গ্লুকোজ় পাউডার খাওয়ার আগে জেনে নিন আদৌ তা শরীরের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়। প্রতীকী ছবি।
গরম ক্রমশ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপপ্রবাহ। কিন্তু তা বলে স্কুল, কলেজ, অফিস তো বন্ধ থাকছে না। অথচ, ক্রমাগত ঘামে বাড়ছে ক্লান্তি। স্কুলে গিয়ে বাচ্চা যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে, মায়েরা গ্লুকোজ় পাউডার মেশানো জল তাই বোতলে ভরে দিচ্ছেন। কিন্তু এ ধরনের গ্লুকোজ় পাউডার খাওয়ার আগে আদৌ শরীরের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়, তা জানা জরুরি। পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরীর মতে, গ্লুকোজ় বা শর্করা অবশ্যই শরীরে প্রয়োজন। তবে তার জন্য গ্লুকোজ় পাউডারের প্রয়োজন নেই। আমাদের দৈনন্দিন নানা খাবার থেকেই শরীরে গ্লুকোজ়ের চাহিদা মিটতে পারে।
রাসায়নিক গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী খাদ্য উপাদান ছ’প্রকার - প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং জল। এই সব খাদ্য উপাদানসমূহ সম্মিলিত ভাবে কাজ করে দেহের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে। এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে পাওয়াযায় শরীরের অন্যতম মূল পুষ্টি উপাদান শর্করা বা গ্লুকোজ়।দেহের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি ও তাপশক্তির প্রায় ৬০ থেকে৭০ শতাংশ আসে এই জাতীয়খাদ্য থেকেই।
চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলছে?
খাবারে শর্করা মূলত তিন ধরনের হয়, এক-শর্করা, দ্বি-শর্করা এবং বহু-শর্করা। ডা. সুবীর মণ্ডলের মতে, এক শর্করা জাতীয় খাবারে রক্তে সরাসরি গ্লুকোজ় মেশে। সাধারণ মানুষের মূলত এই বহু-শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া ভাল। কারণ এ ধরনের খাবার হজম হতে সময় লাগে। পরিপাকের ফলে তা থেকে ধীরে ধীরে শরীরের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ় পাওয়া যায়। ডা. মণ্ডলের কথায়, “সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের ধরনের উপরেই তাঁর শরীরে গ্লুকোজ়ের চাহিদার মাত্রা কতটা হবে, তা নির্ভর করবে। মাঠেঘাটে কাজ করে খাওয়া মানুষ কিংবা খেলোয়াড়দের শরীরে যে পরিমাণ গ্লুকোজের চাহিদা থাকবে, স্কুল-কলেজ, অফিসে চাকরি করা মানুষের স্বাভাবিক ভাবেই তার চেয়ে কম হবে। পাশাপাশি, চটজলদি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে চাইলে তবেই একমাত্র গ্লুকোজ় পাউডার খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে তাতে সামান্য নুন দিলে স্বস্তি হবে তাড়াতাড়ি।” ডায়াবিটিস রোগীর সুগার লেভেল কমে গেলে এই পরামর্শ চিকিৎসকেরা দেন।
কী খাবেন?
পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর মতে, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় যে কোনও খাবার থেকেই প্রচুর শর্করা পাওয়া যায়। শরীরে শর্করার চাহিদা মেটাতে চিনি, গুড়, মধুর পাশাপাশি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চিয়া, ফ্লেক্স ইত্যাদি বীজ, মিষ্টি ফল ও ফলের রস খেতে পারেন। ভাত, রুটি, পাঁউরুটিইত্যাদি খাবার থেকেও শর্করাপাওয়া যায়। খেতে পারেন নানা ধরনের ডাল, চিঁড়ে, সুজি। আলু, সবুজ শাকসবজি ছাড়াওকাজু বাদাম, কিশমিশ, আমন্ড, খেজুর ইত্যাদি ড্রাই ফ্রুটসের মধ্যেও থাকে গ্লুকোজ়। তাছাড়াবার্লি, কর্ণফ্লেক্স, কিনোয়ার মতো শস্যজাতীয় খাবার থেকেও পাবেন শর্করা।
গ্লুকোজ়ের প্রয়োজনীয়তা
শরীরে প্রতি এক গ্রাম শর্করা থেকে প্রায় চার কিলো ক্যালোরি তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়। তাই শক্তি উৎপাদনের সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উৎস শর্করা। পাশাপাশি, শর্করা শরীরে থাকা প্রোটিনকে রক্ষা করে। তা ভেঙে তাপ উৎপাদন হওয়া থেকে শরীরকে বাঁচায়। ফ্যাট জাতীয় পদার্থের দহনেও সাহায্য করে শর্করা। প্রয়োজনাতিরিক্ত শর্করা গ্লাইকোজেন রূপে পেশি ও যকৃতে জমা থাকে, যা প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বহুশর্করা জাতীয় কিছু খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেও সাহায্য করে। তাছাড়া, মস্তিষ্কের শক্তি, ব্রেনের কার্যক্ষমতা, শরীরের স্নায়বিক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যকরে শর্করা।
ক্ষতিকর দিক
শর্করা যেমন প্রয়োজন, তেমনই অতিরিক্ত গ্লুকোজ়ও কিন্তু শরীরের পক্ষে ভাল না। তা দেহে মেদ রূপে জমা হয়। ফলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। মাত্রাতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ দন্তক্ষয়েরও কারণ। অনেকসময়েই শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিতে ডিমেনশিয়া, হৃদযন্ত্রের রোগও হয়ে থাকে। কার্বোহাইড্রেটের অভাবে যেমন দেহের ওজন কমে, তেমনই এই জাতীয় খাবার থেকে প্রাপ্য শর্করার অভাবে শরীরের কর্মশক্তিও হ্রাস পায়।
মনে রাখা দরকার
কোয়েলের মতে, গ্লুকোজ় প্রয়োজন বলে, মুঠো মুঠো চিনি খাওয়াও ঠিক না। বরং চিনি কিংবা কৃত্রিম সাপ্লিমেন্টস না নিয়ে বদলাতে হবে রোজের খাদ্যতালিকা। ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে গ্লুকোজ় পাউডার একেবারেই ঠিক না। যাঁদের একটানা একজায়গায় বসে কাজ, তাঁদের ক্ষেত্রেও গ্লুকোজ় পাউডার উপকারের বদলে, অপকার করতে পারে। তাই স্বাভাবিক খাবারেই মেটাতে হবে শরীরের গ্লুকোজ়ের চাহিদা।বাচ্চাদের বোতলে গ্লুকোজ় পাউডার মেশানো জল না ভরে, টিফিন বক্সে ভরে দিন স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। সঙ্গে দিন ফলের রস। চটজলদি এনার্জি পেতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy