Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ukraine

Ukraine-Russia Crisis: রুশ সেনাদের লুঠপাট দেখে ওদের যোদ্ধা কম, চোর বেশি মনে হচ্ছে: ইউক্রেনীয় বলি-পরিচালক

ইউক্রেনের কিভে বাড়ি দর গাইয়ের। এখন তিনি বলিউডের প্রথম সারির নৈকট্য পরিচালক। মুম্বইয়ে বসবাস। সেখান থেকে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।

মাতৃভূমি ইউক্রেনে একের পর এক শহর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর রাজপথে চলছে যুদ্ধের ট্যাঙ্কার। টিভি-তে এ সব দেখে ছটফট করছেন দর গাই।।

মাতৃভূমি ইউক্রেনে একের পর এক শহর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর রাজপথে চলছে যুদ্ধের ট্যাঙ্কার। টিভি-তে এ সব দেখে ছটফট করছেন দর গাই।।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ১৮:০১
Share: Save:

সকলে ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্কট’ বলে উল্লেখ করছেন। কিন্তু দর গাই অতশত জটিলতায় যেতে চান না। বলছেন, ‘‘যুদ্ধকে যুদ্ধ বলতে হবে। শুধু সঙ্কট বলা যায় না।’’ একুশ শতকেও যে এমন হতে পারে, তা অবাক করেছে দরকে। এখনও তিনি মানতে পারছেন না, তাঁর মাতৃভূমি ইউক্রেনে একের পর এক শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বড় বড় শহর কব্জা করেছে রুশ সেনা। রাজধানীর রাজপথে চলেছে যুদ্ধের ট্যাঙ্কার। টিভি-তে এ সব দেখে ছটফট করেছেন দর।

ইউক্রেনের কিভ শহরে বাড়ি দরের। এখন তিনি বলিউডের প্রথম সারির নৈকট্য পরিচালক। মুম্বইয়ে বসবাস। সম্প্রতি ‘গেহরাইয়া’ ছবিতে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে। স্বামী ধীর মোমায়ার সঙ্গে খুলেছেন নিজের প্রযোজনা সংস্থাও। তবে সে সব নিয়ে আনন্দ করার সময় কোথায়! যুদ্ধের পরিস্থিতিতে মন পড়ে আছে জর্জরিত মাতৃভূমিতে। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত কথপোকথনে সে সব চিন্তাই ভাগ করে নিলেন তেত্রিশের তরুণী।

কিভ শহরে যে স্কুলে পড়তেন দর, রুশ সেনার বোমায় তা উড়ে গিয়েছে। দর বলছেন, ‘‘কিছু দিন আগেই ভিডিয়ো দেখলাম। আমার স্কুলের সামনে রুশ ট্যাঙ্ক। তার পর আশপাশের সব জ্বলতে শুরু করল। অবিশ্বাস্য সব ছবি। ভয়ঙ্কর। অস্বাভাবিক যেন!’’ দর থামতে পারেন না। বলে চলেন, ‘‘কিভ অত্যন্ত সুন্দর একটি শহর। সেই শহর যে কেউ এ ভাবে জ্বালিয়ে দিতে পারে, এখনও ভাবতে পারছি না।’’ নিজের শহরের রূপ বোঝাতে প্যারিসের সঙ্গে তুলনা করেন দর। বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন প্যারিস শহরটি কেউ বোমায় উড়িয়ে দিচ্ছে! কিভ জ্বালিয়ে দেওয়ার অনুভূতিও তেমন। আমার পছন্দের সব শহর, একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কালের ইউরোপেও যে এমন যুদ্ধ হতে পারে, কে ভেবেছিল!’’ তবে নিজের পরিজনেদের নিয়ে গর্বিত তরুণী। এই কঠিন সময়েও তাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি।

ইউক্রেনের কিভ শহরে বাড়ি দরের। এখন তিনি বলিউডের প্রথম সারির নৈকট্য পরিচালক।

ইউক্রেনের কিভ শহরে বাড়ি দরের। এখন তিনি বলিউডের প্রথম সারির নৈকট্য পরিচালক।

কী ভাবে আছে দরের পরিবার?

দরের ঠাকুরমার বয়স ৭৮। তাঁকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে চান পরিবারের সকলে। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ভিটে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। ইউক্রেন থেকে পরিবারের সকলকে এ দেশে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতে চান না দর? তরুণীর উত্তর, ‘‘আমি চাইলেও ওঁরা আসবেন না। আমার এক কাকা চলে গিয়েছেন যুদ্ধে। দেশের জন্য লড়ছেন। মা, বোন আরও কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে সমাজ সেবা করছেন। আশপাশের লোকজনের যার যা দরকার এনে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ওষুধ, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে খাবার, জল— সবই তো জোগাড় করা এখন কষ্টের।’’

অনেকেই আছেন ‘বম্ব শেল্টার’-এ। কোনও মতে লুকিয়ে। বোমা থেকে বাঁচার জন্য এ দিক-সে দিক মাথা গুঁজে আছেন। আর এক দলকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পোল্যান্ডে। কারণ তাঁরা যে দিকে থাকতেন, সে সব শহর একেবারেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেখানে থাকার সুযোগ নেই। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর পরিবারের দুর্দশার কথা বলতে শুরু করেন দর। দশ বছর ধরে একটু একটু করে তাঁদের গ্রামের বাড়ি বড় করছিলেন মা। রুশ সেনা দখল করে সেই কষ্টে তৈরি আস্তানা। লুঠপাট করেছে সেখানে। ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ অভেন, টিভি, দরজা— যা পেয়েছে নিয়ে গিয়েছে রুশরা, দাবি দরের। তিনি বলেন, ‘‘ওদের তো যোদ্ধার চেয়ে বেশি চোরের মতো লাগছে এখন।’’

দর গাই।

দর গাই।

এমন অবস্থাতেও বিপদ মাথায় করে যে তাঁর দেশের নাগরিকরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা দেখে সুদূর ভারতে বসে চোখে জল আসছে দরের। বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনেকটা ভারতের মতো। পরিবার কেন্দ্রিক। যৌথ পরিবারে থাকা। একে-অপরকে নিয়ে ভাবনা। বড়দের সম্মান করা, এই সব শিক্ষা দেওয়া হয় ছোট থেকে।’’ কারও পারিবারিক ঠিকানা ধ্বংস হয়ে গেলেও তাই বুক ফেটে যায়।

গত দশ বছরে ইউক্রেনের অনেক উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন দর। কিন্তু সে সব তছনছ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের লোকজন খুবই এগিয়ে এখন। আরও কত উন্নতি করতে পারত তাঁর দেশ। এই যুদ্ধের জন্য হল না বলে মন খারাপ দরের। ‘‘তবে আমি বিশ্বাস রাখি ইউক্রেনের মনোবলের উপর। যুদ্ধ থামলে ঠিক নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারব আমরা। রুশরা যা ধ্বংস করেছে, ফের গড়া হবে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, অন্ধকারের চেয়ে আলোর জোর বেশি,’’ দৃঢ় মন্তব্য দরের।

রুশ সংস্কৃতি কিন্তু দরের যথেষ্ট পরিচিত। তাঁর ঠাকুরমার জন্ম হয়েছিল রাশিয়ায়। রুশ দেশের সাহিত্য, গানের মধ্যে বড় হয়েছেন দর। তবু রুশ সংস্কৃতিকে আপন বলে মনে হয় না কোনও দিনও। বলেন, ‘‘রাশিয়াকে কখনওই বিশ্বাস করি না। ওদের দেশের সাহিত্য, গান নিয়ে বড় হয়েছি, কারণ সোভিয়েত আমলে ইউক্রেনের সাহিত্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল ওরা। আমাদের কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিকদের খুন করেছে। অত্যাচার করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। রুশ সংস্কৃতি তাই আমার কাছে সব সময়েই হিংসা, অবদমন, অত্যাচারের প্রতীক।’’ ঐতিহাসিক ভাবে ইউক্রেনের সব সময়েই লড়ে নেওয়ার উদ্দম আছে। কখনও তুর্ক, কখনও রুশদের আক্রমণ, তো কখনও বা পোলিশ শিল্পপতিদের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে ইউক্রেনের কোসাকদের। তাই হাজার হাজার নাগরিকের খুন, শয়ে শয়ে শিশুর মৃত্যু, নারীদের ধর্ষণ সামলেও ঠিক ঘুরে দাঁড়াবে তাঁর দেশ। বিশ্বাস রাখেন ইউক্রেনের মেয়ে দর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy