ্রীনগর-সহ গোটা জম্মু-কাশ্মীরেই বুধবার ছিল এমন নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ছবি: পিটিআই
রামমন্দিরের ভূমিপূজার আড়ম্বর আর করোনার আবহে কার্যত ব্রাত্যই থেকে গেল জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার এক বছর পূর্তির দিন। আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার এক বছর অতিক্রম করার দিনেও ঘরবন্দিই রইল কাশ্মীর উপত্যকা। কার্ফুর ঘেরাটোপেই কাটল ৫ অগস্ট। সর্বত্র সেনা-পুলিশের কড়া নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ, মাইকে ঘরবন্দি থাকার ঘোষণা। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যাতে কোনও রকম নাশকতা চালাতে না পারে, তার জন্য কার্যত দুর্গের নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল শ্রীনগরকে।
গত বছরের এই দিনেই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তার আগে থেকেই জঙ্গি হানার আশঙ্কার কথা বলে পর্যটকদের উপত্যকা ছাড়তে বলা হয়েছিল। তার পর ৫ অগস্ট আচমকাই তুলে নেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে পাওয়া জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছিল। তার পর লোকসভা এবং রাজ্যসভাতেও সেই বিল পাশ করাতে কোনও অসুবিধা হয়নি মোদী সরকারের।
গত এক বছরে ঝিলম-শতদ্রু দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। গ্রেফতার-গৃহবন্দি হয়েছেন উপত্যকার শীর্ষ রাজনীতিবিদরা। টানা প্রায় ছ’মাস ধরে উপত্যকায় কার্যত মাছি গলতে না দেওয়ার মতো নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট, কেবল, মোবাইল পরিষেবা, ল্যান্ডলাইন-সহ যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে কাশ্মীরকে কার্যত বহির্বিশ্বের সঙ্গে আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। ওই সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সাধারণ নাগরিক— বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি শ্রীনগরে। এমনকি, কাশ্মীরের বাসিন্দা যাঁরা বাইরে আটকে পড়েছিলেন, তাঁরাও ঘরে ফিরতে পারেননি অনেকে। তার পর ধাপে ধাপে শিথিল করা হয় সেই নিয়ন্ত্রণ।
আরও পড়ুন: ‘রামজন্মভূমি মুক্ত হল’, ১৫ অগস্টের সঙ্গে তুলনা টানলেন মোদী
নিয়ন্ত্রণ উঠে ধীরে ধীরে যেই ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল জম্মু-কাশ্মীর, তার পরেই এল করোনাভাইরাস এবং লকডাউন। আবার ঘরে ঢুকে পড়ল উপত্যকা। লকডাউন ওঠার পরে করোনাবিধি মেনে যখন মানুষ আবার কিছুটা বহির্মুখী হলেন, তখনই এসে গেল ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের এক বছর। এক সেনা জওয়ান অপহরণের ঘটনায় সোমবার আবার জারি হল কার্ফু। তবে মঙ্গলবার দিনভর নির্বিঘ্নে কাটার পর সন্ধ্যার দিকে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উপত্যকার বাসিন্দারা বলছেন, কার্ফু থাক বা না থাক, শ্রীনগরের ছবি পাল্টায়নি। নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছাড়া করোনার কারণেও ঘরবন্দি ছিলেন উপত্যকার আম নাগরিকরা।
গা সওয়া হয়ে যাওয়া উপত্যকাবাসীর কাছে অবশ্য এ সব নতুন কিছু নয়। বুধবারও দেখা গিয়েছে রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-আধাসেনা-সেনার টহলদারি। কার্ফু তুলে নেওয়া হলেও সব রাস্তায় ব্যারিকেড। কোথাও সাধারণ, কোথাও কাঁটাতারের। জরুরি পরিষেবা ছাড়া কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। তার সঙ্গে ঘরবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়ে সাঁজোয়া গাড়িতে মাইকে ঘোষণা হয়েছে প্রায় দিনভর। উপত্যকার অন্যত্রও ছবিটা খুব বেশি আলাদা নয়। সর্বত্রই চোখে পড়েছে কড়া নজরদারি, টহলদারি।
আরও পড়ুন: নবযুগের শুরু, বললেন মোহন ভাগবত, রুপোর ইট গেঁথে সূচনা রামমন্দিরের
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘তিন জনের বেশি একসঙ্গে জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে আইন মেনে চলতে এবং ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।’’ তবে সব মিলিয়ে নির্বিঘ্নেই কেটেছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রথম বর্ষপূর্তি। পাথর ছুড়ে বিক্ষোভ যেখানে প্রায় প্রতিদিনের রুটিন, এ দিন অবশ্য তেমন কিছু নজরে পড়েনি।
আশঙ্কা অবশ্য ছিল না, এমন নয়। ৫ অগস্ট কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি এবং পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা। সেই কারণে গত সোমবার থেকে শ্রীনগরে জারি হয় কার্ফু। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের এক বছর পূর্তির দিন ৫ অগস্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে। প্রতিবাদ-মিছিল হতে পারে এবং তাতে জীবন ও সম্পত্তিহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই শ্রীনগরে কার্ফু জারি করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy