‘কস্টিউম’ আর ‘প্লে অ্যাক্টিং’ মিলে নাম হয়েছে ‘কসপ্লে’। শুনতে যতটা বালখিল্য মনে হচ্ছে, বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। যাঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা নিজের শিল্পী হিসেবেই তুলে ধরেন বাকি দুনিয়ার কাছে। আর তাতে খুব একটা ভুল নেই। প্রিয় কমিক চরিত্রটাকে বইয়ে যেমন দেখেছেন বা সুপারহিরো সিনেমায় যে পোশাকগুলো অনেক সময়ই ভিএফএক্স’এর জাদুতে তৈরি হয়, সেগুলো নিজে হাতে তৈরি করেন এঁরা। মেকআপ করে হুবহু একই রকম রূপ নেন তাঁরা।
এই সাজের পিছনে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম। এবং অনেক সময় এর পিছনে খরচও হয় প্রচুর। কিন্তু শুধু সাজগোজ করলেই তো হবে না। এরপর কী করে আয় করেন এই কসপ্লে শিল্পীরা? সহজ উত্তর পরিচিত বাড়িয়ে। নেটমাধ্যমে ছবি দেন, ভিডিয়ো তৈরি করেন ইউটিউবে, বিভিন্ন কমিক কনগুলোয় গিয়ে অনুগামীদের সংখ্যা বাড়ান। যে যত জনপ্রিয়, তাঁর আয় তত বেশি। আর পাঁচজন প্রভাবীরা ঠিক যে পথে টাকা উপার্যন করেন, এঁরাই তাঁদের চেয়ে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। বরং এগিয়েই রয়েছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
এ ছাড়াও তাঁদের উপার্যনের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। অনুগামীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে নিজস্ব শিল্প বিক্রি করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির জন্যেও মোটা টাকা আয় করেন এঁরা। এখন বিশ্বজুড়ে নানা রকম সংস্থা তৈরি হয়ে গিয়েছে যেগুলো এঁদের আয় করতে সাহায্য করে। ঠিক তারকাদের সব রকম কাজকর্ম দেখার ভার যেমন কিছু সংস্থা নিয়ে থাকে, এঁদের ক্ষেত্রেও তাই। জনপ্রিয়তা বাড়লে কমিককনে গেলেও এঁরা ১০০০ থেকে ৩০০০ ডলার উপার্যন করতে পারেন মোটে কয়েক ঘণ্টায়!
হ্যারি পটার, লর্ড অফ দ্য রিঙ্গস, গেম অফ থ্রোন্স, মার্ভেল-ডিসি কমিক্সের চরিত্র কসপ্লে দুনিয়ায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। কিন্তু তা ছাড়াও বিপুল ভাবে জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমে এবং মাঙ্গা। যাঁরা এই ভাবে সাজেন, তাঁদের অনুগামীর সংখ্যা আকাশছোঁয়া। বিভিন্ন ভিডিয়ো গেমের চরিত্রেরও চাহিদা রয়েছে। কল্প বিজ্ঞান, ফ্যান ফিকশন— কোনও কিছুই বাদ নেই। অনেক সময় কসপ্লে শিল্পীরা জনপ্রিয় হয়ে গেলে এই চরিত্রগুলোই একটু নিজের মতো করে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব তৈরি করে ফেলেন। তাতে আরে মজে যান অনুগামীরা।
কেউ কেউ আবার সেই চরিত্র বা ব্যক্তিত্ব এতটাই আত্মস্থ করে ফেলেন যে স্বাভাবিক জীবনেও তাঁরা এভাবেই সাজগোজ করে থাকেন। বাস্তব জীবনের কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালাতে অনেক সময়ে এই পথ বেছে নেন অনেক শিল্পী। রাস্তাঘাটে বেরোলে যখন অন্য লোকেরা তাঁদের চরিত্রের নাম ধরেই সম্বোধন করেন, সেই খ্যাতি উপভোগ করেন এঁরা। তখন আর বাস্তব জীবনে ফিরতে মন চায় না তাঁদের।
এঁদের অনুগামীর সংখ্যা যেমন অনেক, তেমনই সমাজে বাস করার বিড়ম্বনাও কম নয়। বেশির ভাগ মানুষই তাঁদের এই অদ্ভুত জীবনযাপন মেনে নিতে পারেন না। তাঁদের খ্যাপাটে, বেকার, উদ্ভট মনস্ক— নানা ধরনের অ্যাখ্যা দেন। আত্মীয়স্বজনদের নিজেদের পেশা সম্পর্ক বোঝানো অসুবিধে হয়ে যায় এঁদের পক্ষে। বিশেষ করে অনেক বাবা-মা কিছুতেই বুঝতে পারেন না, তাঁদের সন্তানেরা আসলে ঠিক কী করছেন!
এই পেশায় সুন্দরী মহিলাদের সুবিধে একটু বেশি। নেটমাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে যান তাঁরা। কসপ্লে’র বিভিন্ন সামাজিক পাতায় চোখ রাখলে বুঝতে পারবেন, সেখানে মেয়ে শিল্পীদের সংখ্যাই বেশি। তবে পরিশ্রম এবং গুণ না থাকলে এই পেশায় টিকে থাকা যায় না। সৃষ্টিশীলতা না থাকলে শুধু রূপ দিয়ে বেশি দিন অনুগামীদের ধরে রাখা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy