Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
corona

বাতের ব্যথায় কাবু? সুস্থ থাকতে কী কী মানতেই হবে

কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের মতই আর্থ্রাইটিসও কিন্তু বিশ্বের সমস্ত দেশের সমস্যা।

বাতের ব্যথায় সতর্ক হন আজই। ফাইল ছবি।

বাতের ব্যথায় সতর্ক হন আজই। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ১১:৫৪
Share: Save:

সাধারণ মানুষ যাকে বাতের ব্যথা বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তারই নাম আর্থ্রাইটিস। বাতের ব্যথায় ভুক্তভোগী মানুষ রয়েছেন প্রায় প্রতিটি পরিবারেই। আমাদের দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষ অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। ৬০ বছরের উপরে ১৮% মহিলা ও ৯.৬ পুরুষ বাতের ব্যথায় কাতর।

কয়েকটি সাবধানতা মেনে চললে ব্যথায় কাতর হয়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয় না। এই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে গতকালই বিশ্বজুড়ে পালন করা হল ‘ওয়ার্ল্ড আর্থ্রাইটিস ডে’। আমাদের দেশেও পালিত হয়েছে এই দিবস। ১৯৯৬ সালের ১২ অক্টোবর ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটিজম ইন্টারন্যাশনাল’-র উদ্যোগে এই দিন পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কোভিড-১৯ অতিমারির মতো আর্থ্রাইটিসও কিন্তু বিশ্বের সমস্ত দেশের সমস্যা। তবে এ রোগ মোটেও ছোঁয়াচে নয়। প্রধানত দুই ধরনের আর্থ্রাইটিস নিয়ে মানুষ বিব্রত। এক বেশি বয়সে অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও দুই যে কোনও বয়সে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস।

আরও পড়ুন:কোভিড রুখতে প্রধান হাতিয়ার মাস্কই, বলছেন চিকিৎসকরা​

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১% মানুষ রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। ব্যথায় কাতর মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান নেমে যায়। অথচ সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে ব্যথার কষ্ট কমিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় বলে জানালেন অর্থোপেডিক সার্জন সৌমিত্র মিশ্র। বিভিন্ন আর্থ্রাইটিসে মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যায় হাঁটুর ব্যথা।

হাঁটুর ব্যথাকে অবহেলা নয়। ফাইল ছবি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু-সহ অন্যান্য অস্থিসন্ধির হাড় ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। অল্প বয়সে চোট লাগলে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে কম বয়স থেকেই হাঁটুর অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। সৌমিত্র মিশ্র জানান, আমাদের শরীরের সব থেকে ভারবাহী অস্থি সন্ধি হল হাঁটু বা নি-জয়েন্ট। শরীরের ওজন বইতে বইতে ক্লান্ত হাঁটু রোজকার ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ারে ক্ষয়ে যায়। আর ক্ষয়ে যাওয়া অস্থি সন্ধির ঘর্ষণে নি-জয়েন্টের নার্ভ রুটে চাপ পড়ে। এই কারণেই ব্যথা হয়। বেশি বয়সে সকলেরই যে হাঁটুতে মারাত্মক ব্যথা হবে তা নয়। যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি, কোনও রকম শরীরচর্চা করেন না, কন্ডোম্যালেশিয়া প্যাটেলা, ক্ষতিগ্রস্ত কার্টিলেজ, গাউট ও অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস আছে অথবা চোট লেগে হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের বয়স বাড়লে হাঁটুর ব্যথার ঝুঁকি বেশি।

আরও পড়ুন:বিপদসঙ্কেত! ‘কেরলের শিক্ষা না নিলে পুজোর পর করোনা-সুনামি’​

বয়স বাড়লে এক দিকে হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যায়, অন্য দিকে হাঁটু, হিপ জয়েন্ট-সহ সহ অন্যান্য অস্থিসন্ধির হাড় ক্ষয়ে যায়। আর ক্ষয়ে যাওয়া অস্থি সন্ধির ঘর্ষণে পা এবং উরুর জয়েন্টের নার্ভ রুটে চাপ পড়ে। এই কারণেই ব্যথা হয়। সৌমিত্র মিশ্র জানালেন যে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলে অস্থিসন্ধির কার্টিলেজও ক্ষয়ে যায়। এর ফলে অস্থি সন্ধি বা জয়েন্ট সহজে নড়াচড়া করতে পারে না। হাড় ক্ষয়ে গিয়ে সন্ধি শক্ত হয়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে হিপ জয়েন্ট বিকৃত হয়ে হাঁটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়, অন্য দিকে ভয়ানক যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়।

আরও পড়ুন:পুজোর সময় রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে এই সব মানতেই হবে

হিপ ফ্র্যাকচার, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, বোন ডিসপ্লেশিয়া-সহ সমস্যা হলে একদিকে স্থবির হয়ে বসে থাকতে হয়, অন্য দিকে ব্যথার কষ্টে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। রোগী শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্যে ব্যথার অসহ্য কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিকিৎসা মানেই কিন্তু ব্যথার ওষুধ নয়। ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ ব্যথার ওষুধ কিনে খেলে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে । এ দিকে ব্যথাও বাড়তে শুরু করে, জানান সৌমিত্র বাবু। তাই ব্যথা শুরু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা করে পেশির শক্তি বাড়ানো উচিত।

হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে ব্যথা শুরু হতে পারে। ফাইল ছবি।

অর্থোপেডিক সার্জন সন্তোষ কুমার জানান, হিপ জয়েন্টে ফ্র্যাকচার হলে রোগীকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া দরকার। ফিমার বোন হল আমাদের শরীরের সব থেকে লম্বা হাড়। ডাক্তারি শাস্ত্র মতে মানুষের সব থেকে শক্তিশালী ও লম্বা হাড় ফিমার বোন। বেশি বয়সে হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে সামান্য আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি এবং কখনও শরীরচর্চা করেন না, শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম, তাঁদের সাবধানে থাকতে হবে। অস্টিআর্থ্রাইটিস হলে হাঁটুর ব্যথা শুরু হয় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা আর অনেকক্ষণ হাঁটাচলা করার পর। তবে টানা বসে থাকলে অথবা ঘুম থেকে ওঠার পরেও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। আবার হাঁটু ভাঁজ করতে গেলেও কষ্ট হয়। ঘুমের মধ্যেও ব্যথায় ঘুম ভেঙে যেতে পারে। এ রকম হলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিৎ বললেন সন্তোষ কুমার।

আরও পড়ুন:টাকা, মোবাইল স্ক্রিনে ২৮ দিন বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস?​

এ বছরের কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে অন্যান্য অসুখের পাশাপাশি আর্থ্রাইটিসের ব্যথার ঝুঁকিও বেড়েছে। নিয়মিত হালকা কিছু শরীরচর্চা করে ওজন বাড়তে না দিয়ে এবং ক্যালসিয়াম-যুক্ত খাবার খেয়ে আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলে নিয়মিত ফলো আপ করা উচিত। রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনেক ক্রনিক অসুখের মত ব্যথা বেদনাকেও আটকে দেওয়া যায়। মনে রাখবেন ব্যথার আসল ওষুধ শরীরচর্চা আর সুস্থ জীবনযাপন। সবাই ব্যথা মুক্ত থাকুন, ভাল থাকুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy