মাসাজ, আধুনিক নারীর নিজস্ব সময় যাপনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। সালঁর নিভু আলোয়, সুগন্ধি-সহযোগে নরম হাতের ওম জুড়িয়ে দেয় শরীর, দূর হয় মনের ক্লান্তি। রোজের দৌড়ঝাঁপে ত্বকের টিসুতে যে স্ট্রেস জমে, তাকে বার করে দিয়ে টিসুগুলিকে আবার কর্মক্ষম করে তোলার প্রক্রিয়াই হল মাসাজ। ত্বকের পুষ্টি এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলাও মাসাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
মাসাজের উপকারিতা বহুবিধ। তবে এর প্রধান উদ্দেশ্য রিল্যাক্সেশন। একটি যথাযথ মাসাজ কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে শরীর ও মনে স্থিতাবস্থা তৈরি হয়। ওই নিবিড় প্রশান্তির সময়ে শরীরে অন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগুলি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে, যার ফলে আরাম ভাল ভাবে অনুভূত হয়। বডি মাসাজ করানো সকলের পক্ষে সম্ভব না হলেও ফেস মাসাজের চাহিদা মহিলাদের মধ্যে বেশি। তবে মনে রাখতে হবে, ফেস মাসাজ কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। আবার ত্বকের ক্ষতির কারণও নয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফেস মাসাজ করাতে হবে। তবেই মুখের জেল্লার তারতম্য বুঝতে পারবেন। সঙ্গে চাই, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থ জীবনযাপন।
ফেস মাসাজের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেস মাসাজে যে প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়, তা যেন ত্বকের গভীরে প্রতিটি রন্ধ্রে ভাল ভাবে পৌঁছতে পারে, সেটাই মাসাজের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এ ছাড়া রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো, ত্বকের হাইড্রেশনের জন্য, সাইনাস টিসু উদ্দীপ্ত করাও ফেস মাসাজের কাজ।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী কেমন হবে মাসাজের স্ট্রোক?
শুষ্ক, তৈলাক্ত ও সাধারণ— ত্বক প্রধানত এই তিন প্রকার। সালঁয় পুরো মুখাবয়ব তিন রাউন্ড করে মাসাজ করার কথা। চিবুক, চোখের চারপাশ, নাকের দু’পাশ, কপাল, গাল, ঠোঁটের চারপাশ... প্রতিটি অংশ ধরে ধরে মাসাজ হবে।
• তৈলাক্ত ত্বক: অয়েলি স্কিনে খুব হালকা মাসাজ হবে। কারণ এই ত্বকে যত বেশি মাসাজ হবে, তত বেশি সিবাম গ্ল্যান্ড উদ্দীপিত হবে। তেল ক্ষরণের পরিমাণ বাড়বে। ফিঙ্গারটিপ দিয়ে মাসাজ হবে। পুরো হাত দিয়ে মাসাজ খুব কম হবে। তৈলাক্ত ত্বকে মূলত ক্লিনিংয়ের জন্য মাসাজ হয়। সেখানে শুধু আপওয়ার্ড বা আউটওয়ার্ড মোশনে মাসাজ করলেই হয়। আবার স্ক্রাবিংয়ের সময়ে চোখের চারপাশে মাসাজেরও প্রয়োজন হয় না।
• ব্রণর সমস্যায়: শহরের এক নামী সালঁর কর্ণধার মৌসুমী মিত্র জানালেন, ত্বকে বেশি ব্রণ থাকলে হ্যান্ড-মাসাজ করা উচিত নয়। কিন্তু গ্রাহককে অনেক সময়ে তা বোঝানো কঠিন হয়। তাই হালকা মাসাজ করে দেওয়া হয় মেশিনের মাধ্যমে।
• সাধারণ ত্বক এবং শুষ্ক ত্বক: ফুল হ্যান্ড-মাসাজ শুধু এই দু’ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রডাক্টটি পুরো মুখে লাগিয়ে আপ অ্যান্ড ডাউন মোশনে মাসাজ হবে।
বিউটি কনসালট্যান্ট প্রিসিলা কর্নারের মতে, যে কোনও ধরনের অর্গ্যানিক ফেস মাসাজ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়—
• এফলোরাজ: এর কাজই হচ্ছে, স্ক্যাল্প বা মুখের ত্বককে জাগিয়ে তোলা। খুব হালকা মাসাজ। পরবর্তী পর্যায়ের ভিত্তি তৈরি করে বলা যায়।
• পেট্রোসাজ: ত্বকের গভীরে যাতে পৌঁছয়, সেই ভাবে মাসাজ করা হয়। ত্বকের টক্সিন বার করা, কোথাও যদি টিসু নেটওয়র্কে ময়লা জমে থাকে, তা নিষ্কাশন করা হয়।
• টিপোমেন বা ট্যাপিং: হাতের আঙুল দিয়ে ট্যাপ করা হয়। এটিরই একটি রূপভেদ ভাইব্রেশন পদ্ধতি। যেখানে আঙুল দিয়ে ভাইব্রেশন তৈরি করা হয়। ত্বকের বিভিন্ন প্রেশার-পয়েন্টগুলোকে জাগিয়ে তোলা হয়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়ে।
স্ক্যাল্প মাসাজ
মাসাজের এই পদ্ধতিগুলি স্ক্যাল্প মাসাজের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। ত্বকের মতোই চুলের পুষ্টির জন্য এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য স্ক্যাল্প মাসাজ করা জরুরি। চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে এবং নতুন চুল গজানোর ক্ষেত্রেও মাসাজের উপকারিতা রয়েছে।
খুঁত ঢাকতে মাসাজ
• ডাবল চিন: মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে ডাবল চিন আড়াল করার ইচ্ছে অনেকেরই। সাময়িক ভাবে এটি করার উপায় রয়েছে। ফেসিয়াল মাসাজের সঙ্গে যদি রাবার মাস্ক ব্যবহার করা হয় (যেখানে থুতনি থেকে গালের উপর দিয়ে ঢেকে মাথার উপরে একটি গজ কাপড় ১৫-২০ মিনিট বেঁধে রাখা যায়), তবে মুখের আকার ২-৩ ইঞ্চি পর্যন্ত সংকুচিত দেখাতে পারে।
• বলিরেখা কমাতে: চামড়া শিথিল হতে থাকলে বা চোখের কোণের চামড়ায় ভাঁজ পড়লেই, ফেশিয়াল বা ফেস মাসাজের প্রয়োজন অনুভব করেন বহু মহিলা। ২৫ বছর বয়সের পর থেকেই ত্বকের যে স্বাভাবিক পিএইচ ব্যালান্স, তা কমতে থাকে। তবে যাঁরা মডেলিং বা অভিনয় করেন কিংবা পারফর্মিং আর্টসের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে আরও আগে থেকেই ত্বকের এই পরিবর্তন শুরু হয়। কারণ সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি ত্বকের যে ক্ষতি করে, চড়া আলোর মধ্যে থেকে যাঁদের কাজ করতে হয়, তাঁদের ত্বকেও একই কু-প্রভাব দেখা যায়।
সূর্যের রশ্মি, ত্বকের টাইপ, জিনগত কারণ, ত্বকে কোলাজেন ও ফ্যাট কমে যাওয়া, ফেশিয়াল স্যাগিং... সব মিলিয়ে বলিরেখার জন্ম হয়। ফেশিয়াল মাসাজের মাধ্যমে এই বলিরেখার ‘ফাইন লাইনিং’ অনেকটা কমানো যায়।
তবে প্রিসিলা এবং মৌসুমী দু’জনের মতেই, মুখের ত্বকে কোনও গুরুতর সমস্যা থাকলে কোনও রকম মাসাজ করানো উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে বিউটি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ওই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন এবং প্রয়োজন বুঝে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পদ্ধতিগত তফাতের ভিত্তিতে ফেশিয়াল মাসাজ
• লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ মাসাজ: শরীরের টক্সিন বার করার জন্য এই মাসাজ করা হয়। সব ধরনের ত্বকেই এটি করা যায়।
• প্রেশার-পয়েন্ট মাসাজ: শরীরের বিভিন্ন প্রেশার-পয়েন্ট ধরে ধরে মাসাজ করা যায়। এটিও সব ধরনের ত্বকে করা যায়। সাধারণত স্ট্রেস কমানোর জন্য এই মাসাজ করা হয়।
• কোবিডো মাসাজ: জাপানি পদ্ধতির এই মাসাজ সাধারণ ত্বক ও বলিরেখাযুক্ত ত্বকে করা হয়।
• ক্লাসিক মাসাজ: সালঁয় সাধারণ ফেশিয়াল করাতে গেলে যে মাসাজ করা হয়, তা ক্লাসিক বা নর্মাল মাসাজ।
বিশেষজ্ঞের মতে, ফেস বা স্ক্যাল্প মাসাজের সময়ে ঘাড় ও পিঠের মাসাজও জরুরি। ত্বকের টেক্সচার ও সমস্যা বুঝে বিউটি থেরাপিস্টরা মাসাজের পদ্ধতি ও স্ট্রোক বদলান। পুজোর আগে এ বার দেখে নিন আপনার কোন মাসাজ দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy