Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রেগন্যান্সির সময়ে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার বা প্রেশার ডেকে আনতে পারে বিপদ। সতর্ক থাকুন
Pregnancy

Pregnancy: মা হওয়ার আগে রাশ টানুন সুগারে

মায়ের ডায়াবিটিস থাকলে বাচ্চার ম্যাক্রোসমিয়া হতে পারে, অর্থাৎ সে আয়তনে বড় হতে পারে।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৩
Share: Save:

সন্তান ধারণের পরিকল্পনা শুরু করার সময়ে যে ক’টি বিষয় প্রথমেই মাথায় রাখা দরকার, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে প্রেগন্যান্সি প্ল্যানিংয়ের আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য ব্লাড প্রেশারের ক্ষেত্রেও। একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার রুটিন টেস্টে যদিও প্রেশার, সুগার সবই পর্যবেক্ষণ করা হয়, তবুও ডায়াবিটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে সাবধান হওয়া দরকার আগে থেকেই।

ডায়াবিটিস ও প্রেগন্যান্সি

প্রেগন্যান্সি আসার পরে নয়, গর্ভধারণের আগে থেকেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এমন ওষুধ খেতে হবে যা প্রেগন্যান্সিতে ‘সেফ’ ড্রাগস বলে পরিচিত। গাইনিকলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বললেন, ‘‘কেউ যদি এ সময়ে ডায়াবিটিসের চিকিৎসা শুরু করেন, তাঁকে সাধারণত ইনসুলিন বা মেটফর্মিন জাতীয় ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। দু’টিই প্রেগন্যান্সির পক্ষে সেফ। এইচবিএওয়ানসি লেভেল ৬-এর নীচে করে নিয়ে তবেই সন্তানধারণের পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। কারণ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যদি গর্ভবতী মায়ের সুগার লেভেল বেশি থাকে, তা হলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে তার কনজেনিটাল ম্যালফরমেশন, অর্থাৎ জন্মগত বিকৃতি হতে পারে।’’

‘‘অনেকেই পরামর্শ না নিয়ে নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে ডায়াবিটিস কন্ট্রোলের চেষ্টা করে থাকেন, যা একেবারেই উচিত নয়,’’ সতর্ক করলেন ডা. চট্টোপাধ্যায়। সুগার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ যদি প্লাসেন্টা পেরিয়ে গর্ভস্থ সন্তানের কাছে পৌঁছে যায়, হাইপোগ্লাইসিমিয়া হয়ে সেই বাচ্চাটির ক্ষতি হতে পারে। ‘‘তাই ইঞ্জেকশনের মধ্যে ইনসুলিন আর ওরাল মেডিসিনের মধ্যে মেটফর্মিন— সাধারণত এই দু’টি ওষুধের পরামর্শই দিয়ে থাকি আমরা,’’ বললেন ডা. চট্টোপাধ্যায়।

সময় থাকতে সাবধানতা

পেরিকনসেপশনাল পিরিয়ড, অর্থাৎ সন্তান ধারণের আগে যখন মায়ের শরীর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেয়, সুগার-প্রেশার নিয়ন্ত্রণের সময়ও তখন থেকেই। মায়ের গর্ভে প্রথম তিন মাসের মধ্যেই বাচ্চার হৃদ্্যন্ত্র, ফুসফুস, চোখ, মস্তিষ্ক সব ডেভেলপ করতে আরম্ভ করে দেয়। গর্ভবতী মা যত তাড়াতাড়ি সুগার কন্ট্রোল করবেন, ততই তাঁর সন্তানের জন্মগত বিকৃতির সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।

মায়ের ডায়াবিটিস থাকলে বাচ্চার ম্যাক্রোসমিয়া হতে পারে, অর্থাৎ সে আয়তনে বড় হতে পারে। বাচ্চার চারপাশে খুব বেশি জল জমে থাকা, শিরদাঁড়ায় সমস্যা, হৃদ্্যন্ত্রে ফুটো, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোমের মতো নানা অসুবিধে দেখা দিতে পারে জন্মের সময়ে। অনেক সময়ে অজান্তেই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস। তাই জরুরি ঠিক সময়ে পরীক্ষা করানো।

জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস

প্রেগন্যান্সির সময়ে প্রথম বার সুগার ধরা পড়ে অনেকেরই। আগে থেকে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না এই জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে। যাঁদের পরিবারে সুগারের রোগী আছেন বা যাঁদের ওবেসিটি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির সময়ে রক্তে সুগারের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা খুব জরুরি। ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা একটা গ্লুকোজ় চ্যালেঞ্জ টেস্ট করি, যেখানে রোগীকে খালি পেটে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ় খাইয়ে দু’ঘণ্টা বাদে পিপিবিএস (পোস্ট প্রান্ডিয়াল ব্লাড সুগার) টেস্ট করি। যদি সেই মাত্রা ১৫০-এর উপরে থাকে, তবে সেই অবস্থাকে ইমপেয়ার্ড গ্লুকোজ় টলারেন্স বলা হয়। সেটিই জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসের দিকে ইঙ্গিত করে।’’ প্লাসেন্টা অনেক ধরনের হরমোন ক্ষরণ করে এবং মায়ের দেহে ইনসুলিনকে কাজ করতে দেয় না। তাই প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়েট অনুসরণ করা, খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হাঁটার মতো দাওয়াই দেওয়া হয় রোগীকে। তাতেও যদি না কমে, তা হলে ওষুধ দেওয়া হয়।

ফিরে ফিরে আসে

প্রেগন্যান্সিতে ডায়াবিটিস দেখা দিলেও সন্তানের জন্মের পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ফের। তবে জীবনযাত্রায় বদল না আনলে ৪০-৪৫ বছর বয়সে ফিরে আসতে পারে ডায়াবিটিস।

জরুরি প্রেশার নিয়ন্ত্রণও

সাধারণত যে বয়সে সন্তান ধারণ করা হয়, সে বয়সে খুব বেশি মহিলার হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা থাকে না। যদি রুটিন টেস্টে ব্লাড প্রেশার বেশি আসে, তা হলে রোগীর কিডনির সমস্যা আছে কি না, ইউরিয়া-ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ঠিক আছে কি না, পরিবারে হাই-প্রেশারের ইতিহাস আছে কি না— ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রেও প্রেগন্যান্সিতে সেফ, এমন ওষুধই দেওয়া হয়। যেমন, অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন-কনভার্টিং এনজ়াইম জাতীয় ওষুধ এ সময়ে দেওয়া যায় না। বাচ্চার কিডনির বৃদ্ধিতে তা বাধা দিতে পারে। তাই এ সময়ে ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রেগন্যান্সিতে প্রেশার বেড়ে টক্সেমিয়া হতে পারে। তাই সুগারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ নিয়মিত প্রেশার মনিটর করাও।

বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরন এমনই, যাতে প্রেগন্যান্সির সময়ে হাই ব্লাড সুগার কিংবা প্রেশারের সম্ভাবনা অনেকের মধ্যেই দেখা দেয়। তাই সময় থাকতেই সতর্ক থাকুন, পরীক্ষা করিয়ে নিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnancy diabetes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy