অফিসে কাজের ফাঁকে, সন্ধেবেলা মুখরোচক হিসেবে কিংবা বাড়ির খুদেদের মন ভোলাতে এমন কিছু দরকার হয়, যা খেতে সুস্বাদু, আবার স্বাস্থ্যকরও। তেমনই এক ধরনের স্ন্যাক্স হল মাখনা। এটি অবশ্য পদ্মবীজ বা ফক্স নাট নামেও পরিচিত। শোনা যায়, আয়ুর্বেদ এবং চৈনিক ওষধিতেও এই পদ্মবীজের প্রচলন ছিল।
মাখনা কেন খাবেন?
• মাখনা প্রোটিন এবং ভাল মানের কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। কিম্পফেরল নামক এক ধরনের উপাদান এতে থাকায়, মাখনা অ্যান্টি-এজিং এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরিও। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী বলছেন, ‘‘মাখনা ফাইবারে ভরপুর। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স লো। আবার কোনও ট্রান্স ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই। অথচ ভাল পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। ফলে মাখনা হেলদি স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়। এটি যেমন ওজন কমাতে সাহায্য করে, তেমন আবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণও করে।’’
• আবার পদ্মবীজে আয়রন থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনেও এর ভূমিকা রয়েছে। এতে বিশেষ কিছু ধরনের উৎসেচক থাকায় এটি অ্যান্টি-এজিংয়ের কাজ করে।
• আবার মাখনায় ম্যাগনেশিয়ামও পাওয়া যায়। ফলে ভাল থাকে হৃৎপিণ্ড।
• প্রত্যেক দিন যদি অল্প পরিমাণে মাখনা খাওয়া যায়, তা হলে মোকাবিলা করা যায় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার মতো সমস্যাও। পদ্মবীজে থাকা উপাদান আসলে স্ট্রেস কমিয়ে মানুষকে ঘুমোতে সাহায্য করে। তবে এক দিন খেলেই এর ফল পাওয়া যাবে না। এর জন্য নিয়মিত রোস্টেড মাখনা খাওয়া জরুরি।
• লো গ্লাইসেমিক রেট সমৃদ্ধ ফক্স নাট সারা দিন ধরে চনমনে থাকতে সাহায্য করে। অল্প মাখনা খেলেই অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে বলে বারবার খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যায়।
• আবার মাখনা কিডনি ভাল
রাখে। শরীরে মেটাবলিজ়মের হার বাড়িয়ে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে লিভারকে।
• শুকনো খোলায় নাড়াচাড়া করা ৫০ গ্রাম মাখনায় থাকে প্রায় ১৮০ ক্যালরি। তাতে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট অথবা সোডিয়াম থাকে না। ফলে ওজন কমাতে মুখরোচক স্ন্যাক্স হিসেবে মাখনা ভীষণ জনপ্রিয়। তবে এ ক্ষেত্রে মাখনা খেতে হবে শুকনো খোলায় নেড়ে। তাতে প্রয়োজন হলে অরিগ্যানো জাতীয় নানা ধরনের হার্ব মেশানো যেতে পারে মাত্র। কিন্তু কারও যদি লক্ষ্য হয় ওজন কমানো, তা হলে কখনওই মাখন, গলানো চকলেট, ক্যারামেল সস ছড়িয়ে আরও উপাদেয় করে খাওয়া চলবে না। তা হলে সেই পদ আর হেলদি স্ন্যাক্স থাকবে না।
কী ভাবে খাবেন?
মাখনা থেকে উপকার পেতে হলে ড্রাই রোস্ট করে খাওয়াই শ্রেয়। তবে অনেকে স্টার্টার থেকে মেন কোর্স হয়ে ডিজ়ার্ট... মাখনা দিয়ে তৈরি করেন হরেক ধরনের পদ।
ড্রাই রোস্ট মাখনা
ড্রাই রোস্ট মাখনা তৈরি করার জন্য কড়াই গরম করে তাতে মাখনা দিয়ে রোস্ট করুন। পপকর্নের মতো আপনাআপনিই মাখনা ফুলে উঠবে। এর পরে সামান্য নুন ছড়িয়ে খেতে পারেন। তবে মাখনা রোস্ট করে নুন ছাড়াও খাওয়া যায়। রোজ়মেরি, অরিগ্যানো, ড্রায়েড বেসিল জাতীয় নানা ধরনের হার্ব ব্যবহার করতে পারেন। আবার ইচ্ছে হলে চিলি ফ্লেক্স ব্যবহার করে মাখনাকে আরও সুস্বাদু করে তুলতে পারেন।
রান্নাতেও মাখনা
পোলাও, টিক্কা, গ্রেভি কিংবা পায়েস... মাখনা ব্যবহার করা যায় নানা পদে। সিদ্ধ আনাজের সঙ্গে মাখনা গুঁড়ো চটকে, মশলা দিয়ে মেখে নিন। সামান্য তেলে হালকা করে ভেজে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন পুষ্টিগুণও। যেমন পালং মাখনা। এতে পালং এবং মাখনা... দুইয়েরই গুণাগুণ অব্যাহত থাকে।
পালং মাখনা
উপকরণ: মাখনা ১ কাপ, পালং শাক ১ আঁটি, পেঁয়াজ কুচি আধ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ১টি, গরম মশলা গুঁড়ো আধ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়ো আধ টেবিল চামচ, জিরে গুঁড়ো আধ টেবিল চামচ, কসুরি মেথি আধ টেবিল চামচ, গোটা জিরে আধ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধ টেবিল চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো আধ টেবিল চামচ, মাখন ১ টেবিল চামচ, সাদা তেল ১ টেবিল চামচ, নুন স্বাদ মতো।
প্রণালী: ফুটন্ত জলে পালং শাক কয়েক মিনিট রেখে নামিয়ে নিন। বরফঠান্ডা জলে সিদ্ধ পালং ডুবিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে জল থেকে ছেঁকে তুলে মিহি করে বেটে নিন। কড়াইয়ে ঘি ও মাখন গরম করে জিরে ফোড়ন দিন। তাতে পেঁয়াজ বাটা দিন। সোনালি রং ধরলে আদা বাটা, রসুন বাটা ও কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে নাড়ুন। তাতে একে একে মাখনে রোস্ট করা মাখনা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো ও পালং বাটা দিন। ভাল করে নাড়তে নাড়তে ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো দিন। ঘন হয়ে এলে কসুরি মেথি ছড়িয়ে চাপা দিন। দু’মিনিট পরে নামিয়ে নিন।
পেট ভরাতে কিংবা স্ন্যাক্স হিসেবে, রোজকার তালিকায় অল্প মাখনা রাখতেই পারেন। এতে স্বাদ ও শরীর... খেয়াল রাখা হবে দুইয়েরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy