নলেন গুড়ের আইসক্রিম। ছবি- সংগৃহীত
খাদ্যরসিক বাঙালির কাছে শীতকাল মানেই হল রকমারি মিষ্টি। এখনও পর্যন্ত ঠান্ডা তেমন গায়ে না লাগলেও খেজুর গাছের গায়ে বাঁধা হাঁড়ি কিন্তু জানান দিচ্ছে, শীত এসে গিয়েছে। কারণ, শীতে খাবার বলতেই প্রথম যেটি মাথায় আসে, সেটি হল নলেন গুড়। ঘরের পিঠে-পুলি, পায়েস তো বটেই, দোকানের রকমারি মিষ্টি তৈরিতেও তার মহিমা কম নয়। ভাল মানের গুড় পেতে গেলে সারা বছর তাই চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেন গুড়প্রেমী মানুষ। আজকাল খুঁজলে সারা বছরই গুড় পাওয়া যায়। কিন্তু সেই গুড়ের স্বাদ শীতের নলেন গুড়ের মতো নয়। ছানা দিয়ে তৈরি মিষ্টির সঙ্গে এই সোনালি রঙা তরল মিশলে খাবারে যেন এক অন্য মাত্রা আসে। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও কলকাতার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি। পৌষপার্বণ তো বটেই, এই ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস জুড়েই দোকানগুলিতে পাওয়া যায় গুড় দিয়ে তৈরি রকমারি স্বাদের মিষ্টি। চিরাচরিত মিষ্টি বলতে গুড়ের রসগোল্লা, জলভরা, অমৃতকুম্ভ তো ছিলই, এখন আবার প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে তৈরি হওয়া ফিউশন মিষ্টির চাহিদাও কম নয়। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন এই ধরনের মিষ্টির চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু এ বার শীতে কোন মিষ্টি না খেলেই নয়, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
নলেন গুড়ের স্যান্ডউইচ
তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় বলরাম মল্লিক এবং রাধারমন মল্লিকের ‘ফিউশন’ মিষ্টি। এই শীতে এখানে এলে খেতেই হবে গুড়ের স্যান্ডউইচ। পাউরুটি নয়, নরম পাকের সন্দেশের ভিতরে এখানে দেওয়া হয়েছে গুড় আর নারকেলের পুর। বিপণির পক্ষ থেকে সুদীপ মল্লিক বলেন, “গুড়ের রসগোল্লা, গুড়ের নরম পাকের সন্দেশ তো ছিলই। এ ছাড়াও রয়েছে একটি মজার মিষ্টি। এই শীতে পাওয়া যাবে গুড়ের ‘সরলিপি’। খেতে গুড়ের ভাপা সন্দেশের মতোই। কিন্তু সরের পুরু প্রলেপে মোড়া।”
সরের থাক
উত্তর কলকাতার বিখ্যাত যে সব মিষ্টির দোকান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘নকুড়’। যাঁরা এখানকার মিষ্টি ভালবাসেন, তাঁরা জানেন নকুড় সন্দেশের জন্য বিখ্যাত। এ বছর শীতে নকুড়ের অন্যান্য মিষ্টির সঙ্গে থাকবে গুড়ের ‘সরের থাক’ সন্দেশ। সরের থাক এক বার চেখে না দেখলেই নয়। ছানার সঙ্গে গুড় মিশিয়ে ভাপানো হয়। খানিকটা ভাপা সন্দেশের মতো হলেও, তাতে রয়েছে নতুনত্ব। এ ছাড়াও রয়েছে সৌরভ সন্দেশ, সচীন সন্দেশ এবং মনোহরা। বিপণির কর্ণধার প্রজেশ নন্দী বলেন, “কালীপুজোর পর থেকেই আমাদের দোকানে গুড়ের মিষ্টি তৈরি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শীতকালে গুড়ের আমদানি বাড়লে তবেই মনোহরা তৈরি শুরু হয়।”
পুলি সন্দেশ
কলকাতা শহরের মিষ্টি-মানচিত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম ‘বাঞ্ছারাম’। প্রতি বছর শীতেই তারা বিশেষ কিছু আয়োজন করে থাকেন। গুড়ের রসগোল্লা, শাঁখ সন্দেশ, কাঁচাগোল্লার সঙ্গে এ বার থাকছে পুলি সন্দেশ। দেখতে পুলির মতো। তবে আসলে তা নলেন গুড়ের সন্দেশ। মুখে দিলেই গলে যায় যেন। পাশাপাশি, ক্ষীর এবং নারকেলের পুরভরা পাটিসাপটা এ বারও থাকছে। যোধপুর পার্ক শাখার বিপণির কর্মী বরুণ সর্দার বলেন, “শীতকালে বাঙালি যা যা খেতে ভালবাসে, সে সবই এখানে পাওয়া যায়।”
গোকুল পিঠে দেওয়া গুড়ের আইসক্রিম
গুড়ের মিষ্টির পাশাপাশি, শীতকালে বাঙালির পিঠে না খেলে চলে না। সারা বছরই পিঠে পাওয়া যায় কালীঘাটের ‘পিঠেবিলাসি’-তে। তবে শীতকাল আরও একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই রেস্তরাঁয় অন্যান্য খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বছর শেষের সময়ে চেখে দেখতে পারেন বিখ্যাত গোকুল পিঠে দেওয়া গুড়ের আইসক্রিম। ‘পিঠেবিলাসি’-র কর্ণধার নবনীতা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী বলেন, “বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গুড় সংগ্রহ করে আনা হয়। কোনও রকম কৃত্রিম প্রিজ়ারভেটিভ দেওয়া থাকে না তাতে। তাই এর স্বাদও আলাদা হয়। শীতকালে গোকুল পিঠের গুড় আইসক্রিম এবং গুড়-আমের পুলির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে।”
নলেন গুড়ের শট্স
গুড় এখন আর শুধু পিঠের সঙ্গী নয়। নতুন প্রজন্ম গুড় নিয়ে কতটা আগ্রহী, তা জানা গেল ‘কেকেশ্বরী’-র কর্ণধার মৌমিতা গুপ্তর কাছে। কেক তৈরির নেশা থেকে বছর দুয়েক আগে হঠাৎই এক দিন পরীক্ষামূলক ভাবে ‘হোম বেকার’ মৌমিতা তৈরি করে ফেলেন নলেন গুড়ের শট্স। সাধারণ মুজ়ের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ এই মিষ্টি। মৌমিতা বলেন, “গত বছরের গোড়ার দিকে প্রথম গুড়ের চিজ় কেক তৈরি করি। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারি না। এ ছাড়া পিঠে পেস্ট্রি, নলেন গুড়ের কাপ কেকও বানাই এ সময়ে।” কেকেশ্বরী চলে অনলাইনেই। অনলাইনে বরাত দিলে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পছন্দের মিষ্টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy