Advertisement
E-Paper

Paralysis: তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা জরুরি

ধৈর্য ও যত্ন নিয়ে চিকিৎসা চালু রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ জয় করা সম্ভব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৯:০৩
Share
Save

কোনও কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্যারালিসিসের মতো ভয়ঙ্কর রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। এতে শরীরের একটা অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। ফলে রোগীর চলাচল অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত হয়ে যায়। মুখমণ্ডলে প্যারালিসিস হলে খাওয়াদাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। অনেকের কথা জড়িয়ে যায়। তবে যথাযথ চিকিৎসাপদ্ধতিতে এই রোগের নিরাময়ও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়। কিন্তু কেন হয় প্যারালিসিস, তার চিকিৎসাপদ্ধতি কেমন, সেগুলিও জেনে রাখা দরকার—

প্যারালিসিস কেন হয়?

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়ন্ত রায় বললেন, ‘‘পেশির কার্যক্ষমতা চলে যাওয়াকে বলা হয় প্যারালিসিস। এ ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের কোনও অংশের কার্যক্ষমতা শূন্য হয়ে যেতে পারে। আর যখন এই কার্যক্ষমতা আংশিক চলে যায়, সেই অবস্থাকে বলে প্যারেসিস। দু’ক্ষেত্রেই কিন্তু পেশির কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশির সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগসূত্র স্নায়ুর মাধ্যমে। স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের নির্দেশ বা কম্যান্ড সেই পেশি পর্যন্ত পৌঁছয় না। তখন সেই পেশির কার্যক্ষমতা চলে যেতে পারে। তবে প্যারালিসিসের কারণ শুধুমাত্র ব্রেন স্ট্রোকই নয়। অন্যান্য কারণেও হতে পারে। হয়তো দুর্ঘটনায় কারও হাতের কবজি বা কনুইয়ের কাছে ইনজুরি হয়েছে, হাড় ভেঙে গিয়েছে। সেখানে নার্ভ ড্যামেজড হলে সেই হাতটাও প্যারালিসিস হয়ে যেতে পারে।’’

এ ক্ষেত্রে আর একটি বিষয়ও মনে রাখতে বললেন ডা. জয়ন্ত রায়। ব্রেনে ইনজুরির কারণে যদি শরীরের কোথাও প্যারালিসিস হয়, তা হলে তা হবে বিপরীত দিকে। কারণ মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু যখন নামছে, তখন তা স্পাইনাল কর্ডের জাংশনে এসে দিক পরিবর্তন করে। মস্তিষ্কের বাঁ দিক থেকে নামলে স্পাইনাল কর্ডের পরবর্তী অংশে ডান দিকে চলে যায়। তাই মস্তিষ্কে যদি বাঁ দিকে ইনজুরি হয়, তা হলে ঘাড় থেকে নীচের অংশে শরীরের ডান দিকে প্যারালিসিস হবে। আবার মস্তিষ্কে যদি ডান দিকে ইনজুরি হয়, তা হলে শরীরে প্যারালিসিস হবে বাঁ দিকে। কিন্তু ইনজুরি যদি স্পাইনাল কর্ডের কাছে হয়, তা হলে কিন্তু সেম সাইডেই প্যারালিসিস হবে, কারণ আগেই নার্ভ দিক পরিবর্তন করে ফেলছে। তাই রোগীর শরীরে কোন দিকে প্যারালিসিস হয়েছে, তা দেখে প্রাথমিক ভাবে রোগের কারণ শনাক্ত করা যায়। সেই অনুযায়ী পরীক্ষানিরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করা হয়।

রোগনির্ণয়ে ‘বিফাস্ট’

সাধারণত স্ট্রোকের জন্যই সবচেয়ে বেশি প্যারালিসিস হতে দেখা যায়। আর স্ট্রোকে খুব দ্রুত হঠাৎ করেই কার্যক্ষমতা চলে যায়। হয়তো কোনও ব্যক্তি বাড়িতে বসে আছেন, হঠাৎ মুখটা এক দিকে বেঁকে গেল বা কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। রোগীর স্ট্রোক হয়েছে কি না বোঝার জন্য ‘বিফাস্ট’ (BEFAST) শব্দবন্ধনীটি মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বি মানে ব্যালান্স, ই মানে আই, এফ মানে ফেস, এ ফর আর্মস, এস অর্থাৎ স্পিচ আর টি মানে টাইম। প্যারালিসিসের ক্ষেত্রে এই ছ’টি দিক খেয়াল রাখতে হবে। হয়তো দেখা গেল রোগী উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে গেলেন, অর্থাৎ ব্যালান্সিংয়ে সমস্যা, চোখে দেখতে সমস্যা হতে পারে, মুখ এক দিকে বেঁকে যেতে পারে, অনেক সময়ে হাত তুলতে গিয়েও তুলতে পারেন না। আর স্পিচে সমস্যা হয় অর্থাৎ কথা জড়িয়ে যায়। যদি এ রকম কোনও উপসর্গ দেখা যায়, তখন যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। স্ট্রোক ছাড়াও মস্তিষ্কের ইনফেকশন বা প্রদাহ থেকেও প্যারালিসিস হতে পারে।

হয়তো কোনও রোগীর ব্রেনে ইনফেকশন হয়ে পুঁজ জমেছে, সেখান থেকেও কিন্তু প্যারালিসিস হতে পারে। রোগীকে দেখে চিকিৎসক পরীক্ষানিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে, এটি হঠাৎ হয়েছে নাকি ক্রমশ হয়েছে। অনেক সময়ে স্পাইনাল কর্ডের কাছে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্যারালিসিস হতে পারে। তখন কিন্তু দুই পায়ে প্যারালিসিস হতে পারে। আবার কারও যদি ঘাড়ের কাছে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে তার চার হাত-পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। আবার মস্তিষ্কের নীচের অংশের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুখ থেকে শুরু করে হাত-পায়ের কার্যক্ষমতা চলে
গিয়ে ফুল বডি প্যারালিসিস হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা

রোগীর স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ‘স্ট্রোক রেডি’ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ যে হাসপাতালে স্ট্রোকের চিকিৎসার সব রকমের ব্যবস্থা আছে। তার জন্য হাসপাতালে ফোন করে আগে জানতে হবে সেটি স্ট্রোক রেডি কি না। কম্প্রিহেনসিভ স্ট্রোক সেন্টার পেলে আরও ভাল। না হলে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তা স্ট্রোক রেডি না হলে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যাবে।

‘‘স্ট্রোক হওয়ার পরে সেই অংশের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রথম এক থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে যদি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তা হলে কিছুটা হলেও ক্ষতি রোখা সম্ভব। স্ট্রোক হওয়ার পরমুহূর্তেই সে অংশে একেবারে স্থায়ী ড্যামেজ হয়ে যায় না। তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসে যদি ব্লকেজ খুলে দেওয়া যায়, তা হলে কিন্তু ক্ষতি অনেকাংশেই রোখা যায়। মনে রাখতে হবে, ব্লকেজ হওয়ার পরে প্রত্যেক সেকেন্ডে ৩২০০০ ব্রেন সেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি ব্লকেজ খুলে দিলে অনেক রোগীকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু ছ’ঘণ্টা হয়ে গেলে সেই অংশের ব্রেন সেল আর কিছুই বেঁচে থাকে না। তখন আর কিছু করার থাকে না,’’ বললেন ডা. জয়ন্ত রায়। তাই এ ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে ‘বি ফাস্ট’। যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাবে, রোগের নিরাময়ের সম্ভাবনা তত বাড়বে।

এ ছাড়াও এমন অনেক অসুখ আছে যার জন্য প্যারালিসিস হতে পারে। যেমন গুইলেন বারি সিনড্রোম। এই রোগেও চার হাত-পা প্যারালিসিস হতে পারে। ট্রান্সভার্স মায়ালাইটিস থেকেও প্যারালিসিস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্পাইনাল কর্ডের ঠিক মাঝামাঝি জায়গার নার্ভ ড্যামেজড হয়ে যায়, অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়ায়। হয়তো দেখা গেল রোগীর দুটো পা প্যারালিসিস হয়ে গেল। চিকিৎসায় অনেক সময়েই এঁরা ভাল হয়ে যান। অনেকে আংশিক সুস্থ হন। কিন্তু তার জন্য রোগনির্ণয় ও ঠিক চিকিৎসা জরুরি।

এই চিকিৎসার পরবর্তী পর্যায়ে রিহ্যাবিলিটেশনের প্রয়োজন পড়ে। রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে রোগীকে সার্বিক ভাবে সুস্থ করে তোলার জন্য সব রকম চিকিৎসা করা হয়। তবে মনে রাখবেন, প্যারালাইজ়ড রোগীর চিকিৎসা চলাকালীন পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রয়োজন। এই রোগে কার্যক্ষমতা চলে যায়, কিছু ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজের জন্যও পরের উপরে নির্ভরশীল থাকতে হয়। ফলে মানসিক ভাবে তাঁরা ভেঙে পড়েন। সুতরাং ধৈর্য ও যত্ন নিয়ে চিকিৎসা চালু রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ জয় করা সম্ভব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।