প্রতীকী ছবি।
শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে গিয়ে আবারও হেনস্থা। কখনও থানায়, কখনও হাসপাতালে। পদে পদে এমনই অভিজ্ঞতার অভিযোগ আনলেন রূপান্তরিত এক নারী। নেটমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কত দিক দিয়ে হেনস্থা হতে হয়, সে বিষয়ে নজর দিতেও আর্জি জানিয়েছে তাঁর পোস্ট।
পাড়ায় বেআইনি নির্মাণের প্রতিবাদ করেছিলেন রূপান্তরিত নারী, মানবাধিকার কর্মী তিস্তা দাস। সেখানেই শুরু হয় অশান্তি। অভিযোগ, এক যুবক তাঁর কয়েক জন সঙ্গীসাথী নিয়ে তাঁকে নিগ্রহ করেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিস্তা বলেন, ‘‘আমার বুকে এবং যৌনাঙ্গে লাথি মারা হয়। আমার লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে নানা রকম অশ্লীল কথাও বলা হয়।’’ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রসঙ্গ ওঠে। তার জন্য সরকারি হাসপাতালে গিয়ে আবারও হেনস্থা হতে হয় বলে অভিযোগ তিস্তার। স্ত্রীরোগ বিভাগে কেন তাঁর পরীক্ষা হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। শেষে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করলেও, সকলের সামনেই তাঁকে বিবস্ত্র করা হয় বলে তিস্তার অভিযোগ।
তিস্তার বাড়ি আগরপাড়ায়। তাঁর দাবি, গত বুধবার, ১ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটে। পাড়ার কয়েকজন যুবক যখন হেনস্থা করছিলেন, তখন তিস্তার পাশে দাঁড়ান তাঁর স্বামী দীপন চক্রবর্তী। দীপন একজন রূপান্তরিত পুরুষ। অভিযোগ, হামলা হয় তাঁর উপরও। নেটমাধ্যমে তিস্তা লেখেন, ‘দীপনের শরীর বেশ খারাপ। রক্তচাপ এখনও উর্ধ্বমুখী।’
১ তারিখেই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিস্তা ও দীপন। অভিযোগ, সেখানে এই ঘটনাকে কোনও রকম আমল দেওয়া হয়নি। বার বার এফআইআর নেওয়ার অনুরোধ করলেও একটি সাধারণ ডায়েরি করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর পরই তাঁরা পৌঁছন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তত ক্ষণে বেশ অসুস্থ বোধ করছেন তিস্তা। তল পেটে ব্যথা করতে শুরু করেছে। ইমার্জেন্সিতে গিয়ে প্রথমে ঘটনাটি জানান। সেখান থেকে পাঠানো হয় স্ত্রীরোগ বিভাগে। সেখানেই ফের হেনস্থার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। তিস্তার কথায়, তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত বলেই পদে পদে অসম্মানিত হতে হয়। স্ত্রীরোগ বিভাগে ছিলেন পাঁচ জন মহিলা চিকিৎসক এবং তিন জন পুরুষ চিকিৎসক। শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার পর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তিস্তা অনুরোধ করেছিলেন, এই পরীক্ষা যদি তাঁকে নগ্ন করে করতে হয়, তবে যেন কোনও মহিলা চিকিৎসকই করেন। কিন্তু সে কথা শোনা হয়নি বলে অভিযোগ। তিস্তা বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয় এই দাবি আইন বিরুদ্ধ। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সামনেই জামাকাপড় খুলতে হবে। তখন খুবই অসহায় মনে হচ্ছিল নিজেকে। আর কোনও সরকারি হাসপাতাল ছিল না আশপাশে। আর মামলা দায়ের করাতে হলে সরকারি হাসপাতালেই শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। তাই সেখানেই সবটা মেনে নিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়।’’ এই ঘটনার পর থেকে মানসিক ভাবে আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিস্তা ও তাঁর সঙ্গী।
এর পরে অবশ্য এক বন্ধুর হস্তক্ষেপে মামলা দায়ের হয়। রূপান্তরিত এবং রূপান্তরকামীদের নিরাপত্তার জন্য যে সব ধারা রয়েছে, তেমন কোনওটিই প্রথমে দেওয়া হয়নি সেই এফআইআরে। তা সংশোধন করার জন্যেও করতে হয় প্রতিবাদ।
ঘটনাটি প্রসঙ্গে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনা সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না। কোনও অভিযোগ আসেনি। যদি কেউ অভিযোগ জানান, তা হলে অবশ্যই ঘটনার তদন্ত করা হবে।’’
খড়দহ থানা অবশ্য তিস্তার অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশ সূত্রের দাবি, এফআইআর নেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে আদালতেও পেশ করা হয়। এ বিষয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।
তিস্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহকর্মী ও বন্ধুরা। মানবাধিকার কর্মীরা তো আছেনই, সঙ্গে আছেন সমাজের নানা স্তরের আরও অনেক মানুষ। একজোট হয়েছেন এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। নিজেদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে নানা সরকারি দফতরে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy