বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশু মনে। ফাইল ছবি।
লকডাউনের পর আনলক পর্ব শুরু হলেও বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ মিলছে শিশুদের। এ সময়ে সুষম আহার করা এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে নজর দেওয়ার কথাও বার বার বলছেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ প্রত্যেকেই। কোনও বাচ্চার স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও তা আটকে গিয়েছে। কেউ আবার অনলাইন ক্লাস করছে নিয়মিত। সব মিলিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছে শিশুরা। এই পরিস্থিতিকেই ইতিবাচক ভাবে ব্যবহার করলে তা ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট কার্যকর হবে, এমনটাই বলছে জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল চাইল্ড সাইকোলজির বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র।
এই সময়ে কী ভাবে বাচ্চাদের মধ্যে জরুরি কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে তা নিয়ে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা হয়েছে ইউনিসেফের তরফে। যেমন, বাচ্চাদের ঘর গুছিয়ে রাখা বেশ কষ্টকর কাজ। খেলনা, বইখাতা ছড়িয়ে রাখে বাচ্চারা। নিজেরা যেমন গুছিয়ে রাখতে পারে না, তেমনই মা-বাবারাও কাজ সামলে ওদের ঘর গুছিয়ে দেওয়ার বিশেষ সময় পান না। অগোছালো ঘরে বড় হতে থাকলে কিন্তু বাচ্চা বড় হয়েও ঘর অগোছালো রাখবে, আবার কোনও কোনও বাচ্চার ক্ষেত্রে জাঙ্ক ফুডে মারাত্মক রকমের আসক্তি রয়েছে। কারও ক্ষেত্রে খাবার খাওয়াতে হয় মোবাইলের স্ক্রিনে চলা কোনও ভিডিয়ো দেখিয়ে।
‘’এতদিন স্কুল, পড়াশোনা, টিউশন, কো-কারিকুলামের চাপ ছিল। ছিল বাবা-মায়ের ব্যস্ততাও। চাকরি কিংবা স্কুল থেকে ফিরে উভয় পক্ষই ক্লান্ত থাকত। শেয়ারিংয়ের সুযোগও কম ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি বদলেছে। পরিবারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে যথেষ্টই,’’ জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসক প্রশান্ত কুমার রায়। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘’দু-তিন বছরের বাচ্চা কিংবা আর একটু বয়সে বড় শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময় মানসিক সংযোগটা অনেকটাই বেড়েছে। বেড়েছে অ্যাটাচমেন্ট। অনেক বাচ্চাই জানিয়েছে বাবা-মাকে এতদিন পেয়ে তাদের খুব ভাল লেগেছে। ‘’
আরও পড়ুন: চশমা পরে বাইরে বেরচ্ছেন? এ সব না মানলেই সংক্রমণের আশঙ্কা
লকডাউন শিথিল হলেও বাবা-মায়েদের অনেকেই এখনও কাজ করছেন বাড়ি থেকে। তাই এক সঙ্গে সময় কাটানোর পরিসরটাও বেড়েছে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, ''বাবা-মাকে সারাদিন যে বাচ্চারা পেত না। সে ক্ষেত্রে অন্য একটা জায়গাও তৈরি হয়েছে। তাই বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণের দিকটি অনেকটাই কম ছিল। কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাবা-মা হয়তো দেখত। সারা দিন ধরে নিয়ন্ত্রণের একটা বিষয়ও তৈরি হয়েছে, এটা করবে না কিংবা এটা করতে হবে, এ জাতীয়।'' সেই জায়গাটা থেকে সমস্যাও বেড়েছে। তবে ভারসাম্য রেখে চলতে পারলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আরও পড়ুন: করোনা আবহ, বর্ষা, বাজারে দেদার বিকোনো এই ফল খেলেই বাজিমাত
বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর ফলে বাচ্চাদের মধ্যে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। যেমন-
সুষম খাবার: সুষম খাবার এবং ব্যালান্সড ডায়েটের অভ্যাস ছোট থেকে তৈরি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বাইরের স্ন্যাক্স-ভাজাভুজি, অতিরিক্ত চকোলেট খাওয়ার অভ্যাসে লাগাম টানার অভ্যাস করতে হবে।
রুটিন বেঁধে দেওয়া: পড়াশোনা, শরীরচর্চা, খেলা— প্রত্যেকটির জন্য সময় বেঁধে দিলে ভাল। বাবা-মায়ের সঙ্গে খেলার অভ্যাস শিশুমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট।
অ্যাক্টিভ থাকার অভ্যাস: শুধুমাত্র বসে থাকা নয়, কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে বাচ্চারা যাতে যুক্ত থাকে সে দিকে খেয়াল রাখুন। বসে থাকা এবং খাওয়াদাওয়া করা, এটাই রুটিন হলে বাড়বে বিপদ। চাইল্ড ওবেসিটির সমস্যাও আসতে পারে।
ঘুমের অভ্যাস: সঠিক ঘুমের ফলে ক্লান্তি দূর হবে। সারা দিনে যেটুকু পড়াশোনা করেছে তা মনে থাকার সম্ভাবনাও বাড়ে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ
ঘটে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে ঠিক সময়ে পরিমাণমতো ঘুম।
প্রাকৃতিক খাবারের অভ্যাস: পুষ্টিবিদ সোমা চক্রবর্তী বলেন, নুডলস, চিপস জাতীয় খাবারে যে পরিমাণ নুন থাকে তা মারাত্মক ক্ষতিকারক। তাই শাকসব্জি, বাড়িতে তৈরি খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে ছোটদের ক্ষেত্রে। প্যাকেটজাত খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্কস একেবারেই দেওয়া ঠিক হবে না ছোটদের।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে ভাইরাল জ্বর-ডেঙ্গি, সেরে গেলেও এ সব না খেলে বিপদ
মানসিক স্বাস্থ্যগঠন: খেলা, ছবি আঁকা, গান-কবিতা, ক্রাফ্টের মতো সৃজনশীল কাজে ছোটদের যুক্ত রাখতে হবে। বাবা-মা এবং বাড়ির বড়দের সঙ্গে ঘরের কাজে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। সব্জি চেনা, রং চেনার ক্ষেত্রে খুদেদের জন্য এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে তাদের উপর চাপ দেবেন না।
পরিচ্ছন্নতা: মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রত্যেকের মধ্যে লকডাউনে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসের যে দিকটি তৈরি হয়েছে তা অত্যন্ত ভাল। বার বার হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজারের ব্যবহার এগুলি মেনে চলতেই হবে সুস্থ থাকতে গেলে।’’ বড়দের সুঅভ্যাস ছোটদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই গড়ে তোলার আদর্শ সময় এখন।
মোবাইল বা টিভি দেখার অভ্যাসে লাগাম টানা: স্ক্রিনিং টাইম কমানোর কথা বার বার বলছেন চিকিৎসকরা। চোখের ক্ষতি তো বটেই, মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে মোবাইল কিংবা টিভির স্ক্রিনে বেশি ক্ষণ সময় কাটালে। বরং বাচ্চাদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা পরে তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy