প্রতীকী ছবি।
এক দিন বাড়িতে ফোন করে প্রবল চেঁচামেচি করলেন ছেলে। নিজের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করলেন সেই বাবাকে, যিনি সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন! শান্ত স্বভাবের ছেলেটির এমন উগ্র ব্যবহার দেখে হতবাক হয়েছিল পরিবার!
পরে ছেলে নিজেই জানালেন, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজের চাপে সারা দিন কিছু মুখে তোলার সময় পান না তিনি। রাতে বাড়ি ফিরে নাকেমুখে গুঁজেই ফের বসতে হয় অফিসের কাজ নিয়ে। রাত পর্যন্ত চলে কাজ। পরদিন সময় মতো অফিসে পৌঁছনোর তাড়ায় এক সময়ে শুয়ে পড়লেও মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে শেষ না হওয়া কাজ! সপ্তাহান্তে ছুটি নেওয়ার সুযোগ হয় না। অফিসকে জানালে দু’দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসার কথা বলা হয় বটে, কিন্তু আবার যে কে সেই! সমস্যা বুঝে পরিবারের লোকজন মনোরোগ চিকিৎসককে দেখানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেখানেও দু’-এক দিনের বেশি যাওয়ার ফুরসত মেলেনি। কয়েক মাস পরে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল ওই যুবকের দেহ।
এমন ঘটনা নেহাত কম নয়। মনোরোগ চিকিৎসক থেকে ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, কাজের চাপে এমন প্রাণান্তকর পরিস্থিতিতে হাঁসফাঁস করছেন অনেকেই। বহু ক্ষেত্রেই পথ খুঁজে না পেয়ে অনেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গরফায় এক অভিনেত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে এমনই কিছু ছিল কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে নানা মহলে। সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে কী করণীয়— সেই প্রশ্নও জরুরি হয়ে উঠছে।
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বললেন, ‘‘এমনও হচ্ছে যে, স্বামীর সঙ্গে থাকতে স্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। উপরের ফ্ল্যাটের লোক কেন শব্দ করছেন, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে করতে তা নিয়ে স্ত্রীকে তুলোধোনা করছেন স্বামী। এমন কিছু না কিছু হচ্ছিল প্রায়ই। পরে বোঝা গেল, অফিসের চাপে প্রতিদিনই অনিদ্রায় কাটছে সেই ব্যক্তির। অফিসে কিছু বলতে না পেরে পরিবারের উপরেই রাগ উগরে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।’’ অনিরুদ্ধবাবুর দাবি, ‘‘এর সমাধানের পথ কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা। মনে রাখতে হবে, ছুটির দিনে কাজ নয়। সব জায়গাতেই কর্মীর সমস্যা বুঝে কাউন্সেলিং করানোর ব্যবস্থা করাতে হবে সংস্থাকেই।’’
সেক্টর ফাইভ স্টেক হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কল্যাণ করের দাবি, ‘‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরুর সময়ে যেমন সমস্যা হয়েছে, এখনও কিছু ক্ষেত্রে তা হচ্ছে। অফিসে এসে কাজ আর বাড়িতে বসে কাজ— দুটোই বজায় রেখে আদর্শ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বহু সংস্থা নির্দিষ্ট সময় অন্তর কর্মীদের ছুটিতে যাওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। ছুটির দিনে যাতে কাজ করতে না হয়, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ মানে যে যখন খুশি কাজ করতে ডাকা নয়, তা-ও বুঝেছে সংস্থাগুলি। সব মিলিয়ে কর্মীদের মানসিক স্থিতির পর্যালোচনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম যদিও বললেন, ‘‘কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যবস্থা করলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মীদের উপরে যে চাপ, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কেউ নেই। এ জন্য ওই স্তরে এক একটা পিআর গ্রুপ খুব দরকার। বন্ধুস্থানীয় কয়েক জন মিলে একে অপরের মানসিক দিকটা খেয়াল রাখতে পারেন। সিনিয়রেরা মেন্টর হিসাবে সাহায্য করতে পারেন। অভিনয়ের মতো পেশার জগতে ফোরামগুলির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
অভিনেত্রী তৃণা সাহা যদিও মনে করেন, ‘‘কে পাশে দাঁড়ালেন আর কে দাঁড়ালেন না, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নিজের উপরে বিশ্বাস রাখা। আমাদের জগতে কাজ থাকা আর না-থাকার মাঝের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নিজের উপরে ভরসা রেখে নিজেকে তৈরি করতে হবে। যত বেশি সম্ভব পরিবারকে সময় দিতে হবে। এটাই ভাল থাকার বড় ওষুধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy