ঈশানের উৎসাহে তাঁর ক্লাসের দুই পড়ুয়া তৈরি করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ব্রেল মানচিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
উদাহরণ এক: ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ছিল। ধীরে ধীরে তা আরও ক্ষীণ হতে থাকে। দশম, দ্বাদশের পরীক্ষা দিয়েছিলেন আতশকাচের সাহায্যে। কিন্তু চার পাশের জগৎ সম্পূর্ণ আঁধার হয়ে যায় কলেজের প্রথম বর্ষে। তার পর থেকে সেই অন্ধকারকে সঙ্গী করেই জীবনের পথে এগিয়ে চলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ঈশান চক্রবর্তী। সম্প্রতি ঈশানের উৎসাহে তাঁর ক্লাসের দুই পড়ুয়া তৈরি করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ব্রেল মানচিত্র। এমন উদ্যোগকে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
উদাহরণ দুই: মধ্যমগ্রাম দোহারিয়া বিধানপল্লি হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক তারক চন্দ্র জন্মাবধি দৃষ্টিহীন। সেই প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে তিনি পড়াশোনা চালিয়েছেন। বাড়ির অবস্থা সচ্ছল ছিল না। তারক জানান, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েক জন সুহৃদের সহযোগিতা তিনি পেয়েছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তারক বছরকয়েক ধরে উচ্চশিক্ষা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যাতে দৃষ্টিহীনেরা সফল হতে পারেন, তার জন্য অডিয়ো বই তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন। সেই অডিয়ো বইয়ের সাহায্য নিচ্ছেন এই রাজ্য পেরিয়ে ভিন্ রাজ্যের দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারাও। এই কাজে তারকের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েক জন।
উদাহরণ তিন: ন’বছর বয়সে তিনি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে, তখন দৃষ্টিশক্তি হারান বিশ্বজিৎ ঘোষ। ছোটবেলায় মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু, যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় আচমকা অন্ধত্ব নেমে আসে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির অবসরপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষকের জীবনে। সেই অবস্থায় বিশ্বজিৎ গণ্ডি পেরিয়েছেন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের। করেছেন শিক্ষকতা। এখন দৃষ্টিহীনদের জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন উদ্যোগে সক্রিয় তিনি।
আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা যে এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনও বাধা নয়, বরং তাকে প্রাত্যহিক জীবনের অন্যান্য সমস্যার মতো করে দেখলে জীবনে যে অন্য মাত্রা আসতে পারে, সেটাই উপলব্ধি করছেন এঁরা। যেমন, ঈশানের কাছে এই প্রতিবন্ধকতা এক অন্য জীবনের উদ্যাপন। তিনি জানালেন, কলেজের প্রথম বর্ষে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে তার পর থেকে অনুলেখক নিয়ে সব পরীক্ষা দিয়েছেন। ফরাসি ভাষা শিখতেন। তবে, সেই পরীক্ষায় অনুলেখক পাননি। মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এর পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর, এম ফিল, পিএইচ ডি করা। ঈশানের কথায়, ‘‘প্রতিবন্ধকতা মানে সমাজের চোখে করুণার পাত্র হয়ে বাঁচা নয়। জগৎটাকে দেখার এ এক অন্য রকম আতশকাচ।’’
ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করা বিশ্বজিৎও মনে করেন, এই প্রতিবন্ধকতার জন্য তাঁদের অনুকম্পা প্রাপ্য নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, কয়েক দিন আগে তিনি অটোয় চেপে যাচ্ছিলেন। চালক তাঁকে দেখে কিছুতেই ভাড়া নিতে চাননি। কিন্তু বিশ্বজিৎ তাঁকে বোঝান, তিনি অন্যদের মতোই স্বচ্ছন্দ। অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক বলেন, ‘‘সমবেদনা নয়। সত্যি যাঁদের সাহায্য প্রয়োজন, তাঁদের পাশে দাঁড়ালে কাজের কাজ হয়।’’
মধ্যমগ্রামের স্কুলশিক্ষক তারক দৃষ্টিহীন জীবন কাটিয়েছেন দারিদ্রের মধ্যে। তাঁর বক্তব্য, অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধকতা যুক্ত সন্তান হলে সেটা আরও যন্ত্রণার কারণ হয়। সেই সময়ে সহায়তা পেলে তা আসে আশীর্বাদের মতো। কিন্তু অনুকম্পা নয়, অন্যদের সমতুল যেন তাঁদের মনে করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy