Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
World Rabies Day

বিশ্বে প্রতি বছর মৃত ৬০ হাজার, মানব দেহে পরীক্ষা হয়নি প্রথম জলাতঙ্কের টিকাও

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রত্যেক বছর জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।

কুকুর-সহ অন্যান্য অসুস্থ প্রাণীর লালায় জলাতঙ্কের ভাইরাস থাকে। ফাইল ছবি

কুকুর-সহ অন্যান্য অসুস্থ প্রাণীর লালায় জলাতঙ্কের ভাইরাস থাকে। ফাইল ছবি

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:২৩
Share: Save:

কোভিড টিকার হিউম্যান ট্র্যায়াল নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অথচ ১৮৮৫ সালের ৬ জুলাই কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত ৯ বছরের জোসেফ মেইস্টেরকে লুই পাস্তুরের কাছে আনার পর মানব দেহে কোনও পরীক্ষা বা হিউম্যান ট্র্যায়াল ছাড়াই তাঁর শরীরে জলাতঙ্কের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যাঁর জীবনের মেয়াদ ছিল মোটে ৯ বছর, সেই জোসেফ ৬৪ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। সেই সময়ে কুকুরের কামড়ালে জলাতঙ্কে মৃত্যু ছিল অবধারিত।

কুকুরের লালায় থাকা জলাতঙ্কের জীবাণু র‌্যাবিস লিসা ভাইরাস জলাতঙ্ক অসুখের কারণ। এই অসুখের কোনও চিকিৎসা না থাকায় মৃত্যু ছিল অবধারিত। আর এই কারণেই কুকুর-সহ অন্য কোনও প্রাণী (বিড়াল, বাদুড়, গরু, ছাগল, ঘোড়া, শেয়াল, খরগোশ ইত্যাদির) কামড়ে দিলে র‌্যাবিস বা জলাতঙ্ক হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রত্যেক বছর জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য জলাতঙ্ক নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা দরকার। সেই কারণেই ২৮ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস’ বা ‘অ্যান্টি র‌্যাবিস ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত ওজনে করোনার ফল হতে পারে মারাত্মক, মেদ কমাতে কী কী করতেই হবে​

এ বছরের জলাতঙ্ক দিবসের থিম এন্ড ‘র‌্যাবিস, কোলাবরেট, ভ্যাক্সিনেট।’ টিকার সাহায্যে জলাতঙ্ককে আটকে দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নির্মূল করার শপথ নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই শপথ কার্যকর করার জন্য সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। একটা সময় ছিল যখন ইউরোপে প্রচুর মানুষ এই অসুখে মারা যেতেন। কত প্রাণী যে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত তারও হিসেব নেই।

তখন শুধুমাত্র অসুখের নামটাই জানা ছিল। র‌্যাবিস বা জলাতঙ্কের কারণ সম্পর্কে মানুষের ধারণাই ছিল না। সেই সময়ে ১৮৮০ সালে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর র‌্যাবিস বা হাইড্রোফবিয়া প্রতিরোধ করার জন্যে গবেষণা শুরু করেন। তবে রোগ প্রতিরোধ করতে গেলে কারণটা তো জানতে হবে। ১৮৮৪ সালে তিনি জানতে পারেন যে অসুস্থ কুকুরের লালায় এক ধরনের ভাইরাস থাকে (লিসসা) যা জলাতঙ্কের জন্যে দায়ী।

কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে এই জীবাণু মানুষের শরীরে যায়। ওই জীবাণুর সাহায্যে টিকা তৈরি করে কুকুরকে দেন। দেখেন, কুকুরদের আর জলাতঙ্কের সংক্রমণ হচ্ছে না। তারপরই তিনি মানুষের উপযুক্ত টিকা তৈরি করেন। ১৮৮৫ সালে জোসেফকে টিকা দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর পর ৭২৬ জন মানুষকে জলাতঙ্কের টিকা দিয়ে অসুখটাকে আটকে দিতে সফল হন। ১৮৮৬ সালের ১ মার্চ ‘ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’-এ তাঁর গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়।

অসুখটা প্রতিরোধ করা যায় মাত্র। রোগের আক্রমণ শুরু হলে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও অসহায়। তাই এই মারণ অসুখটির প্রতিরোধের ব্যাপারে সব মানুষের সচেতন হওয়া দরকার। টিকার সাহায্যে জলাতঙ্ককে আটকানো এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

মারণ এই ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। ফাইল ছবি।

আমেরিকায় এক সময়ে জলাতঙ্কের সংক্রমণে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হত। পোষা কুকুর ও মানুষকে টিকা দিয়ে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার নামিয়ে আনা হয়েছে বছরে দুই থেকে তিনটিতে । কিন্তু আমাদের দেশ-সহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় অজস্র মানুষ মারা যান।

আরও পড়ুন:নিউ নর্মালে সম্পর্ক ভাল রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

কুকুর-সহ অন্যান্য অসুস্থ প্রাণীর লালায় জলাতঙ্কের ভাইরাস থাকে। এরা কামড়ালে র‌্যাবিসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। কুকুরই হোক বা অন্য প্রাণী কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা সাবান আর গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কোনওরকম আপস করলে চলবে না। বাড়ির পোষা প্রাণীদেরও জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আরও পড়ুন: পুজোর সময় কি 'ফ্যাশনেবল' মাস্ক পরা উচিত, কী বলছেন চিকিৎসকেরা?​

র‌্যাবিসের ভাইরাস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। বিশেষত মস্তিষ্ককে ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে জ্বর, পেশির দুর্বলতা, কামড়ের জায়গায় অসম্ভব জ্বালা, অনিদ্রা, অ্যাংজাইটি, হ্যালুসিনেশন, কনফিউশন, লালা পড়া, গিলতে কষ্ট সঙ্গে জল দেখলে ভয় এই সব উপসর্গ দেখা দেয়। তবে টিকা নিয়েই জীবাণুকে আটকে দেওয়া সম্ভব। ২০০৭ সালে প্রথম জলাতঙ্ক দিবস পালন করা হয় ২৮শে সেপ্টেম্বর। কারণ আজ লুই পাস্তরের মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে স্মরণ করেই এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাবধানে থাকুন। সুস্থ থাকুন।

অন্য বিষয়গুলি:

Rabies Viral Fever Virus Dog Bite Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy