Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
World Prematurity Day 2020

নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুর জন্ম, সচেতনতা বাড়াতে ‘ওয়ার্ল্ড প্রিম্যাচিওর ডে’

প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীর আলো দেখে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩৩
Share: Save:

মায়ের গর্ভে ভ্রূণের পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে সময় লাগে ২৮০ দিন। কিন্তু নানান কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তারা পৃথিবীর আলো দেখে। ইদানীং এই সব অপুষ্ট শিশুদের স্বাভাবিক জীবন দিতে চিকিৎসকরা এককাট্টা হয়ে লড়ছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এই সব দুর্বল নবজাতকদের অনেককেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অনেককেই বাঁচানো যাচ্ছে না।

প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীর আলো দেখে। ‘‘হিসাবটা যে সব মায়েরা হাসপাতালে প্রসবের জন্যে আসেন, তাঁদের নিয়ে। যে সব প্রসূতির হাসপাতালে পৌঁছনর সামর্থ্য নেই কিংবা যেখানে প্রসূতিদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র নেই তাঁরা এই হিসাবের বাইরে। এই বিষয়ে বাবা, মা-সহ বাড়ির লোকজনদেরও সচেতন থাকা উচিত,’’— বললেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

নির্ধারিত সময়ের আগে বাচ্চার জন্ম সম্পর্কে সচেতন করতে ১৭ নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড প্রি ম্যাচিওরটি ডে’। হবু বাবা-মা তাঁদের সন্তান আনার আগে কিছু পরিকল্পনা করে নিতে পারলে ২৮০ দিন মায়ের গর্ভে থেকে পরিপূর্ণ হয়েই পৃথিবীর আলো দেখতে পারে তাঁদের ভবিষ্যৎ, পরামর্শ অভিনিবেশের। দেড় কোটির মধ্যে অনেক চেষ্টা করেও ১০ লক্ষ শিশুকে জন্মের পর বাঁচানো যায় না। আবার ৫ বছরের নীচে শিশু-মৃত্যুর একটা বিরাট অংশ এই সব নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানো শিশুরা। অভিনিবেশ জানালেন, বেশি বয়সে প্রথমবার মা হতে গেলে প্রিটার্ম বার্থের ঝুঁকি অনেক বেশি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম বার মা হলে ভাল হয়। যে সব হবু মা ধূমপায়ী বা ‘প্যাসিভ স্মোকিং’-এর শিকার তাঁদের বাচ্চা সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয়। তাই গর্ভাবস্থায় সিগারেট বিড়ির ধোঁয়া থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

আরও পড়ুন: শিশুকে কি বোতলে দুধ খাওয়ান? অজান্তেই এই সব বিপদ ডেকে আনছেন কিন্তু

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে বাড়তি শর্করার মাত্রা ‘প্রিটার্ম বার্থ’-এর ঝুঁকি বাড়ায়, তাই গর্ভাবস্থায় এই দু’টি সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কোনও রকম শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করতে বারণ করছেন অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

যমজ বা একাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে প্রিটার্ম বার্থের ঝুঁকি বাড়ে।

• যাঁদের অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনিকের (এআরটি) সাহায্যে গর্ভধারণ হয়েছে, তাঁদেরও নির্ধারিত সময়ের আগে বাচ্চার জন্ম হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

• জরায়ু, সার্ভিক্স বা জরায়ু মুখ বা প্ল্যাসেন্টার কোনও গঠনগত ত্রুটি থাকলেও বাচ্চা আগে ভূমিষ্ঠ হতে পারে।

• যে সব প্রসূতির কিডনির অসুখ বা হার্টের অসুখ আছে তাঁদের সন্তান ৩২ সপ্তাহের আগে জন্ম নিতে পারে।

• যে সব মায়েরা গর্ভে সন্তান আসার আগে ও সেই সময়ে পুষ্টিকর খাবার খান না, তাঁদের বাচ্চাও অনেক আগে ভূমিষ্ঠ হতে পারে।

• গর্ভাবস্থায় মদ্যপান বা অন্যান্য নেশার ফলে প্রিটার্ম বার্থের ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।

অভিনিবেশ জানাচ্ছেন, এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষ করে সিগারেট বা মদ্যপান ছেড়ে সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেয়ে মনঃভাল রাখলে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া যায় সহজেই। বেশি বয়সে মা হলে ‘প্রিটার্ম’ বাচ্চা হওয়া ছাড়াও মায়ের অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তাই হবু মায়েদের সতর্ক থাকা উচিত বলেই মত ওই চিকিৎসকের।

ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাদের তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ২৮ সপ্তাহের কম বয়সী ভ্রূণ যাকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘এক্সট্রিমলি প্রিটার্ম’, ২৮–৩২ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ হলে বলে ‘ভেরি প্রিটার্ম’ এবং ৩২ থেকে ৩৭ সপ্তাহে ‘মডারেট’ ও ‘লেট প্রটার্ম’, ‘এক্সট্রিমলি’ বা ‘ভেরি প্রিটার্ম’ বাচ্চাদের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু)-এ দীর্ঘ দিন রেখে চিকিৎসা করেও সবাইকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। আবার যারা বেঁচে গেল তাদের আজীবন নানান শারীরিক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি থেকে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসাবে, ভারতে বছরে প্রায় ৩৫ লক্ষ ১৯ হাজার ১০০ শিশু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয়। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন যে, হু-র নির্দেশ মেনে প্রিটার্ম বাচ্চাদের ক্যাঙারু মাদার কেয়ার অর্থাৎ মায়ের বুকের উষ্ণতায় রেখে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। প্রয়োজনে ওয়ার্মার বা ফুসফুস ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ কমলেও ধন্দ কাটছে না চিকিৎসকদের

নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে জন্মানো বাচ্চার নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। পল্লব জানাচ্ছেন, এই সব সদ্যোজাতদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। ওজন অত্যন্ত কম হয় (২.৫ কেজি আমাদের দেশে স্বাভাবিক ওজন), শরীরের তাপমাত্রার কমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এই কারণেই এঁদের বিশেষ ভাবে যত্ন করা প্রয়োজন। পল্লবের কথায়, ‘‘শিশুদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ জানতে ব্লাড গ্যাস অ্যানালিসিস করতে হয় নিয়ম করে। নিকু-তে রেখে চিকিৎসা করলে এঁদের অনেককেই বাঁচানো যায়।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায়ের মত, প্রিটার্ম বেবিদের নিওনেটাল রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোমের ঝুঁকি খুব বেশি। ইনকিউবেটর, নিওনেটাল ভেন্টিলেটর এবং পারদর্শী চিকিৎসক ছাড়া এঁদের বাঁচিয়ে তোলা খুব কঠিন। ভূমিষ্ঠ হবার পর এঁদের চেস্ট এক্সরে করে হার্ট ও ফুসফুসের গঠন ঠিক আছে কি না জেনে নেওয়া হয়। নিকু থেকে বার করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেও এঁদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শান্তনুর কথায়, ‘‘অনেক প্রিম্যাচিওর বাচ্চা দুধ টেনে খেতে ও গিলতে পর্যন্ত পারে না, কেন না আগে জন্ম হওয়ায় সেই ক্ষমতাই এঁদের তৈরি হয় না। এদের বাঁচিয়ে রাখতে নাকে টিউব দিয়ে বা ইঞ্জেকশনের সাহায্যে খাওয়ানো হয়।’’

‘ওয়ার্ল্ড প্রি ম্যাচিওরটি ডে’-তে সব হবু বাবা মায়েরা এবং তাঁদের পরিবার এই বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পৃথিবীতে আনুন সুস্থ পরিপূর্ণ শিশুকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnancy Motherhood baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy