—প্রতীকী ছবি।
সাত বছর আগের কথা। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। দু’জনেই জানে কেন ছাড়াছাড়ি। কিন্তু রাগ-দুঃখ-অভিমানের পাহাড় টপকে কোনও দিন সে নিয়ে কথা হয়নি। কলেজের পাশের ডিপার্টমেন্টের মেয়েটির সঙ্গে যে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল আচমকাই, সেটা তিরিশ পেরিয়ে ‘নটে গাছটি মুড়োলো’র মতোই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সাত বছরে আর কথা হয়নি দুই মেয়ের। যদিও আজও কোনও এক অবেলায় দু’জনেরই মনে পড়ে যায় মেয়েবেলার সেই বন্ধুত্বের কথা।
কিন্তু প্রেমে বিচ্ছেদ নিয়ে মানুষ যত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কথা বলে, দুঃখ ভাগ করে নেয়, বন্ধুর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি সেই সহমর্মিতা পায় না। বলিউডে ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে...’ গান আছে, বন্ধুত্ব উদ্যাপন আছে, কিন্তু বন্ধুত্ব ভাঙার গান সেই অর্থে নেই। ‘ব্রেক আপ সং’-এ নাচ আছে, কিন্তু তাতে বন্ধুদের ‘ব্রেক আপ’ জায়গা পায়নি। জীবনে এক জন ভাল
বন্ধু থাকার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সুস্বাস্থ্য, ভাল থাকা, শান্তি। অথচ বন্ধু সম্পর্কটার গুরুত্ব যেন অন্য সব সম্পর্কের থেকে কিছুটা কম। এই সামাজিক মনোবিজ্ঞান (সোশ্যাল সাইকোলজি) নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা।
গবেষক গ্রেস ভিথ বলেন, ‘‘প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ কী ভাবে সামলানো যায়, সেটা নিয়ে সমাজে মোটামুটি স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। কিন্তু বন্ধুত্বে ভাঙন, ছাড়াছাড়ির কষ্ট কী ভাবে এক জন সামলাবে, সে কথা কেউ কোথাও বলে না।’’
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক কলেজ, কর্টল্যান্ডের মনোবিদ্যার অধ্যাপক কেটলিন ফ্ল্যানারির কথায়, ‘‘শৈশবে আমাদের প্রধান ভরসার জায়গা বাবা-মা। যত আমরা বড় হতে থাকি, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নতুন নতুন বন্ধু হয়। আমাদের মানসিক গঠন, আমাদের পরিচয়, কেমন আমরা... এর অনেকটাই তৈরি করে দেয় বন্ধুরা।
বন্ধু অনেকটা আয়নার মতো, গাইডও।’’ ফ্ল্যানারি আরও বলেন, ‘‘আমরা সামাজিক প্রাণী। গ্রহণযোগ্যতা খুঁজি। শুধু পরিবার নয়, সম-স্তরের মানুষের কাছ থেকেও আমাদের স্বীকৃতি প্রয়োজন। আর তাই বন্ধু সম্পর্কটা এত ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে।’’
ইউনিভার্সিটি অব মিনোসোটার গবেষণাটি হয়েছে মূলত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে, যে বয়সে বন্ধুত্ব ভাঙা খুব পরিচিত ঘটনা। ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সি ৩৫৪ জন মিডল স্কুল পড়ুয়া অংশ নিয়েছিল গবেষণায়। এদের ৮৬ শতাংশের কিছু দিন আগেই বন্ধুত্ব ভেঙেছিল। তারা জানায় কী ভাবে তাদের বিশ্বাস ভেঙেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ বাচ্চাই খুব জটিল অনুভূতির কথা জানিয়েছে, যেমন তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, সত্যিকারে সঙ্গী পায়নি কিংবা একসঙ্গে আর ভাল লাগছিল না।
বেশ কিছু পুরনো ঘটনাও খতিয়ে দেখেছেন ভিথরা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বন্ধুত্ব ঠিক ভাঙেনি, কিন্তু ‘সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু’ স্রেফ ‘ভাল বন্ধু’ হয়ে গিয়েছে। অনেক সময়ে আবার দূরত্ব, আলাদা শহরে চলে যাওয়া বন্ধুত্ব ফিকে করে দিয়েছে। গবেষণায় বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, বন্ধু সম্পর্কটাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বন্ধুত্ব ভাঙার কষ্টকে আরও সহমর্মিতা দেখানো উচিত। ভিথ বলেন, ‘‘কতগুলো বন্ধু আছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সেই বন্ধুদের কতটা ঘনিষ্ঠ, কতটা তাদের কথা ভাবি, সেটা অনুভব করা প্রয়োজন।’’ আবার এটাও বোঝা প্রয়োজন, যে বন্ধুত্ব কেউ আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে কেউ, সেটা ‘বিষাক্ত’ নয় তো? সে ক্ষেত্রে ভিথ ও ফ্ল্যানারির কথায়, ‘‘বিষাক্ত বন্ধুত্ব যেতে দেওয়াই ভাল, তাতে ভাল থাকা যায়।’’
বন্ধুত্বে ‘ব্রেক আপ’ সামলানোর জন্য ফ্ল্যানারির আরও পরামর্শ, ‘‘যে নেতিবাচক অনুভূতি মনের ভিতরে তৈরি হয়, সেটা মেনে নেওয়া শিখতে হবে। হতাশা, উদ্বেগের মতো অনুভূতি স্বাভাবিক। সেটাই জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’’ ভিথের কথায়, ‘‘এই ভরসাটুকু রাখতে হবে, এক দিন ঠিক এমন বন্ধু পেয়ে যাবে, যার উপর তুমি ভরসা করতে পারো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy