রোজের খাবারে ডিম শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ছবি: শাটারস্টক।
আচমকা বাড়িতে অতিথি এসেছে, ফ্রিজে ডিম ছাড়া কিছু নেই। মুশকিল আসান! কাঁচালঙ্কা আর কুঁচো পেঁয়াজ দিয়ে ওমলেট আর গরম চা। ব্যস, প্রাথমিক আপ্যায়ণে আর কী চাই!
বাজার যাওয়ার ফুরসত মেলেনি? তো কী হয়েছে? ডিমের ডালনা করে নিলেই ভাত সাফ! কিংবা সকালে খুব তাড়াহুড়োয় খাবার বানানো হয়নি? অসুবিধা কি? ডিম ভেঙে সামান্য তেলে নিয়ে একটু ভুজিয়া বা পোচ করে নিলেই কাজ মিটল, পেটও ভরল।
সত্যি কথা বলতে কি, হেঁশেলে ডিমের জায়গা একেবারে পাকা। ইদানীং অবশ্য অনেকেই কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিমের কুসুম বর্জন করেন। তাঁদের জন্য সুখবর, আধুনিক গবেষণাগুলির মতে, কুসুম খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। কোলেস্টেরলের মাত্রার কোনও হেরেফেরই হবে না। মধ্যবিত্তের সংসারে সস্তায় প্রোটিন খুঁজতে গেলেও থামতে হয় ডিমের কাছে।
আরও পড়ুন: চেহারা ভারী? পোশাক বাছার সময় এ সব সতর্কতা মানলেই বয়স্ক দেখাবে না
অথচ এই ডিম নিয়েই নানা ভুল ধারণার শিকার আমরা। কারও মতে ডিম খেলে হজমের সমস্যা হয়, কেউ ভাবেন হাঁসের ডিমে বাড়ে বাত আর সর্দি। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীরা একেবারেই এর উল্টো কথা বলছেন। তাঁদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে জোরদার প্রোটিনের স্বাভাবিক উৎস হল ডিম। অথচ ডিমের খাদ্যগুণ সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। সেই ধারণাগুলোর গলদ ঢেকে দিতেই ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন’-এর এক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব জুড়ে ডিমকে জনপ্রিয় করার কর্মসূচি হিসেবে ‘ওয়র্ল্ড এগ ডে’ পালন করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও এই দিন পালন করা হয়। বিশেষ করে এ দেশে অন্ধ্রপ্রদেশে মহা উৎসাহ নিয়ে এগ ডে পালন করা হয়।
পুষ্টিবিজ্ঞানী সুব্রত খাশনবিশের মতে, ‘‘ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চমানের। এই প্রোটিন আমাদের মস্তিষ্ক আর পেশি গঠনে এবং রোজকার ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। ডিমে আছে এমন কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্থিরতা বাড়ায়।’’ প্রতিটি মানুষকে এই ‘কমপ্লিট ফুড’-এ নানা গুণাগুণ সম্পর্কে জানাতে বিশ্বের তাবড় পুষ্টিবদরা গোটা একটা দিন বরাদ্দ করেছেন শুধু ডিমের জন্য! ‘Eat your egg today and everyday’— এটাই এ বারের এগ ডে-র থিম। যাঁদের ডিমে অ্যালার্জি, তাঁরা ছাড়া সকলেই ডিম খেতে পারেন অনায়াসে। ডিম নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর জানা গিয়েছে, একটা মাত্র কোষ থেকে একটা গোটা প্রাণী তৈরির যাবতীয় উপাদান থাকে ডিমের মধ্যে। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম হল এই গ্রহের সবচেয়ে বেশি পুষ্টিতে ঠাসা খাবার মানেই ডিম। তাই একে ‘সুপার ফুড’-এর শিরোপা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
হার্টের অসুখ বা কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকেই ডিম খেতে ইতস্তত করেন। তাঁদেরও আশ্বস্ত করেছেন পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা। যদিও ডিমে অনেকটা কোলেস্টেরল আছে, কিন্তু তা আমাদের কোনও ক্ষতি করে না। বরং হার্টের উপকারী হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরলের( HDL) পরিমাণ বাড়িয়ে হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে। এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের জন্য কোলেস্টেরলের ভূমিকা যথেষ্ট কম।
আরও পড়ুন: এ সব নিয়মে কাচলে বার বার ব্যবহারের পরেও জিনস থাকবে নতুনের মতো
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
তার পরেও আজকের যুগে ডিম নিয়ে অনেক মিথ আর ভুল ধারণা আছে। যার ভয়ে অনেকেই এই স্বাস্থ্যকর খাবারটি সযত্নে এড়িয়ে চলেন। কেউ কেউ ভাবেন, দেশি মুরগি বা হাঁসের ডিমের মধ্যেই লুকিয়ে আছে যত উপকার। পোলট্রির ডিম খুব একটা উপকারী নয়। ডিম খেলে সর্দি-কাশি হয় বা বাতের ব্যথা অবধারিত, এ সব ভুল ধারণা তো আছেই। আবার যাঁদের ডিমে অ্যালার্জি, তাঁদের ধারণা, ডিম খেলেই ত্বকে র্যাশ হবে অথবা পেট খারাপ হবেই। অনেকেই ভাবেন, বেশ কিছু অসুখের মূলেই নাকি ডিম। এই সব মিথ অমূলক বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ। ডিম একাধিক খাওয়া যায় না এমন ধারণাতেও সায় নেই তাঁদের। বরং তাঁদের মতে, সুস্থ শরীরে দিনে চারটে পর্যন্ত ডিম খাওয়াই যায়। এমনকি, লাল ডিম ও সাদা ডিমে প্রোটিন ও পুষ্টিগুণের কোনও ফারাক নেই।
তবে কাঁচা ডিম বেশি উপকারী, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই কাঁচা ডিম খান। পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁচা ডিম খাওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়, জীবাণুর সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বরং এতেই থাকে। পুরো সেদ্ধ বা রান্না করা ডিমই ভাল, তবে বেশি কড়া ভাজায় ডিমের কিছু গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
তবে নিয়ম মেনে ডিম খেলে কী কী উপকার করতে পাবেন, রইল তার হদিশ।
আরও পড়ুন: পুজোর অনিয়মে ওজন বেড়েছে? এই সব কসরতেই ঝরবে বাড়তি মেদ
আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের পুষ্টিতে ক্লোরিনের বিশেষ ভূমিকা আছে। তবে রোজকার খাবারে ক্লোরিন পাওয়া মুশকিল। একমাত্র ডিমে আছে সঠিক পরিমাণে ক্লোরিন। তাই বুদ্ধি বাড়াতে আর স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে ডিম খেতে হবে। ডিমের কিছু রাসায়নিক রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএলকে বন্ধু কোলেষ্টেরল এইচডিএলে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। চোখ ভাল রাখতেও ডিমের জুড়ি নেই। এর মধ্যে থাকা লিউটেইন, জিআক্সানথিন নামক দু’টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চোখ ভাল রাখে। ডিমে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তের খারাপ উপাদান ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ডিম খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত সুষম আর সহজপাচ্য। ক্যালোরি কম থাকায় ডিম ওজন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ডিম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তাই কাঁচা, পচা বা অতিরিক্ত তেলে ভাজা বাদ দিয়ে সেদ্ধ, ওমলেট, পোচ যে ভাবেই হোক, রোজকার মেনুতে থাকুক ডিম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy