রোজ হয়তো রুটি বেলার সময়ে কনুইয়ের কাছে ব্যথাটা টের পাচ্ছেন, কিন্তু সেটা কোনও রোগের উপসর্গ বলে আগে খেয়াল করেননি। এই ব্যথাই কিন্তু বাড়তে বাড়তে টেনিস এলবোয় পরিণত হতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় যাকে বলে ল্যাটারাল এপিকনডাইলাইটিস। এ রোগে সাধারণত কনুইয়ের হাড়ের বাইরের দিকে ব্যথা হয়। সেই ব্যথা হাতের কব্জি অবধিও পৌঁছতে পারে।
কী করে বুঝবেন টেনিস এলবো হয়েছে?
যে কাজ বারবার করতে হয়, এমন কাজেই মূলত এ রোগ ধরা পড়ে বেশি। যেমন, ভেজা কাপড় নিংড়ানো, ভারী কিছু তোলা বা রুটি বেলার মতো কাজের সময়ে কনুই থেকে বাহুর অংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারা দিন এক ভঙ্গিমায় মাউস ধরে কাজ করার সময়েও এ ব্যথা জানান দিতে পারে।
কেন হয়?
রিস্ট এক্সটেনশন মাসলগুলো থেকে এই ব্যথার সূত্রপাত হয়। এর পিছনে অনেক কারণ কাজ করে। মূলত রিপিটেটিভ ক্রনিক ইনজুরি থেকে এই ব্যথা হয়। বারবার একই কাজ করে গেলে সেই চোট বাড়তে থাকে। রোজকার চায়ে চামচ দিয়ে চিনি গুলতেও ব্যথা লাগা স্বাভাবিক। কখনও কখনও আর্থ্রাইটিসের সূত্রপাত হয় এই ব্যথা থেকে। গাউটি, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হতে পারে। কখনও এই মাসল টেন্ডন জাংশনে ইনফ্ল্যামেশন দেখা দিলে তা থেকেও ল্যাটারাল এপিকনডাইলাইটিস হতে পারে। যেমন ধরুন, হাতের অনেক পেশির মধ্যে দুটো পেশিতে ইনফ্ল্যামেশন রয়েছে বা ফুলে গিয়েছে। পরে যখন একই কাজ সেই হাত দিয়ে করতে থাকবেন, বারবার সেই মাসলের ফোলা জায়গায় ব্যথা লাগবে। এ ভাবেই তা বাড়তে বাড়তে এই রোগের আকার ধারণ করে। সেই জন্যই চায়ে চিনি গোলা, নারকেল কোরানো, রুটি বেলা, ভেজা কাপড় নিংড়ানোর মতো রিপিটেটিভ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয় এই রোগে আক্রান্তকে।
এর চিকিৎসা কী?
আগে বুঝতে হবে রোগের কারণ কী? সেই কারণ ধরে রোগের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যদি দেখা যায় রিপিটেটিভ ইনজুরি থেকে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে সেই ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। ঘরোয়া কাজের পাশাপাশি মোটরবাইক চালানো, কম্পিউটারের মাউস ধরে একটানা কাজ করতেও বারণ করা হয়। এর সঙ্গে ওজন তোলাও বন্ধ রাখতে হবে। এই রিপিটেটিভ বিহেভিয়ার অন্তত তিন-চার মাস ধরে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা হলেই অনেকটা সুফল পাওয়া যায়।
তবে যদি দেখা যায়, ইনফ্ল্যামেশন রয়েছে, তা হলে বিশ্রাম দরকার। আর তার পাশাপাশি ইনফ্ল্যামেশনের চিকিৎসাও করতে হবে। পেশি তার শক্তি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম দিতেই হবে। এ ছাড়া ওষুধ ও ফিজ়িয়োথেরাপি তো রয়েছেই। এতেও কাজ না হলে স্টেরয়েড দেওয়া হত আগে। এখন স্টেরয়েডের বদলে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীর থেকে পিআরপি অর্থাৎ প্লেটলেট রিচ প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হয়। তার পরে ইনফ্লেমড পেশিতে তা ইনজেক্ট করা হয়। এই প্লাজ়মার রোগ সারানো ও ব্যথা কমানোর ক্ষমতা অনেক বেশি। ধীরে ধীরে পেশি তার শক্তি ফিরে পায়। রোগ সারতে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ ক্রনিক হয়ে যায়। তখন কিন্তু সার্জারি করতে হতে পারে।
সার্জারি কখন করবেন?
যখন ওষুধ, ফিজ়িয়োথেরাপি কোনও কিছুতেই কাজ হবে না, তখন সার্জারির শরণাপন্ন হতে হবে। তবে নিজে থেকে সার্জারির সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ধরনের ব্যথায় কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমন, সার্ভাইকাল স্পন্ডিলাইটিস থেকেও এ ধরনের ব্যথা দেখা দিতে পারে। ডিস্ক প্রোল্যাপস করলেও সে ব্যথা হাতের কনুই পর্যন্ত আসতে পারে। তবে তা রোগী নিজে না-ও বুঝতে পারেন। তাই এ ধরনের ব্যথা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে ভুল চিকিৎসায় রোগ কিন্তু আরও বাড়তে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
বাড়িতে হঠাৎ এ রকম ব্যথার উদ্রেক হলে হাতটা ভাঁজ করে রাখতে হবে। বাড়িতে কোনও পেন-রিলিভিং মলম থাকলে, তা লাগাতে হবে ব্যথার জায়গায়। গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিয়ে দেখতে পারেন। আর দিন তিনেক বিশ্রামে থাকতে হবে রোগীকে। এতেও যদি ব্যথা না কমে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি যে, কনুইয়ে টিউমর হলে বা কোনও ইনফেকশন হলেও টেনিস এলবোর মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তাই ব্যথার কারণ টেনিস এলবো, নাকি তার আড়ালে অন্য কোনও রোগ— তা জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এ রোগ খুব সামান্য মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। তাই গোড়াতেই রোগ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে এ রোগ সেরে যায়।
তথ্য সহায়তা: অর্থোপেডিক সার্জন সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy