Top places to visit in Uttarakhand in summer season dgtl
Hill Stations To Visit In May
গরমে ঠান্ডার আমেজ নিতে ঘুরে আসুন উত্তরাখণ্ডের চেনা-অচেনা শৈলশহরগুলি থেকে
নদী, পাহাড়, উপত্যকা, হ্রদ, জঙ্গল, হিমবাহ সব মিলিয়ে উত্তরাখণ্ড যেন এক রূপকথার রাজ্য। ভারতের উত্তর দিকে অবস্থিত এই ভূখণ্ডটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের এক সুন্দর কোলাজ, যার প্রতিটি শিরা-উপশিরা জুড়ে আছে অফুরন্ত রোমাঞ্চ আর ইতিহাস।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
গরমের ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে এ বার গন্তব্য কোথায় হতে পারে, ভাবছেন? শহরের ভ্যাপসা গরম আর দূষণের থেকে পাহাড়ের কোলে অবসর কাটানোর ঠিকানা হতেই পারে উত্তরাখণ্ড। নদী, পাহাড়, উপত্যকা, হ্রদ, জঙ্গল, হিমবাহ সব মিলিয়ে উত্তরাখণ্ড যেন এক রূপকথার রাজ্য। ভারতের উত্তর দিকে অবস্থিত এই ভূখণ্ডটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের এক সুন্দর কোলাজ, যার প্রতিটি শিরা-উপশিরা জুড়ে অফুরন্ত রোমাঞ্চ আর ইতিহাস।
০২২২
আধ্যাত্মিকতা থেকে অ্যাডভেঞ্চার, উত্তরাখণ্ডে পুরোটাই প্রাপ্তিযোগ। উত্তরাখণ্ড ভ্রমণে গিয়ে শৈবতীর্থ আর শক্তিপীঠগুলিও দেখতে পারেন এই সময়। সারা বিশ্বের পর্যটকরা স্কিয়িং, সাফারি ভ্রমণ, রিভার রাফটিং, যোগচর্চার জন্য গাড়োয়াল ও কুমায়ুন পর্বতমালার পাদদেশে এই দেবালয়ে এসে ভিড় জমান। উত্তরাখণ্ডে ভ্রমণ করলে কোন কোন জায়গা একেবারেই বাদ দেওয়া যাবে না, দেখে নিন সেই তালিকা।
০৩২২
হৃষীকেশ: উত্তরাখণ্ডে গেলে যাত্রা শুরু করতে পারেন হৃষীকেশ থেকে। একই সঙ্গে দেবদেবীর আরাধনা ও রোমাঞ্চকর দুঃসাহসিক সব খেলা উপভোগ করার ঠিকানা হৃষীকেশ। রিভার রাফ্টিং, বাঞ্জি জাম্পিং, রক ক্লাইম্বিংয়ের জন্য ভারতবিখ্যাত কেন্দ্র হৃষীকেশ। আবার যোগ ও ধ্যানের জন্যও বিশ্ব জুড়ে নামডাক হৃষীকেশের। এখানকার রাম-লক্ষ্মণ ঝুলার শোভাও দেখার মতো।
০৪২২
হৃষীকেশে গঙ্গা নদীর ঊর্ধ্ব গতির খরস্রোত দেখে মুগ্ধ হবেন। পাহাড় চিরে গঙ্গার ধারা গড়িয়ে আসার দৃশ্যও অসাধারণ। এখানে নদীর ধারে থাকার ক্যাম্পেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছে করলে এক রাত সেখানে কাটিয়েও রোমাঞ্চ উপভোগ করতে পারেন। পরমার্থ নিকেতনে গঙ্গা আরতি দেখলে সত্যিই মন ভাল হয়ে যাবে।
০৫২২
দেহরাদূন: হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শৈলশহরটি উত্তরাখণ্ডের অন্যতম পর্যটন স্থান। এখানকার নিরিবিলি, শান্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ করার মতো। এখানকার লাখা মণ্ডল শিবমন্দির, টাইগার ফলস, সহস্রধারা, রবার’স গুহা, তপকেশ্বর মহাদেব মন্দিরে ঘুরতে পারেন।
০৬২২
এ ছাড়া এফআরআই দেহরাদূন মিউজ়িয়াম, মালসি ডিয়ার পার্ক, বুদ্ধমন্দিরেও ঢুঁ মারতে পারেন। দেহরাদূন ঘোরার জন্য হাতে অন্তত দু’দিন সময় রাখতেই হবে। প্রকৃতির শান্ত ও স্নিগ্ধ রূপ উপভোগ করার অন্যতম সেরা ঠিকানা দেহরাদূন।
০৭২২
মুসৌরি: মনসুর নামে এক ধরনের গুল্ম, তার থেকে এই শৈলশহরটির নাম মুসৌরি। গাড়োয়াল পর্বতমালার পাদদেশে ব্রিটিশদের সাজানো পর্যটককেন্দ্র। ৭০০০ ফুট উঁচু।
০৮২২
মুসৌরিতে কেম্পটি ফলস, লালটিব্বা, ক্যামেলস ব্যাক রোড, কোম্পানি বাগান, শহরের সর্বোচ্চ পয়েন্ট-গান হিল, দ্য মল থেকে কেবল কার ভ্রমণ, মল রোড থেকে বিখ্যাত দূন উপত্যকার অতুলনীয় দৃশ্য এক বার দেখলে জীবনে ভোলার নয়।
০৯২২
হরিদ্বার: হরি বা ভগবান বিষ্ণুর কাছে পৌঁছনোর দ্বার বলে মনে করা হয় এই শহরটিকে। যদিও শৈবদের মতে স্থানমাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে মহাদেবের নামে। তাই, ‘হর’ অর্থাৎ শিবের নাম থেকেই ‘হরিদ্বার’। ফলে বৈষ্ণব ও শৈব, দুই শাখার পুণ্যার্থীদের কাছেই এই পুণ্যক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ। চারধামযাত্রা এবং কুম্ভমেলার মানচিত্রেও হরিদ্বারের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। গঙ্গোত্রীর গোমুখ হিমবাহ থেকে জন্মের পরে ২৫৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গঙ্গা পৌঁছয় হরিদ্বারে। তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই তীর্থক্ষেত্র।
১০২২
হর কি পৌরি ঘাটে সন্ধ্যাবেলায় গঙ্গা আরতি দেখার অভিজ্ঞতা মনে রয়ে যায় বহুদিন। এ ছাড়াও ঘুরে দেখার মতো চিল্লা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রাজাজি জাতীয় উদ্যান। এ ছাড়া চণ্ডীদেবী মন্দির, মনসাদেবী মন্দির, ভারতমাতা মন্দির, মায়াদেবী মন্দির, সপ্তঋষি আশ্রম, গৌরীশঙ্কর মহাদেব মন্দির, সুরেশ্বরী দেবী মন্দির-সহ অসংখ্য মন্দির ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে হরিদ্বার জুড়ে। পাশাপাশি আছে বহু আশ্রমও।
১১২২
বিনসর: উত্তরাখণ্ডে গেলে ঘুরে আসতে পারেন বিনসরের ঘন জঙ্গল থেকে। এখানে অরণ্য পথে চলার মাঝেই অহরহ বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের ডাক কানে আসে। ভাগ্যে থাকলে দিনের আলোতে দেখা মিলতে পারে হরিণ বা অন্য কোনও প্রাণীর।
১২২২
বিনসরের এই গা ছমছমে পরিবেশে কেএমভিএন-এর রিসর্টে রাতে থাকারও ব্যবস্থা আছে। অনেকেই জঙ্গলের অনুভূতি পেতে এখানে অন্তত একটি রাত কাটিয়ে থাকেন।
১৩২২
নৈনিতাল: নৈনি হ্রদের হাত ধরে থাকা সুন্দরী নৈনিতাল পর্যটকদের কাছে বহু কাল ধরে প্রিয়। ওখানে গিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন সেখানকার জুলজিক্যাল পার্ক। পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে রাস্তা করে তৈরি করা হয়েছে এই চিড়িয়াখানাটি। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী সম্বলিত এই চিড়িয়াখানাটি মন্দ নয়। নয়নাদেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে লেকে বোটিং করতে পারেন।
১৪২২
লেক সংলগ্ন রোপওয়ে স্টেশন থেকে রোপওয়েতে চড়ে পাহাড়ের ও নীচের লেকের দৃশ্য উপভোগ করা এখানকার আরও একটি আকর্ষণ। রোপওয়েতে চড়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে পৌঁছে সেখান থেকে দেখা যায় সুবিশাল হিমালয় পর্বতমালা। হাতে কিছুটা সময় থাকলে লেক সংলগ্ন ম্যাল রোড থেকে গাড়ি বুক করে ঘুরে আসতে পারেন নয়না পিক, টিফিন টপ, স্নো ভিউ পিক, ল্যান্ডস এন্ড, সাত তাল, অ্যানিম্যাল, পাখিরালয় প্রভৃতি।
১৫২২
কৌশানি: নৈনিতাল থেকে একই গাড়িতে চেপে সর্পিলাকার পাহাড়িয়া পথ দিয়ে পাইন গাছের সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে ঢুঁ মারতে পারেন কৌশানিতে। কৌশানিতে গেলে চোখে পড়বে হিমালয়ের শৃঙ্গ, কিন্তু তা কোন সময় ধরা দেবে তা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। কৌশানির অন্যতম আকর্ষণ গান্ধীজির আশ্রম। দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহের দিক থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। আশ্রমের পিছনে পাহাড়ের ধারে, গাছের ছায়ায়, বেড়ায় ঘেরা অঞ্চলটিতে দাঁড়িয়ে খানিকটা একান্তে সময় কাটাতে মন্দ লাগবে না। গান্ধীজি কৌশানিকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘দ্য সুইজ়ারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া’ বলে।
১৬২২
এখানে পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে সাজানো পাইন গাছের আড়ালে বা হোটেলের ব্যালকনি থেকে পাহাড়চূড়া দেখেই বেশ খানিকটা সময় কেটে যাবে আপনার। এখানকার রুদ্রনাথ গুহা ও ঝরনা এবং অবশ্যই কৌশানি শাল কারখানায় ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন। পাহাড়ের কোলে নিরিবিলি জায়গায় খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ঘুরে আসতে পারে কৌশানি থেকে।
১৭২২
চৌকরি: কৌশানির পর আপনার গন্তব্য হতে পারে চৌকরি। কৌশানি থেকে চৌকরি যাওয়ার পথে গোলু চেতনা, বৈজনাথ, বাগেশ্বর, সোমেশ্বরের মতো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির পড়ে। অনেকে মনের ইচ্ছে জানিয়ে তা পূর্ণ হওয়ার আশায় একটি ঘণ্টা বেঁধে দেয় গোলু চেতনা দেবীর মন্দিরে আর তাই মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে চারদিকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন আকারের ঘণ্টা।
১৮২২
কৌশানিতে চাক্ষুষ করতে পারবেন হিমালয়ের অপরূপ শোভা। দু’চোখ ভরে দেখতে পারেন রাশি রাশি গিরিশৃঙ্গ মাথায় বরফের সাদা মুকুট পরে রাজার আসনে বসে রয়েছে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, পাইনের জঙ্গল ঘেরা চৌকরিতে রয়েছে বেশ কিছু ‘ভিউ পয়েন্ট’। খুব ঘোরাঘুরি না করে কেবল প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতেই পারেন এই ঠিকানা থেকে।
১৯২২
চোপতা: চোপতা উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত। কেদারনাথ থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে এই বিখ্যাত তীর্থস্থানটি রয়েছে। চোপতা কেদারনাথ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি অংশ। রাজ্য বন বিভাগের পূর্বানুমতি নিয়ে আপনি এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন। চোপতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সুন্দর বাগিয়াল বা তৃণভূমি।
২০২২
চোপতা থেকে ৪০টিরও বেশি চূড়া দেখা যায়। ত্রিশূল, নন্দাদেবী, চৌখাম্বা, বন্দরপুঞ্চ, তিরসুলি, নীলকণ্ঠ, মেরু, সুমেরু এবং গণেশ পর্বত এদের মধ্যে অন্যতম। এই শৈলশহর পাখিদের স্বর্গরাজ্য। ২৪০টিরও বেশি প্রজাতির পাখির আনাগোনা রয়েছে এই শৈলশহরে। এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, চোপতা যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময়।
২১২২
আউলি: উত্তরাখণ্ডে গেলে এই জায়গাটি ঘুরে আসতেই হবে। ওক গাছে ঘেরা এই স্থানে জঙ্গলগুলি অনেকটা শঙ্কু আকৃতির। আসলে জঙ্গল গড়ে উঠেছে পাহাড়ের গায়ে। এশিয়ার দীর্ঘতম এবং উচ্চতম রোপওয়ে পরিষেবা রয়েছে উত্তরাখন্ডের আউলিতে।
২২২২
ন’হাজার ফুটেরও বেশি উঁচুতে শূন্যে পৌনে চার কিলোমিটার আকাশ পথ স্রেফ একটা লোহার দড়িতে ঝোলানো কাচের বাক্সে চেপে যেতে যেতে আপনি দেখতে পারবেন হিমালয়ের অপরূপ শোভা। স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর, রূপকথার চেয়েও বাস্তব এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এখানে গেলে নন্দাদেবী ন্যাশনাল পার্ক, ছেনাব লেক, ত্রিশূল চূড়া, জটেশ্বর মহাদেব মন্দির ঘুরে আসতে পারেন।