মনঃসংযোগের সমস্যা থাকলে অনেক সহজ লড়াইও কঠিন মনে হতে পারে। আবার মন শান্ত থাকলে অনেক কঠিন লড়াইও জেতা যায়। এমন বলে গিয়েছেন মনিষীরাই। সেই সব বাণী যে সত্যি তার প্রমাণও পাওয়া যায় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে। দক্ষিণী ফিল্ম জগতের তারকা অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভুও জীবনের কঠিন সময়ে মন শান্ত রাখার মর্ম বুঝেছেন। এখন যখন সেই সময় অতীত, তখন তিনি প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তাঁর জীবনযুদ্ধে ভেঙে না পড়ার একটি কৌশল নিয়ে। সামান্থা বলেছেন, ‘‘পৃথিবীটা যতই গোলমেলে বা সমস্যাসঙ্কুল হয়ে উঠুক না কেন, আমি নিজের মধ্যে শান্তি খুঁজে পাওয়ার পথ দেখতে পেয়েছিলাম। কেউ যখন নিজের কাছে ফেরার রাস্তা খুঁজে পায়, তখন চার পাশের কোনও সমস্যাতেই সে নিয়ন্ত্রণ হারায় না।’’
বছরখানেক আগেও কাজ ছিল না সামান্থার হাতে। তার আগে বিয়ে ভেঙেছিল তাঁর। পেশির বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সামান্থা। বিয়ে ভাঙার মানসিক আঘাত এতটাই ছিল যে প্রকাশ্যে বহু বার ভেঙে পড়তেও দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রীকে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে সামান্থা নিজেকে বার করে এনেছেন। নতুন করে কাজ শুরু করেছেন। সুযোগ পেয়েছেন হলিউডি ওয়েবসিরিজ়ে অভিনয়ের। শান্ত এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকার মন না থাকলে যে তাঁর সেই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হত না, তা সামান্থা না বললেও বোঝা গিয়েছিল। তবে এ বার সামান্থা নিজেই জানালেন, তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গোপন কথা। ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়োয় তিনি জানিয়েছেন, কী ভাবে নিজের রুটিন বদলে ফেলেছেন তিনি। আর কী ভাবে সেই রুটিনের অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে এক বিশেষ ধরনের ধ্যান। যার নাম ‘উইম হফ ব্রিদিং’।
মনসংযোগের জন্য প্রাণায়ম করার কথা বলা হয়েছে প্রাচীন শাস্ত্রেও, যা আদতে নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ। সামান্থা জানিয়েছেন, প্রতি দিন সকালে সূর্যের আলোয় কিছু ক্ষণ সময় কাটানোর পরে তিনিও উইম হফ ব্রিদিং এক্সারসাইজ় করে আরও ২৫ মিনিটের ধ্যান করেন। এর কার্যকারিতা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘খুব সাধারণ একটা পদ্ধতি। প্রথমে খুব সহজ মনে হবে। কিন্তু জেনে রাখুন, যে কোনও বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমার জীবনটাকেই বদলে দিয়েছে এটি।’’
উইম হফ ব্রিদিং কী ভাবে করবেন?
শ্বাস নিয়ন্ত্রণের ওই প্রক্রিয়ার চারটি পর্যায় রয়েছে।
১। স্বাচ্ছন্দ্য
স্বস্তি বা আরাম হবে এমন জায়গা বসুন। আবার শুয়েও এটি করা যায়। যেটাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন সেটিই করুন। গায়ে আটকে থাকা বা চাপা পোশাক না পরে এমন পোশাক পরুন যা শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। বিশেষ করে খেয়াল রাখুন আপনার পেট সঙ্কোচন বা প্রসারণে যেন কোনও বাধা তৈরি না হয়।
২। ৩০ বার গভীর শ্বাস
চোখ বন্ধ করে সমস্ত চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত করুন। নাক অথবা মুখ দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। যখন শ্বাস গ্রহণ করবেন চেষ্টা করুন পেটকে যথা সম্ভব প্রসারিত করার। যখন দম পুরোপুরি নেওয়া হয়ে যাবে, তখন বাড়তি জোর না দিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন, এ ভাবে পর পর ৩০ বার শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
৩। দম বন্ধ
শেষ বার শ্বাস ছাড়ার পরে আর শ্বাস নেবেন না। তত ক্ষণ পর্যন্ত শ্বাস নেবেন না, যত ক্ষণ না মনে হচ্ছে শ্বাস না নিলেই নয়।
৪। আবার শ্বাস
এর পরে বুক ভরে অনেকটা শ্বাস নিন। পেটকে সম্পূর্ণ প্রসারিত হতে দিন। ১৫ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন তার পরে শ্বাস ছাড়ুন। এটি সম্পূর্ণ উইম হফ ব্রিদিং এক্সারসাইজ়ের একটি পর্ব।
সামান্থার পদ্ধতি কি সত্যিই কার্যকরী?
টেলিভিশন অভিনেত্রী এবং বর্তমানে যাপন সংক্রান্ত ব্যবসায়ী পূজা বেদী জানাচ্ছেন, সামান্থার উইম হফ পদ্ধতি শরীর এবং মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। তবে পূজা বলছেন, ‘‘যদি শুধুই শান্তি বা বিশ্রামের জন্য ধ্যান করতে চান, তবে ওই ধ্যান আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ উইম হফ সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে জাগ্রত করে। যা শরীরকে লড়াই করার শক্তি জোগায়। যদি শুধুমাত্র মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা থাকে তবে প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে জাগাতে হবে। যার জন্য উইম হফ খুব বেশি কাজে না-ও লাগতে পারে। আপনি কী চাইছেন, তার উপর নির্ভর করবে আপনি উইম হফ করবেন কি না।
সতর্কতা
বিরল ঘটনা হলেও উইম হফ করলে কারও কারও জ্ঞান হারানোর আশঙ্কা থাকে। তাই সব সময় এটি নিরাপদ জায়গাতেই বসে বা শুয়ে অভ্যাস করা উচিত।