— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অনেক বাচ্চার মধ্যেই স্প্যাজ়ম দেখা দিতে পারে। হঠাৎ এই খিঁচুনিতে ভয় পেয়ে যাবেন না। বরং জেনে নিন ছোট থেকে একটু বড় বাচ্চাদের মধ্যে এই স্প্যাজ়মের কারণ। কেন খিঁচুনি হচ্ছে, তার পিছনে কোনও বড় রোগ নেই তো? সে ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ করবেন, সেটা জানা জরুরি। স্কেলিট্যাল মাসল ও ব্রঙ্কিয়াল স্মুদ মাসলে স্প্যাজ়ম নিয়ে আলোচনা করা হল—
কেন হয় স্প্যাজ়ম?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “স্প্যাজ়ম হল খুব কম সময়ের জন্য একটা জার্কি মুভমেন্ট। এটা মূলত হয় এপিলেপ্সি রোগীদের। আবার ইনফ্যান্টাইল স্প্যাজ়ম হতে দেখা যায়। সেটা কিছু মাসলে দেখা যায়। তখন বাচ্চার মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে আসে। দেখে মনে হয়, বাচ্চাটা যেন কাউকে সালাম করছে। তাই এর নাম সালাম অ্যাটাক। এক বছরের নীচে বা তার আশপাশের বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে এই স্প্যাজ়ম দেখা যায়। এর সঙ্গে এপিলেপ্সির যোগ আছে।” এখানে স্কেলিট্যাল মাসলে খিঁচুনি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি করে রোগনির্ণয় করা হয়। তার পর শুরু হয় চিকিৎসা। স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা হয় এই রোগে।
তবে সব খিঁচুনিই যে এই কারণে হবে, তা নয়। অনেকের হাত বা পায়ের মাসল শক্ত হয়ে গিয়েও হঠাৎ একটা জার্কি মুভমেন্ট দেখা যায়। হয়তো হাতটা নড়ে গেল। কিন্তু হাত দিয়ে সেখানটা ধরলে আবার থেমেও যায়। সেটা কিন্তু স্প্যাজ়ম নয়। স্প্যাজ়মের ক্ষেত্রে বাইরের কোনও প্রোভোকেশন থাকবে না। এবং বাইরে থেকে ধরে বা কোনও কিছু করে তা থামানোও যাবে না, বলে জানালেন ডা. রায়চৌধুরী।
ব্রঙ্কিয়াল স্মুদ মাসলেও স্প্যাজ়ম দেখা যায়
স্কেলিট্যাল মাসলের মতোই ব্রঙ্কিয়াল স্মুদ মাসলেও স্প্যাজ়ম বা খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “অ্যালভিয়োলাস বা এয়ার স্যাকের আগে যে ব্রঙ্কিয়াল মাসল থাকে, সেখানে সঙ্কোচন-প্রসারণ হলে স্প্যাজ়ম হয়। এ ক্ষেত্রে ব্রঙ্কিয়াল স্মুদ মাসলে স্প্যাজ়ম হচ্ছে।” এর ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে শিশুর। কিন্তু সেটা কেন হচ্ছে, তা বুঝতে হবে। “ব্রঙ্কিয়াল মাসলে স্প্যাজ়ম হওয়ার ফলে লুমেনটা (যে পথে শ্বাসবায়ু প্রবেশ করে) বন্ধ হয়ে যায় বা ছোট হয়ে আসে। ফলে শ্বাসগ্রহণ করার পরে, ব্রঙ্কিয়াল লুমেন ছোট হয়ে যাওয়ায় শ্বাসবায়ু ফুসফুসে পৌঁছতে পারছে না বা কম পৌঁছচ্ছে। তখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে থাকে। আবার জোর করে টেনে কিছুটা শ্বাসগ্রহণ করতে পারলেও কার্বন-ডাই অক্সাইড বেরোতে পারছে না। বেরনোর পথেও সেই ব্রঙ্কিয়াল লুমেন ছোট হয়ে যাওয়ায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়,” সহজ করে বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন ডা. রায়চৌধুরী। এই জন্যই চেস্ট স্প্যাজ়ম হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন বাচ্চা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া শুরু করে। শ্বাসবায়ুটা সরু জায়গার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে বলে তখন একটা সাঁ-সাঁ শব্দ বেরোয়। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজ়মার ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যাই দেখা যায়। ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়), এমফাইসেমা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ এই ধরনের স্প্যাজ়মকে ট্রিগার করে।
কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
ঠান্ডা হাওয়া লেগে, কড়া সুগন্ধীর গন্ধে, পাখির মল থেকে, সফট টয়েজ় ও বিছানা-পর্দার ধুলো, ধূপকাঠির গন্ধ থেকেও এটা ট্রিগার করতে পারে। তাই কোনও বাচ্চার এ ধরনের স্প্যাজ়ম এক বার হলে অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে। কোন জিনিসটা থেকে বাচ্চার স্প্যাজ়ম ট্রিগার হল, সেটা চিহ্নিতকরণ করা থাকলে পরবর্তী কালে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা যাবে। তার সঙ্গেই বাচ্চার কোন জিনিসে অ্যালার্জি সে বিষয়ে সচেতন থাকুন।
সব শিশুর ক্ষেত্রে কি এই ভয় থাকে?
অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এটা জেনেটিক। বাচ্চাটির মা-বাবার হয়তো অল্পেতেই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয়। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাটার সেই প্রবণতা দেখা যায়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে আবার মা-বাবার এই প্রবণতা না থাকলেও তার মধ্যে থাকতে পারে। এই সব শিশুর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ধোঁয়ায় থাকলে বা বাড়িতে কেউ ধূমপান করলে তা থেকেও বাচ্চার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার ঘর স্যাঁতসেঁতে থাকলে ঘরে অনেক সময়ে ফাঙ্গাস বাসা বাঁধে। তা থেকেও এই সমস্যা হতে পারে।
সন্তানের স্প্যাজ়মের কোনও লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ব্রঙ্কোডায়লেটর দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। বাচ্চাকে নেবুলাইজ়ার বা ইনহেলারের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রয়োজনে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধও দেন চিকিৎসকরা। তবে যে কোনও স্প্যাজ়মেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে হবে সন্তানকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy