Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2022

মা দুর্গার দাঁত মাজানো হয় অষ্টমীতে, চুলের খুশকি পরিষ্কার থেকে ফেসপ্যাক, সব থাকে উমার রূপটানে

দেবীর রূপটানের জন্য ফেসপ্যাকের ব্যবস্থাও থাকে বলে দাবি করেছেন বিশিষ্ট শাস্ত্রবিদ নবকুমার ভট্টাচার্য।

এখন সকলেই ভেষজ সামগ্রী দিয়ে সাজতে চান।  প্রতীকী চিত্র

এখন সকলেই ভেষজ সামগ্রী দিয়ে সাজতে চান। প্রতীকী চিত্র ছবি: পিক্স অ্যাবে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৩৮
Share: Save:

বাঙালির কাছে উমা ঘরের মেয়ে। কিন্তু হিন্দুশাস্ত্র মতে তিনি দেবী। তবে সেই দেবীর আরাধনায় একেবারে ঘরের মেয়েকে সাজিয়ে নেওয়ার মতো আয়োজন থাকে। এমনকী, দেবীর দাঁত মাজানো থেকে চুলের খুশকি পরিষ্কারের নিদান রয়েছে। দেবীর রূপটানের জন্য ফেসপ্যাকের ব্যবস্থাও থাকে বলে দাবি করেছেন বিশিষ্ট শাস্ত্রবিদ নবকুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘দেবীর মহাস্নানের সময়ে যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হয়, তাতেই দেখা যাচ্ছে, এখনকার বিউটি পার্লারে রূপচর্চার জন্য যা যা ব্যবহার করা হয়, তার সঙ্গে মিল রয়েছে। এখন সকলেই ভেষজ সামগ্রী দিয়ে সাজতে চান। দুর্গার ক্ষেত্রেও তেমনই ব্যবহার।’’

নবকুমার তাঁর লেখা ‘দুর্গাপুজোর জোগাড়’ বইতে দেবীর মহাস্নানের জন্য ৩৬টি দ্রব্যের ফর্দেরও উল্লেখ করেছেন। তাতে রয়েছে, তৈল হরিদ্রা, শঙ্খজল, গঙ্গাজল, উষ্ণোদক (গরম জল), গন্ধোদক, শুদ্ধ জল, পঞ্চগব্য, মধু, কুশোদক, পুষ্পোদক, ফলোদক, ঘৃত, দুগ্ধ, নারিকেলোদক, ইক্ষুরস, দধি, তিলতেল, বিষ্ণুতেল, শিশিরোদক, রাজদ্বারের মৃত্তিকা, চতুস্পথ (চার মাথার মোড়) মৃত্তিকা, বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা, গজদন্ত মৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা, নদীর উভয় কুল মৃত্তিকা, গঙ্গা মৃত্তিকা, সর্বতীর্থের মৃত্তিকা, সাগরোদক, সর্বৌষধি, মহৌষধি, পঞ্চকষায়, বৃষ্টি জল, সরস্বতী নদীর জল, পদ্মরেণু মিশ্রিত জল, নির্ঝরোদক, সর্বতীর্থের জল।

ওই বইতে এমনটাও উল্লেখ রয়েছে যে, দেবী নানা রকম জল দিয়ে স্নান করেন। গঙ্গার জল তো বটেই, সেই সঙ্গে দেবী স্নান করেন শঙ্খজলে। কেন এমন নিয়ম তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নবকুমার। জানিয়েছেন, শঙ্খ অর্থাৎ শামুকের দেহে যে জল থাকে তাকে পরিশ্রুত মনে করা হয়। এ ছাড়াও ঝর্না ও তীর্থের জলও লাগে দেবীর মহাস্নানে। দুধ, দই, ঘিয়ের সঙ্গে গোময়, গোমূত্রও সনাতন বিশ্বাসে পবিত্র এবং রোগ বিনাশক বলে মনে করা হয়। সব মিলিয়ে এটাকে বলা হয় পঞ্চগব্য।

আর লাগে পঞ্চ কষায়। তার মধ্যে রয়েছে জাম, শিমূল, বেড়েলা, বকুল ও টোপাকুল গাছের ছাল ভেজানো জল। আর দেবীর মুখ পরিষ্কারের জন্য চাই হাতির দাঁতে করে উপড়ে তোলা মাটি। এ ছাড়াও বেশ্যাদ্বার, রাজদ্বার-সহ নানা স্থানের মাটিও দরকার হয়। নিয়ম অনুসারে লাগে উইয়ের ঢিবির মাটিও। আর সব শেষে আটটি কলসিতে পূর্ণ বিভিন্ন স্থানের জল দিয়ে হয় দেবীর মহাস্নান। মধু তো থাকেই সেই সঙ্গে দেবীর শরীরের ময়লা তুলতে লাগে চিনি। এই কারণেই সম্ভবত চরণামৃতের স্বাদ মিষ্টি হয়।

নবকুমার জানান, দেবীর গায়ে প্রতীকী তেল ও হলুদ মাখানো হয়। তাঁর দাবি, এতে শরীরের জড়তা কেটে যায়, চর্মরোগ নির্মূল হয়, মুখে আসে ঔজ্জ্বল্য। মুখের কালো ছোপ, ব্রণর সমস্যা দূর হয়। চোখ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করে হয় শঙ্খ-জল। নবকুমার বলেন, ‘‘শাস্ত্রমতে দেবীকে গরম জল বা উষ্ণোদকে স্নান করানো হয়। এতে ক্লান্তি দূর হয় আবার ময়লা চলে যায়।’’ এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চামৃত দিয়ে প্যাক তৈরি করা বহু আলোচিত। অনেকেই বাড়িতে দই, দুধ, ঘি, মধু, চিনি দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করেন। পুজোতেও তেমনই বিধি রয়েছে। আবার স্নান করানো হয় ‘পঞ্চকষায়’ দিয়ে। জাম, শিমূল, বেড়েলা, বকুল ও টোপাকুল— এই পাঁচটি গাছের ছাল জলে ভিজিয়ে দেবীকে স্নান করানো হয়।’’ তাঁর দাবি, দেবীর কেশচর্চার জন্যই থাকে জাম গাছের ছাল। এই ছাল চুলের খুশকি দূর করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE