প্রতীকী ছবি।
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। অখণ্ড অবসরে গল্পের বই হোক বা পছন্দের দু’কলি গানের সঙ্গে এক কাপ কফি না হলে কি আর তেমন জমে? আবার কাজের প্রচণ্ড চাপে, সারা দিনের ক্লান্তি মেটাতে, মিটিংয়ের ফাঁকে... কফির সমাদর সব জায়গাতেই। জানালার পাশে হোক অথবা কাচঘেরা কফিশপে কফির মৌতাতও জমে বেশ। কিন্তু কফিশপে গিয়ে অনেক সময়েই মেনু কার্ড দেখে ধাঁধা লেগে যায়। কতশত কফির কোনটা কী, জানা না থাকলে কফি খাওয়ার মজাই মাটি। তাই এ বার হরেক কফির স্বাদে চুমুক দেওয়ার পালা।
কফি কাহিনি
পনেরো শতকে ইথিয়োপিয়ায় প্রথম কফির প্রচলন শুরু। তার পরে শতকের পর শতক পেরিয়ে কফিগাছের চাষ বেড়েছে। বেড়েছে কফিপানের চলও। এক ধরনের বেরিজাতীয় গাছ থেকে পাওয়া যায় কফি বিন। দুনিয়ায় যত ধরনের কফি পাওয়া যায়, তাকে মোটামুটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
অ্যারাবিকা: সাধারণত লাতিন আমেরিকার নানা অঞ্চলে জন্মায় অ্যারাবিকা কফি। তুলনায় হালকা স্বাদের হয় এটি। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কফিপ্রেমী অ্যারাবিকাই বেছে নেন খাওয়ার জন্য। রোবাস্টা: এই ধরনের কফি বেশ স্ট্রং, ঝাঁঝালো এবং কড়া স্বাদের। অনেকের কাছেই রোবাস্টা কফি তিতকুটে লাগে। অ্যারাবিকা বিনে যে পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে, রোবাস্টায় থাকে তার প্রায় দ্বিগুণ। অন্যান্য: আছে লিবেরিকা, এক্সচেলসা। এই দু’ধরনের কফি জন্মায় যথাক্রমে ইউনাইটেড স্টেটস ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। তবে এই কফি বিশ্বে সর্বত্র রফতানি করা হয় না।
কফির রহস্য ব্রিউয়িংয়েই
কফি বানানো হয় নানা ভাবে। যাঁর যেমন পছন্দ, তিিন তেমন ভাবেই মিলিয়ে মিশিয়ে নেন কফি।
ব্ল্যাক কফি: ব্রিউ করার পরে অর্থাৎ রোস্ট করা কফি গুঁড়ো গরম জলে ভিজিয়ে রাখার পরে যে লিকার তৈরি হয়, সেটিই বেসিক। এই বেসিক কফি লিকার থেকেই তৈরি করা হয় নানা ধরনের কফি। চিনি ও দুধ মিশিয়ে: অনেকেই কড়া ব্ল্যাক কফি চিনি ছাড়া খেতে পছন্দ করেন। তাই বেসিক লিকারের সঙ্গে দুধ ও চিনির একটি অথবা দু’টিই মিশিয়ে খাওয়া যায়। এসপ্রেসো: ব্রিউয়িংয়ের আলাদা পদ্ধতি হল এসপ্রেসো। রোস্টেড কফি বিন একেবারে মিহি করে গুঁড়োনো হয়। তাতে যোগ করা হয় সামান্য পরিমাণে জল। এই এসপ্রেসো পদ্ধতিতে ব্রিউয়িংয়ের ফলে বদলে যায় কফির স্বাদ। কোল্ড ব্রিউ কফি: এ ক্ষেত্রে একেবারেই গরম জল ব্যবহার করা হয় না। বরং দীর্ঘক্ষণ কফি ভিজিয়ে রাখা হয় ঠান্ডা জলে। ঠান্ডা কফির নানা পদ তৈরির জন্য এই ভাবে ব্রিউ করা কফি একেবারে আদর্শ। ফিল্টারড বা ড্রিপ কফি: এখানে কফি রাখা হয় একটি পেপার ফিল্টারের উপরে। তাতে ঢালা হয় গরম জল। আস্তে আস্তে কফির লিকার জমা হয় নীচের ক্যারাফে। ফ্রেঞ্চ প্রেস কফি: এ ক্ষেত্রে যে ব্রিউয়িং মেশিন ব্যবহার করা হয়, সেটিই আলাদা। ফ্রেঞ্চ প্রেস ব্রিউয়িংয়ে একই পাত্রে থাকে কফি ও জল। প্লাঞ্জারের মাধ্যমে প্রেস করার প্রয়োজন হয়। আইসড কফি: আইসড কফি আর কোল্ড ব্রিউড কফি কিন্তু আবার আলাদা। এ ক্ষেত্রে হট ব্রিউয়িং মেথডেই কফির লিকার তৈরি করা হয়। তার পরে সেটাকে ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়। পারকোলেটেড কফি: দক্ষিণ ভারতে কফি এ ভাবেই পরিবেশন করা হয়। পেপার ফিল্টারের বদলে সেখানে এমন ফিল্টার কফি মেশিন ব্যবহার করা হয়, যেখানে আছে স্টিলের দু’টি কম্পার্টমেন্ট। উপরের অংশ ছিদ্রযুক্ত। সেখানেই থাকে কফি, ঢালা হয় গরম জল। একটা সময়ের পরে তা থিতিয়ে পড়ে নীচের অংশে। তার পরে সামান্য গরম জল মেশালেই তৈরি ফিল্টার কফি। চাইলে অবশ্য পরে দুধ, চিনি যোগ করা যায়। দোকানে সহজেই কিনতে পাওয়া যায় স্টিলের পারকোলেটেড কফি ফিল্টার। ইনস্ট্যান্ট: নামেই বোঝা যায় কী ভাবে বানাতে হয় এই কফি। গরম জল কিংবা দুধে ইনস্ট্যান্ট কফি মিশিয়ে নিলেই হল। তাড়াহুড়োয় এই কফি রীতিমতো বিকল্পহীন।
এ ছাড়াও মোকা, ভ্যাকুয়াম বা সাইফন পদ্ধতিতেও কফি ব্রিউ করা যায়।
নানা স্বাদে কফির কেতা
যে ধরনের কফি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, এ বার সেগুলি দেখে নেওয়ার পালা। তারা নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। তবে আসল রহস্য কফি বিন, জল, চিনি আর দুধেই।
ক্যাফে আমেরিকানো: এসপ্রেসো কফির শট অর্থাৎ লিকারের সঙ্গে সামান্য গরম জল মেশালেই তৈরি ক্যাফে আমেরিকানো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকার সৈন্যরা তেষ্টা মেটানোর জন্য এই কফি খেতেন। পরবর্তী কালে তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। কাফে লাতে: ইটালিয়ানে লাত্তে কথার অর্থ দুধ। তা থেকেই এসেছে কাফে লাতে নাম। এ ক্ষেত্রে দুধ ভাল করে ফেটিয়ে, ফেনা তৈরি করে মেশানো হয় সিঙ্গল শট কফির সঙ্গে। ক্যাপুচিনো: গোটা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যাপুচিনো কিন্তু আসলে তৈরি হয় তিনটি স্তরে। প্রথমে থাকে এসপ্রেসোর একটা শট। তাতে মেশানো হয় ফুটন্ত দুধ। সবশেষে দুধের ফোম মেশানো হয়। তাতে টপিং হিসেবে চকলেট শেভিং, পাউডার থাকতে পারে। বেশির ভাগ ইটালিয়ানের প্রাতরাশে এক কাপ ক্যাপুচিনো না থাকলে নাকি দিনটাই জমে না! আইরিশ কফি: সাবেক আইরিশ কফিতে মেশানো হয় আইরিশ হুইস্কি। অর্থাৎ চিনি, ক্রিমের ঘন লেয়ার, হুইস্কি মিশিয়ে কফি পরিবেশন করা হয়। খাঁটি কফিপ্রেমীদের মধ্যে অবশ্য এই কফির স্বাদ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। আফোগাতো: এটাকে অবশ্য কফির আওতায় না রেখে ডিজ়ার্ট বলাই শ্রেয়। এসপ্রেসো শটের উপরে পছন্দসই আইসক্রিমের স্কুপ ভাসিয়ে দিলেই তৈরি আফোগাতো।
এ ছাড়া ফ্ল্যাট হোয়াইট, লং ব্ল্যাক, ভিয়েনা স্টাইল... কফি খাওয়ার ধরন হাজারো। ইচ্ছে মতো তাতে যোগ করা যায় নানা উপাদান।
কফি কিন্তু কফি নয়
কফির গন্ধ আর স্বাদে যাঁরা পাগলপারা, তাঁদের জন্য কফি শুধু পানীয়তেই আটকে নেই। বরং টুকটাক মুখরোচক থেকে নানা ধরনের ডিজ়ার্ট... সবেতেই কফি যোগ করা হয়। তা সে ক্যান্ডি হোক বা চিজ়কেক, আইসক্রিম হোক অথবা মিল্কশেক... এমনকি রিচ ডার্ক চকলেট কেক তৈরি করতে গেলে অনেকেই কফি শট ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এতে নাকি কোকো পাউডার আর কেকের স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
কফি আসলে এমন একটি জিনিস, যা কফিপ্রেমীদের কাছে ধরা দিতে পারে হাজারো সম্ভাবনায়। আর এ ভাবেই বারবার কেল্লামাত করে কফি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy