Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Pneumonia

নিউমোনিয়ার জেরে তীব্র জ্বর এবং শুকনো কাশিতে আক্রান্ত শিশুরা, চিন্তায় বাংলার চিকিৎসকেরাও

নিউমোনিয়ার জেরে তীব্র জ্বর ও শুকনো কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। যার জেরে ক্রমশ হাসপাতালের শয্যা ভর্তি হচ্ছে শিশু রোগীতে। সম্প্রতি চিনে তৈরি হওয়া এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে বঙ্গের চিকিৎসকদেরও।

An image of Fever

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৯
Share: Save:

ফুসফুসে সংক্রমণ তথা নিউমোনিয়ার জেরে তীব্র জ্বর ও শুকনো কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। যার জেরে ক্রমশ হাসপাতালের শয্যা ভর্তি হচ্ছে শিশু রোগীতে। সম্প্রতি চিনে তৈরি হওয়া এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে বঙ্গের চিকিৎসকদেরও। গোটা পরিস্থিতির উপরে গুরুত্ব সহকারে নজরদারির কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও।

মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত অক্টোবরে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপপ্রজাতি বা সাব-টাইপ ‘এইচ ৯ এন ২’-র প্রকোপের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল চিন। এর পরে শেষ কয়েক সপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক শিশু। এই দু’টি বিষয়ই পর্যবেক্ষণ করে বৈঠকে বসেছিল ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কর্তাদের দাবি, ‘‘এ দেশে এইচ ৯ এন ২ এবং শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুবই কম। তা-ও সব রকমের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দেশ প্রস্তুত রয়েছে।’’ যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের আশ্বাসে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না চিকিৎসকদের বড় অংশ। কারণ, আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচলে এখনও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই যে রোগের প্রকোপ চিনে শিশুদের মধ্যে এখন দেখা যাচ্ছে, কোভিডের সংক্রমণের মতোই সেই সংক্রমণ কারও মাধ্যমে এ দেশে চলে আসার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

চিনে এখন যেমন সংক্রমণ হচ্ছে বলে খবর মিলছে, তাতে মহামারি সংক্রান্ত গবেষণা অত্যন্ত জরুরি বলেই মত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘কোন জীবাণুর কারণে সংক্রমণ হচ্ছে, তার মারণ ক্ষমতা কতটা, কত দ্রুত তা ছড়াতে পারে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তা কতটা এড়াতে পারছে— এই সমস্ত তথ্যের খুবই প্রয়োজন। কারণ, তার উপরে ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক বা জাতীয় নীতি বা নির্দেশিকা তৈরি হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, সমস্ত তথ্য ঠিক মতো পাওয়া গেলে তবেই রোগের প্রকোপকে অতিমারিতে পরিণত হওয়া থেকে আটকানো সম্ভব। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চিনের শিশুরা যে সমস্ত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তা সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা, আরএসভি-ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পাওয়া যায়। তবে তাতে সকলকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তেমনটা নয়। কিন্তু উত্তর-পূর্ব চিনে সংক্রমণের তীব্রতা এতটাই যে, কিছু স্কুল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মৃত্যুর খবর নেই।

সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, ‘‘অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ায় একই রকমের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। যার নেপথ্যে ছিল মাইকোপ্লাজ়মা ব্যাক্টিরিয়া। কিন্তু উত্তর-পূর্ব চিনে কী কারণে সংক্রমণ হচ্ছে, তা এখনও জানা যায়নি। তাই উদ্বেগ তো একটা রয়েছেই।’’ চিনে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব কেন বাড়ছে, তা জানতে চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরাস বিষয়ক গবেষক সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, ‘‘এই নিউমোনিয়ার সংক্রমণের আসল কারণ সামনে আসেনি। তবে, লক্ষণ দেখে আরএসভি ভাইরাস, মেটানিউমো ভাইরাস অথবা মাইকোপ্লাজ়মা নিউমোনিয়ার মতো ব্যাক্টিরিয়া এর কারণ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, পরীক্ষাগারে পিসিআরের মতো মলিকিউলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটির কারণ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। তবে ওই সমস্ত ভাইরাস ও জীবাণুর মৃত্যু-হার বেশি নয়।

সূত্রের খবর, পরিচিত ভাইরাসের প্রকোপ বলে মনে করা ছাড়া এখনও পর্যন্ত অজানা জীবাণুর কথা চিনের তরফে বলা হচ্ছে না। এ দিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, করোনার সময় থেকেই জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। তবে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বললেন, ‘‘কোন ভাইরাসের কারণে চিনে শিশুদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বাড়ছে, তা অজানা। তাই কোভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা থেকেই আগাম সতর্ক থাকা প্রয়োজন। চিন থেকে আসা লোকজনদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE