—ফাইল চিত্র।
লকডাউনে কাজ খুইয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঠিক কত জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে? বাদল অধিবেশনের শুরুর দিনে এই প্রশ্নেই সরকারকে ছেঁকে ধরেছিলেন বিরোধীরা। সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাদের হাতে নেই বলে জানিয়ে, সেই সময় ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে গা বাঁচাতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু শেষমেশ পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর কথা মেনেই নিতে হল তাদের। ২৫ মার্চ লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনগুলিতেই ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্বীকার করে নিল কেন্দ্র।
শুক্রবার রাজ্যসভায় ফের শ্রমিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। কেন্দ্রের কাছে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। তার প্রত্যুত্তরে লিখিত ভাবে শ্রমিক মৃত্যুর কথা মেনে নেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের তরফে যে তথ্য হাতে এসেছে, সেই অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে সফর করার সময় ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।’’ পীযূষের কথায়, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৭৪ ধারায় মামলা দায়ের করে রাজ্য পুলিশ। সেই মতো পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া এগোয়। যে ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৮৭ জনের দেহ রাজ্য পুলিশের তরফে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি থেকে ৫১ জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রের হাতে এসেছে। তাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা, ফুসফুস ও যকৃতের রোগের উল্লেখ রয়েছে।’’
তবে মৃত্যুর কথা মেনে নিলেও, রেলে অপরাধদমন, অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনায় মামলা দায়ের, মামলার তদন্ত এবং স্টেশন চত্বরের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত দায়িত্ব রাজ্যের উপরই বর্তায় বলে দাবি করেন পীযূষ গয়াল। রেল পুলিশ (জিআরপি) এবং জেলা পুলিশ হয়ে আরপিএফ সংশ্লিষ্ট স্টেশন চত্বর, রেলের জিনিসপত্র এবং সেখানকার যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে রাজ্য পুলিশের ঘাড়ে যাবতীয় হিসেব নিকেশের দায় ঠেলে দিলেও, রেলমন্ত্রী মারফত কেন্দ্র শ্রমিক মৃত্যুর কথা মেনে নেওয়ায় হাসি চওড়া হয়েছে বিরোধীদের।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে ১৩৫০ কোটির প্যাকেজ কেন্দ্রের, এক বছর জল ও বিদ্যুতে ৫০ শতাংশ ছাড়
এর আগে, গত সোমবার কাজ খুইয়ে ঘরে ফেরার পথে মৃত শ্রমিকদের তথ্য না-থাকার কথা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। সেই সময় তাঁর বক্তব্য ছিল, এ ধরনের তথ্য রাখার রেওয়াজ নেই। তাই ঘরমুখো পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তাঁর এই মন্তব্যকে সেই সময় লজ্জাজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হঠকারী, অপরিকল্পিত এবং প্রস্তুতিহীন লকডাউনের সিদ্ধান্তের জন্যই লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক হাজার-হাজার মাইল হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দিল্লিতে ধৃত চিনা মহিলা-সহ তিন
তবে শুক্রবার শুধুমাত্র শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনগুলিতেই প্রাণহানির কথা তুলে ধরেন পীযূষ গয়াল। লকডাউন চলাকালীন কয়েক হাজার মাইল হেঁটেই নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন বহু মানুষ। ক্ষিদেয়-তেষ্টায় অথবা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে সেই সময় রাস্তায় কত জনের মৃত্যু হয়, এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে তার কোনও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান মেলেনি। তবে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, লকডাউনের সময় মূলত দুর্ঘটনার কবলে পড়ে রাস্তাতেই প্রায় ২০০ পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ হারান। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্র— এই পাঁচ রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয় বলে তাদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy